তৃণমূলের সব্যসাচী দত্তের বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা প্রসঙ্গে অর্জুন সিংয়ের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য নিয়ে এবার আসরে নামলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ভোটের বাজারে তৃণমূলের ঘর ভাঙিয়ে বিজেপির সংগঠন বাড়ানোর 'গুরুদায়িত্ব' যিনি কাঁধে তুলে নিয়েছেন, সেই মুকুল রায়কেই এ প্রসঙ্গে নাম না করে কটাক্ষ করেছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেছেন, ‘‘একটা বিধায়কও বেরোবে না। দাদার পাল্লায় পড়ে অর্জুন সিং গিয়েছেন। ২৪ তারিখের পর উনি কপাল চাপড়াবেন। গ্রামের বুড়োবুড়ির মতো এমন মাথা ঠুকবেন যে কপাল ফাটিয়ে ফেলবেন।’’
প্রসঙ্গত, লুচি-আলুর দমের মাধ্যমে আতিথেয়তা পর থেকেই 'গৃহস্থ' তথা বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের বিজেপিতে যোগদান নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে বঙ্গ রাজনীতির অলিন্দে। দোলের দিন বিধাননগরে মারোয়াড়ি সমাজের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে আবির খেলেন রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী। সেদিন তৃণমূলের এই নেতার মুখে শোনা যায় ‘ভারত মাতা কি জয়’। এরপরই সব্যসাচীর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা বিশেষভাবে জোরালো হয়ে ওঠে। এরপর মঙ্গলবার তৃণমূলে একদা সব্যসাচী দত্তের সতীর্থ অর্জুন সিং-এর মন্তব্য ফের জল্পনার রসদ জুগিয়েছে। বিধাননগরের মেয়রের তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান প্রসঙ্গে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া অর্জুন বলেছেন, ‘‘সব্যসাচী দত্ত কেন, তৃণমূলের ১০০ জন বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। অপেক্ষা করুন।’’
আরও পড়ুন, ‘ঘর কা ছোরো’ সব্যসাচীর ‘ঘর’ ছাড়ার জল্পনা তুঙ্গে
গত কয়েকদিন আগে সল্টলেকে সব্যসাচী দত্তের বাড়িতে যান মুকুল রায়। মুকুল যখন তৃণমূলে অঘোষিত দু'নম্বর, সে সময় থেকেই সব্যসাচী তাঁর 'অতি ঘনিষ্ঠ'। সেই ঘনিষ্ঠতা যে দলবদলের পরও অমলিন, তা ফের টের পাওয়া যায় ওইদিন। বিধাননগরের মেয়রের বাড়ি থেকে বেরনোর সময় মুকুলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, লুচি-আলুর দম খেতে এসেছিলাম। এরপরই ভোটের আগে মুকুল-সব্যসাচীর এহেন 'ঘনিষ্ঠতা' নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। বিরোধী নেতার সঙ্গে এহেন ‘সৌজন্য বিনিময়’ করায় তৃণমূলে রোষের মুখে পড়তে হয় সব্যসাচীকে। তড়িঘড়ি বিধাননগরের কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে বসার নির্দেশ দেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলনেত্রীর নির্দেশ মোতাবেক ফিরহাদ হাকিম ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নেতৃত্বে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। সেই বৈঠক শেষে সব্যসাচীকে পাশে দাঁড় করিয়ে ফিরহাদ বলেন, "ওঁর ভুল হয়ে গিয়েছে। আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন সব্যসাচী"।
আরও পড়ুন, পাগড়ি মাথায় ‘ভারতমাতা কি জয়’! গেরুয়া সরণিতে সব্যসাচী?
ববি হাকিম সেদিন সংবাদমাধ্যমের সামনে যখন বিবৃতি দিচ্ছেন, তখন পাশে চুপ করে দাঁড়িয়েছিলেন সব্যসাচী দত্ত। কিন্তু দিন দুয়েকের মধ্যেই সব্যসাচীকে ফের বলতে শোনা যায়, বাড়িতে কেউ এলে লুচি-আলুর দম পরিবেশন করে অতিথি অ্যাপ্যায়ন করা হবে। বিধাননগরের মেয়রের বিজেপিতে যোগদান নিয়ে যখন বঙ্গ রাজনীতিতে জোর চর্চা চলছে, সে সময়ই দোলের অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দিয়ে এ জল্পনা আরও উসকে দেন খোদ সব্যসাচী। পাশাপাশি তিনি বলেন, "মেয়র থাকি বা না থাকি, আপনাদের মনে থেকে যেতে চাই"।