দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে দিল্লির মসনদে বসেন কেজরিওয়াল। ছাড়েন উচ্চপদের কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যিনি আন্না-হাজারের সঙ্গে লড়াইয়ে সামিল হয়েছিলেন তিনি কিনা দিল্লির কথিত আফগারি দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। একথা যেন এখনও মানতে পারছেন না কেজরিওয়ালের গ্রামের মানুষজন। অনেকেই ইডির ডাকে কেজরির হাজিরা এড়ানোকে ভালভাবে নেন নি।
এই তো সেদিন সিওয়ানি এবং আশেপাশের গ্রামের বেশ কিছু লোক কেজরিওয়ালের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকতে দিল্লিতে গিয়েছিলেন। গ্রাম জুড়ে ছিল খুশির আমেজ। আর মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে চিত্রটাই যেন বদলে গিয়েছে গ্রামের।
তখন প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছে। গিরিধারি লাল বনসাল গ্রামের আর পাঁচজনের সঙ্গে তাস খেলতে ব্যস্ত। হঠাৎ করেই কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন শুনেই তিনি খানিক ইতস্তত হয়ে চুপ হয়ে যান। এরপরই ভাইপো কেজরির গ্রেফতারি নিয়ে মামা বলে উঠেন, “তিনি একজন সৎ মানুষ ছিলেন এবং তিনি তাঁর নীতির কারণে ক্ষমতায় এসেছিলেন। এখন তিনি জেলে, যেমন সিসোদিয়া এবং সঞ্জয়ও জেলে বন্দী (মণীশ সিসোদিয়া এবং সঞ্জয় সিং)। তারা নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে কথা বলেছিল তাই তাদের গ্রেফতার হতে হয়েছে'।
১৬ অগাস্ট ১৯৬৮ এই গ্রামেই জন্ম কেজরিওয়ালের। পরে পড়াশুনার তাগিদে হিসারে চলে যান। গিরিধারি বলেন, “তিনি প্রায়ই আসতেন, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর পদ গ্রহণের পর গ্রামে আসা অনেকটাই কমে যায়। তিন বছর আগে, তিনি স্থানীয় মন্দিরে একটি অনুষ্ঠানের যোগ দিতে তিনি সিওয়ানি আসেন"।
আম আদমি পার্টির কেজরিওয়াল হলেন ভিওয়ানির চতুর্থ মুখ্যমন্ত্রী৷ জগদীশ প্রসাদ কেদিয়া নামে একজন ব্যবসায়ী বলেছেন, "কেজরিওয়ালের প্রতি গ্রামবাসীদের অনেক আশা ছিল। আমরা গর্বিত যে আমাদের গ্রামের কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তার চাকরি ছেড়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রাম থেকে আমরা প্রায় ৫০ জন দিল্লিতে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলাম। তিন বছর আগে, আমরা একটি মন্দিরে একটি অনুষ্ঠানের জন্য তাঁর কাছে অনুদান চাইতে গিয়েছিলাম, তিনি আসেন ঘন্টাখানেকের জন্য ছিলেন"। নির্দোষ থাকলে কেন বারে বারে ইডি ডেকে পাঠালেও যান নি কেজরি সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
গ্রামেই মুদির দোকান চালান সোমনাথ শর্মা বলেছেন, "কেজরিওয়াল রাজধানীর মানুষের জীবনে আমূল বদল আনলেও হরিয়ানায় আপ সেভাবে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি। অরবিন্দ যখন তার জন্মস্থানে একবারের জন্য আসেন না তখন জেলা বা রাজ্যে কীভাবে দল তার শক্তি বাড়াবে"?
বাজারের এক শ্রমিক অনুপ শর্মা বলেছেন যে পার্টি চালু হওয়ার সময় তিনি AAP-যোগ দিয়েছিলেন । "কিন্তু কিছুই হয়নি। তাঁর কথায়, " একটি দল গড়তে শ্রম, অর্থ এবং সময় লাগে। আপ কুরুক্ষেত্র থেকে যে প্রার্থীকে ভোটে নামিয়েছেন, সুশীল গুপ্ত, তিনি আমাদের কাছে অপরিচিত। তিনি দিল্লির বাসিন্দা এবং রাজ্যসভার সাংসদ। কীভাবে তিনি হরিয়ানার মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা থাকবে? পাঞ্জাবে তাদের একটা মুখ ছিল, ভগবন্ত মান, এখানে কেউ নেই।”
কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন, "সমন পাওয়ার পর তাঁর ইডি দফতর হাজিরা দেওয়া উচিৎ ছিল। কুমার বিশ্বাস, কিরণ বেদী, আন্না হাজারে এবং কেজরিওয়ালের সঙ্গে নেতৃত্বে থাকা অন্যরা এখন নীরব, কেন? সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
আপ রাজ্য ইউনিটের সিনিয়র সহ-সভাপতি অনুরাগ ধান্দা বলেছেন, "আমরা বিরোধী জোটের তরফে রামলীলা ময়দানে একটি বিশাল বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছি এবং হরিয়ানায় আমরা শুক্রবার একটি মোমবাতি মিছিল করেছি কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির প্রতিবাদে। আমরা কেজরিওয়াল জির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য রাজ্য জুড়ে একটি সচেতনতা প্রচারের পরিকল্পনা করছি এবং মদ কোম্পানিগুলি থেকে বিজেপি যে তহবিল পেয়েছে তা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরেছি"।