Advertisment

'তৃতীয় ফ্রন্ট' তৈরির চেষ্টা? ‘ইন্ডিয়া জোট’ থেকে এনডিএ বৈঠক, দূরত্ব বজায় মায়াবতী-ওয়াইসির

এটা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক দল বিরোধী ঐক্যে সামিল হয় নি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
modi, bjp, nda meet, opposition meet, opposition bengaluru, kharge, india alliance, tmc, mamata banerjee, indian express

এটা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক দল বিরোধী ঐক্যে সামিল হয় নি।

সামনেই ২৪-এর লোকসভা নির্বাচন। তার আগেই মোদীকে হঠাতে এবার এনডিএর বিরুদ্ধে নামছে গোটা ‘INDIA’! পাটনার পরে এবার বেঙ্গালুরু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএকে সরাতে এবার লড়াইয়ে নামবে ইন্ডিয়া। মঙ্গলবার বিরোধীদের দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে বেঙ্গালুরুতে ইউপিএর নাম বদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে ইউপিএর নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ইন্ডিয়া। যার মধ্যে আই অক্ষরটি ইন্ডিয়ান, এন অক্ষরটি ন্যাশনাল, ডি অক্ষর ডেমোক্রেটিক, আই এর অর্থ ইনক্লুসিভ এবং শেষের এ অক্ষরের অর্থ অ্যালায়েন্স রাখা হয়েছে।

Advertisment

বিরোধী দলগুলোর দাবি, তারা দেশের স্বার্থে লড়াই করছে। দেশের সংবিধান বাঁচাতে, ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সেই জন্যই ইউপিএর নাম বদলানো হল। যেই সিদ্ধান্তকে রীতিমতো তারিফ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, এই বৈঠক অত্যন্ত গঠনমূলক ছিল। এই সিদ্ধান্ত দেশবাসীর জন্য সদর্থক হতে চলেছে।

বৈঠকে আম আদমি পার্টির সর্বভারতীয় আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত ১০ বছর ধরে দেশ শাসন করেছেন। তিনি আচ্ছে দিন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই আচ্ছে দিন তো দূর। প্রধানমন্ত্রী তাঁর এই শাসনকালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তকে কার্যত ধ্বংস করে দিয়েছেন। দেশের কাঠামোকে ধ্বংসের চেষ্টা চালিয়েছেন। দেশবাসীর মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছেন। আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো আরও অভিযোগ করেছেন যে, মোদী জমানায় দেশে বেকারত্ব লাফিয়ে বেড়েছে। কার্যত নরেন্দ্র মোদীর শাসনকাল দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। তার জেরেই বেড়েছে মুদ্রাস্ফীতি। আর, বেকারত্বের লাগামছাড়া বৃদ্ধি হল তারই ফল। কেজরিওয়াল জানান, গোটা দেশ এই অপশাসন থেকে এখন মুক্তি পেতে চায়। সেই মুক্তির জন্যই গোটা দেশের এখন ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি।

বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে স্পষ্ট করে দেন যে, বিরোধীরা দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে প্রস্তুত। তাদের মধ্য়ে বিভিন্ন রাজ্য়ে মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু, সেই পার্থক্য এতটাও বেশি নয় যে জনস্বার্থে বা দেশ বাঁচাতে বিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না। কিন্তু এটা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক দল বিরোধী ঐক্যে সামিল হয় নি। একই সময়ে সেই সকল দল যেমন বেঙ্গালুরুতে বিরোধী ঐক্যে অংশ নেননি তেমনই দিল্লিতে NDAকেও সমর্থন করেনি। তার মধ্যে রয়েছে BSP, BJD, JD(S), Akali Dal, BRS, YSRCP, INLD, AIMIM, AIUDF।

জনতা দল (সেকুলার)

কর্ণাটকের জেডি(এস) এর আগে কংগ্রেস এবং বিজেপির জোটের অংশ ছিল। কিন্তু মঙ্গলবারের দলের অবস্থান ছিল একেবারে নিরপেক্ষ।  আদর্শগতভাবে, জেডি(এস) নিজেদের কংগ্রেস এবং বামপন্থীদের সমর্থন করলেও দল সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক নিয়েও চিন্তিত।  

২০০৬ সালে, JD(S) কর্ণাটকে ক্ষমতায় আসার বিজেপির সঙ্গে জোট গঠন করেছিল। ২০২৩সালের কর্ণাটক নির্বাচনে সাম্প্রতিক পরাজয়ের পরে  দল বিজেপির সাথে একটি পূর্ণাঙ্গ জোটের দিকে তাকিয়ে আছে বলে জানা গিয়েছে। দক্ষিণ কর্ণাটকে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটিতে জেডি(এস)-তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। সম্ভবত এই কারণে এনডিএ-র দিকে বেশি ঝুঁকছে দল বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। সূত্রের খবর ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে যে দলের জেতার পাল্লা ভারী মূলত তাদের সঙ্গে জোটে যেতে পারে জেডি(এস)।

শিরোমণি আকালি দল

বিজেপির সঙ্গে জোটের গুজব সত্ত্বেও, এসএডি মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ বৈঠক থেকে নিজেদের দূরে রেখেছিল। পাশাপাশি দল বিরোধী ঐক্যের বৈঠকেও অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পার্টি সূত্র দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছে যে SAD বিরোধীদের ডাকা বৈঠক থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছিল কারণ তারা পাঞ্জাবে তার চির প্রতিদ্বন্দ্বী - আম আদমি পার্টি (AAP) বা কংগ্রেসের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করতে চায় না।

বহুজন সমাজ পার্টি

মায়াবতীর নেতৃত্বাধীন দল এনডিএ-র অংশ ছিল না, এবং নানান ইস্যুতে বিজেপিকে আক্রমণও করেছে দল। এমন পরিস্থিতিতে দলের তরফে জানানো হয়েছে বিরোধী ঐক্যের বৈঠকে দল কোন আমন্ত্রণ পায়নি।

বিজু জনতা দল

BJD, ২৫ বছর ধরে ওড়িশায় ক্ষমতায় রয়েছে। বিজেডি নেতা এবং দলের মুখপাত্র প্রসন্ন আচার্য বলেছেন, ‘আঞ্চলিক দল হওয়ায় আমাদের নিজস্ব নীতি রয়েছে’। তিনি বলেন, রাজ্যের স্বার্থেই আমাদের নীতি নির্ধারিত হয়। অতীতে, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেডি প্রধান নবীন পট্টনায়কের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে নানান ইস্যুতে সমর্থন করেছেন।  ২০১৯ সালে, বিজেডি বিজেপির জন্য একটি রাজ্যসভার আসন ছেড়ে দেয়। সেখান থেকে অশ্বিনী বৈষ্ণবকে প্রার্থী করে বিজেপি। কিন্তু বিজেপি এখন ওড়িশায় BJD-এর প্রধান প্রতিপক্ষ। ঠিক সেই কারণেই তাড়াহুড়ো করে দল এই মুহূর্তে কোন সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না বলেই সূত্রের খবর।

ভারত রাষ্ট্র সমিতি

বিরোধীদের বৈঠকে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও বা কেসিআরের নেতৃত্বে বিআরএস-এর অনুপস্থিতি চমকে দেওয়ার মত কোন ঘটনা নয়। চলতি বছর তেলেঙ্গানা নির্বাচন সেখানে কংগ্রেস কে চন্দ্রশেখর রাও-য়ের প্রধান প্রতিদ্বন্ধী। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও আগেই স্পষ্ট করেছেন যে কেসিআর বৈঠকে অংশ নেবেন না, তিনি কেসিআরকে বিজেপির "বি দল" বলে অভিযুক্ত করেছেন।

YSRCP

অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস জগন মোহন রেড্ডির নেতৃত্বাধীন ওয়াইএসআরসিপি রাজ্য স্তরে বিজেপি থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলছে, যদিও এটি কেন্দ্রে শাসক দলের প্রতি সব সময় নিজেদের আনুগত্য প্রকাশ করে চলেছে। জগন মোহনের পিতা এবং অন্ধ্র প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস রাজশেখরা রেড্ডির মৃত্যুর পর তাকে মুখ্যমন্ত্রী পদ দিতে অস্বীকার করার পর তিনি ২০১০ সালে কংগ্রেস ছেড়েছিলেন।

ভারতীয় জাতীয় লোকদল

১৯৯৮ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত দল এনডিএ-র সদস্য ছিল। ২০০৯ সালে ফের দল এনডিএ-তে যোগ দেয়, কিন্তু হরিয়ানার থেকে লোকসভায় কোনো আসন জিততে পারেনি ভারতীয় জাতীয় লোকদল। মঙ্গলবার, জননায়ক জনতা পার্টি, আইএনএলডির একটি শাখা এবং রাজ্য সরকারে বিজেপির মিত্র, এনডিএ বৈঠকে উপস্থিত ছিল। অন্যদিকে, আইএনএলডি দাবি করেছে যে তারা হরিয়ানায় বিজেপি এবং কংগ্রেসের বিরুদ্ধে "তৃতীয় ফ্রন্ট" তৈরি করার চেষ্টা করছে।

এআইএমআইএম

আসাদুদ্দিন ওয়াইসির নেতৃত্বাধীন এআইএমআইএম উভয় বৈঠকেই অনুপস্থিত ছিল। ওয়াইসির দলের একমাত্র সাংসদ এবং তেলেঙ্গানা বিধানসভায় তার সাতজন বিধায়ক - সকলেই হায়দ্রাবাদ থেকে নির্বাচিত৷ তেলেঙ্গানার বাইরে, মহারাষ্ট্র, বিহার এবং উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে দল, যেখানে প্রচুর মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে। যদিও এআইএমআইএম আগে কংগ্রেসের মিত্র ছিল, পরে বিআরএসের সঙ্গে হাত মেলায় দল। এর আগে বিজেপি এবং কংগ্রেস উভয়কেই আক্রমণ করেছে আসাদুদ্দিন ওয়াইসির নেতৃত্বাধীন এআইএমআইএম। যদিও কংগ্রেস এখন এআইএমআইএমকে বিজেপির ‘বি দল’ বলে অভিহিত করেছে।  "ভোট মেরুকরণে" কারণেই বিজেপির কাছে তার দরজতা বন্ধ।

অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট

অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে বিরোধী ঐক্যের মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কংগ্রেসের সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। দুটি দল ২০২১ সালের অসম বিধানসভা নির্বাচনে একসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, কিন্তু তারপর থেকে সম্পর্ক টানাপোড়েন আজও অটুট।

rahul gandhi NDA
Advertisment