বিক্ষিপ্ত অশান্তির মধ্য দিয়েই শেষ হল রাজ্যের দুই কেন্দ্রের উপনির্বাচন। বালিগঞ্জ ও আসানসোলে মঙ্গলবার দিনভর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর মিলেছে। যদিও পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই তা নিয়ন্ত্রণে এনেছে পুলিশ। শেষবেলার ভোটে বালিগঞ্জ সাউথ ক্যালকাটা গার্লস কলেজের বুথে ভুয়ো ভোটারের অভিযোগে উত্তেজনা ছড়ায়। এক মহিলাকে বুথ থেকে বের করে দিয়েছেন তৃণমূলের কর্মীরা। তিনিই ভুয়ো ভোটার বলে অভিযোগ তৃণমূলের। যদিও সেই মহিলা নিজেকে নির্দল প্রার্থীর এজেন্ট বলে দাবি করেছেন।
অন্যদিকে, আসানসোল উপনির্বাচনেও এদিন দিনভর টানটান উত্তেজনা ছিল। গতবার এই কেন্দ্রটি বিজেপির দখলে ছিল। বাবুল তৃণমূলে যাওয়ার আগেই আসানসোল কেন্দ্রের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন। বাবুলের জায়গায় এবার আসানসোলে বিজেপির বাজি ছিল অগ্নিমিত্রা পল। উনিশের নির্বাচনের সাফল্য ধরে রাখবেন বলেই আশাবাদী বিজেপির এই তারকা প্রার্থী।
একেবারে ঠিকঠাক ভোট হচ্ছে।শুধু মানুষের কাছে আবেদন যে উন্নয়নের স্বার্থে ভোট দিন। এমনটাই বলেছেন আসালসোলের তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা।
আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভার ঝাঁঝরায় ঘণ্টাদেড়েক রইলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি সৌভিক আনোয়ারের নেতৃত্বে বিজেপি নেতার গাড়ি আটকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী। পুলিশের যক্তি, জিতেন্দ্র তিওয়ারি ওই কেন্দ্রের ভোটার নন, কনভয় নিয়ে তাই তাঁর ওই কেন্দ্রে প্রবেশের অধিকার নেই। পাল্টা পুলিশকে শাসক দলের সুবিধা করে দেওয়ার অভিযোগে সরব জিতেন্দ্র।
ভোটের দিন বেলা গড়াতেই খোশমেজাজে বাবুল সুপ্রিয়। বুথ পরিদর্শনের পর দেশপ্রিয় পার্কে নির্বাচনী কার্যালয়ে কর্মীদের সঙ্গে বসে সিঙ্গারা, খাস্তা কচুরি খান তিনি।


উপনির্বাচনের প্রথম চার ঘন্টায়, অর্থাৎ সকাল ৪ ঘন্টায় বালিগঞ্জ বিধানসভা উপ নির্বাচনে ভোটদানের হার ১৬ শতাংশ। আসানসোল লোকসভা উপ নির্বাচনে এখনও ভোট পড়েছে ২৭ শতাংশ।
সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে বুথে ঢোকার অভিযোগ আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের বিরুদ্ধে। এবার তাঁকে সতর্ক করল নির্বাচন কমিশন। পুলিশের মাধ্যমে বিজেপি প্রার্থীকে বার্তা পাঠিয়েছে কমিশন।
বালিগঞ্জের বিশপ কলেজের বুথে ভুয়ো ভোটার ধরার দাবি করলেন বাম প্রার্থী সায়রা হালিম। সেখানে বুথ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন সায়রা। এক মহিলার বিরুদ্ধে ভুয়ো ভোটার হওয়ার অভিযোগ তোলেন বাম প্রার্থী।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ৯টা পর্যন্ত বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১৩ শতাংশ।
বালিগঞ্জের সাউথ পয়েন্ট স্কুলে বাবুল সুপ্রিয়কে ঢুকতে বাধা কেন্দ্রীয় বাহিনীর। রিপোর্ট চাইল নির্বাচন কমিশন।
পুলিশ তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে। বারাবনি থানার ওসি-কে সরাতে কমিশনের কাছে আর্জি আসানসোলের তৃণমূল প্রার্থীর।
বারাবনিতে উত্তেজনা। ১৭৫ নম্বর বুথ প্রিসাইডিং অফিসার ছিলা না বলে অভিযোগ উঠেতেই লেখা যান বিজেপি প্রার্থী। তাকে দেখেই ধুন্ধুমার পরিস্থিতি হয়। এলাকায় বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। লাঠি দিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে গাড়ি। চলে পাথরবৃষ্টিও। উত্তেজিত জনতার সঙ্গে বিজেপি প্রার্থীর দেহরক্ষীদের ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশের সামনেই তৃণমূলের লোকেরা এই কাজ করেছে বলে অভিযোগ বিজেপি প্রার্থীর। তৃণমূলের অভিযোগ, অগ্নিমিত্রা পালের সঙ্গে যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা সমাজ বিরোধী।
আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের ২৪১ নং নম্বর বুথে বিজেপির পোলিং এজেন্টকে বসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এই অভিযোগ পেয়েই সেখানে যান গেরুয়া প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল। তারপরই পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান তিনি। বুথের বাইরে জড়ো হওয়া লোকজনকে দেখেই ধাওয়া করেন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা।
বারাবনির ২৮৩/২৩৪ নম্বর বুথে এক জনের হয়ে ইঅন্য জোনের ভোট। অভিযোগ দায়ের হয় কমিশনে। অ্যাকশন টেকেন রিপোর্টের ভিত্তিতে পদক্ষেপ করেছে কমিশন। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই বুথের প্রিসাইডিং অফিসারকে।
আসানসোলের একাধিক বুথেও রাজ্য পুলিশ রয়েছে বলে অভিযোগ করলেন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল।
মর্ডান হাই স্কুলের বুথে কলকাতা পুলিশের কর্মীদের দেখেই সোচ্চার হলেন বিজেপি প্রার্থী কেয়া ঘোষ। কেন বুথের মধ্যে কলকাতা পুলিশের কর্মীরা থাকবেন? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কেয়া। অভইযোগ করেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাছে।
চতুর্মুখী লড়াই বালিগঞ্জে। এই বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী পদ্ম-ফুল ফেরৎ বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর বিরুদ্ধে লড়ছেন বিজেপির কেয়া ঘোষ ও সিপিআইএমের সায়রা হালিম।
আসানসোলে লড়াই ত্রিমুখী। বিজেপির প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের বিরুদ্ধে লড়ছেন 'বিহারীবাবু' তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহা। ওই কেন্দ্রে বামেদের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সিপিএমের প্রার্থী পার্থ মুখোপাধ্যায়।
বালিগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্গত অশোকা হলে ১৭৪ নং বুথে বিজেপি এজেন্টকে বসতে দেওয়া হচ্ছে না বলে শুরুতেই অভিযোগ করলেন প্রার্থী কেয়া ঘোষ। অভিযোগ পেয়েই ওই বুথে যান পদ্ম প্রার্থী। তাঁর নিশানায় ছিল প্রিসাইডিং অফিসার। বুথে দাঁড়িয়েই সেক্টর অফিসারকে ফোন করেন কেয়া। এরপর সমস্যার সমাধান হয়।
২,১০৯টি বুথে ভোট গ্রহণ হচ্ছে আসানসোলে। নিরাপত্তায় রয়েছে প্রায় ১৯ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী। সব বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। রয়েছে প্রায় ৫ হাজার রাজ্য পুলিশও। ৫ হাজার বুথে হবে ওয়েব কাস্টিং ও পর্যবেক্ষক রয়েছেন ৫ জন। মাইক্রো অবজারভারের সংখ্যা ৪৪২ জন।
এবারে বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। মোট ৩০০টি বুথ রয়েছে। তার মধ্যে ২৩টি স্পর্শকাতর বুথ। প্রতিটি বুথে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনী। মোট ১৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। প্রতিটি বুথে ও বুথের বাইরে ২০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বুথে রয়েছে ২ জন করে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
শুরু হয়ে গেল আসানসোল ও বালিগঞ্জ কেন্দ্রের উপনির্বাচন। সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত ভোট চলবে।