কংগ্রেস ছাড়লেন প্রবীণ রাজনীতিক তথা দেশের প্রাক্তন মন্ত্রী অশ্বিনী কুমার।
গত দু'বছরে কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দিয়েছেন একাধিক যুব নেতৃত্বষ এঁদের মধ্যে অন্যতম জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, জিতিন প্রসাদ, আর পি এন সিং, সুস্মিতা দেব, প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী এবং ললিতেশপতি ত্রিপাঠি। এবার প্রবীণ অশ্বিনী কুমারের সঙ্গেও হাত শিবিরের সঙ্গে ছিন্ন হল। স্পষ্ট হচ্ছে যে, কংগ্রেসের নেতৃত্বের প্রতি ক্রমবর্ধমান অসন্তোস বাড়ছে।
এর আগে দেশের প্রচীন রাজনৈতিক দলটির অন্যতম অভিজ্ঞ দুই নেতা, গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরো এবং পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং-ও কংগ্রেস ছেড়েছিলেন।
সোমবারই সনিয়া গান্ধীর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন অশ্বিনী কুমার। সেখানে উল্লেখ, 'বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমি দলের বাইরে থেকে বৃহত্তর জাতীয় উদ্দেশ্যগুলিকে সবচেয়ে ভালোভাবে পালন করতে পারি।'
কংগ্রেসে থেকে অশ্বিনী কুমারের ইস্তফা অপ্রত্যাশিত। তাঁর সঙ্গে হাত শিবিরের সম্পর্ক চার দশকেরও বেশি। সনিয়ার অনুগামী হিসাবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী বলে পরিচিত জি-২৩ নেতারা ২০২০ সালের অগাস্টে যখন দলে সনিয়া ও রাহুলের নেতৃত্ব ও কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, সেই সময় দলনেত্রীর সমর্থনেই মুখ খুলেছিলেন প্রবীণ অশ্বিনী কুমার। এরপরও পাঞ্জাবের ভোটের আগে কুমারের দলত্যাগে স্বাভাবিকভাবেই বিব্রত কংগ্রেস।
অন্যদিকে অশ্বিনী কুমার মঙ্গলবার জানিয়েছেন যে, তাঁর কংগ্রেস ছাড়ার সিদ্ধান্ত 'যন্ত্রণাদায়ক'। তবে তাঁর মতে, কংগ্রেস জাতীয়স্তরের রাজনীতিতে শীর্ষে উন্নীত হতে চায় কিন্তু তাদের কাছে বিকল্প নেতৃত্ব, ভাবনার সন্ধান নেই। অশ্বিনী কুমার বলেন, 'এখন শুধু গান্ধীদের অনুমোদনই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন দলের অভ্যন্তরে যৌথ নেতৃত্বের পরিকাঠামো গড়ে তোলা। সেখানে যোগ্যতার ভিত্তিতে অভিজ্ঞদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। জায়গা পাবেন নবীনরাও।'
পদত্যাগের পরপরই দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে অশ্বিনী কুমার বলেছেন যে, 'কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ কাঠামো নেতাদের হেয় করছে, ফলে সম্মিলিতভাবে দলটি দুর্বল হচ্ছে।' তাঁর মতে, 'সংশোধনের আশা (পার্টিতে) মিথ্যায় প্রতিপন্ন হয়েছে।'
কুমারের সংযোজন, 'ভোটের শতাংশের নিরিখে কংগ্রেসের ক্রমাগত পতন লক্ষ্যনীয়, জনসমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে যে, দেশবাসী যেভাবে চিন্তা করে তার সঙ্গে দলের ভাবনার সামঞ্জস্য নেই। দেশবাসীর আশা-আকাঙ্খা উপলব্ধি করে তা পূরণে সহায়ক ভূমিগ্রহণ যেকোনও রাজনৈতিক দলের কাজ। এমনটাই করছে কংগ্রেস, কেউ কী তা সততার সঙ্গে স্বীকার করতে পারবে?'
রাহুল গান্ধীর নাম করে অশ্বিনী কুমার বলেছেন, 'কংগ্রেস পার্টি তার ভবিষ্যত নেতৃত্বের ক্ষেত্রে যে বিকল্পটি জনগণের কাছে তুলে ধরছে তার পক্ষে নয় দেশবাসী।'
এবার কী তাহলে অন্য দলে নাম লেখানোর পালা? কংগ্রেসত্যাগী প্রবীণ নেতার কথায় তার কোনও স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলেনি। তবে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে তাঁর উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ হল যে, 'সব খারাপের একজনকে দায়ী করা বা দোষারোপ উচিত নয়। সব দলেই ভালো, খারাপ লোক রয়েছেন।'
পাঞ্জাবে এবার আম আদমি পার্টির ভালো ফলের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে মনে করেন অশ্বিনী কুমার। ত্রিশঙ্কু বিধানসভার আশা কম বলেই মত পাঞ্জাবের প্রবীণ এই রাজনীবিদের।