ছেলের পর গুলিতে ঝাঁঝরা গ্যাংস্টার আতিক আহমেদ ও তার ভাই। শনিবার গভীর রাতে উত্তরপ্রদেশে কারাগারে থাকা গ্যাংস্টার থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা আতিক আহমেদ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের হাতে তার ছেলে ১৯ বছর বয়সি আসাদ আহমেদ নিহত হওয়ার মাত্র একদিন পরে এই ঘটনা ঘটল। টেলিভিশনের ছবিতে দেখা গিয়েছে, আতিক আহমেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেই সময় কমপক্ষে দু’জন ব্যক্তি পিস্তল উঁচিয়ে তাদের ওপর পরপর গুলি চালায়। এর উত্তরপ্রদেশের ৭৫টি জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
শনিবার রাতে গ্যাংস্টার-রাজনীতিবিদ আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরাফকে খুনের পর উত্তরপ্রদেশ জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। প্রয়াগরাজ জেলায়, যেখানে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে এবং আশেপাশের এলাকায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আতিক আহমেদ ও আশরাফকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন তারা। ঘটনার জেরে প্রয়াগরাজে ১৭ জন পুলিশ আধিকারিককে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বাসভবনের বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
আতিক এবং তার পরিবারের সদস্যরা বারবার আদালতের কাছে সুরক্ষা চেয়েছিলেন। তারা হুমকির সম্মুখীন বলে আদালতের কাছে অভিযোগও করেছিলেন। আতিকদের অভিযোগ ছিল যে তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আতিক উমেশ পাল হত্যা মামলায় পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন নিজের সুরক্ষার জন্য সুপ্রিম কোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছেন। গত মাসে উমেশ পাল হত্যা মামলায় আতিক-সহ দু’জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। আতিকের ভাই আশরফকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছে।
আতিক আহমেদ ও তার ভাই আশরাফ আহমেদকে চিকিৎসার জন্য আনা হয় এবং ‘মিডিয়া বাইট’ দেওয়ার সময় তিনজন সাংবাদিক পরিচয়ে এসে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই তিনজনকে আটক করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রয়াগরাজ পুলিশ কমিশনার রমিত শর্মাকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে “ঘটনার জেরে একজন সাংবাদিকও পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন এবং একজন কনস্টেবল গুলিবিদ্ধ হয়েছেন,”।
প্রয়াগরাজ পুলিশ জানিয়েছে তিন আততায়ী মিডিয়াকর্মী হিসাবে পরিচয় দিয়ে আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরাফের উপর গুলি চালায়। ঘটনার পরই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডেকে বিষয়টি্র তদন্তের নির্দেশ দেন। ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
আতিক আহমেদ ও আশরাফ হত্যা নিয়ে মায়াবতীর প্রথম প্রতিক্রিয়া, কী বললেন জানেন?
আতিক আহমেদ ও আশরাফ হত্যা নিয়ে প্রথম প্রতিক্রিয়া দিলেন বিএসপি প্রধান মায়াবতী। রাজ্যের ভারতীয় জনতা পার্টি সরকারকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে আতিক আহমেদ ও আশরাফ আহমেদ হত্যার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বহুজন সমাজ পার্টির প্রধান মায়াবতী। এ নিয়ে সরকারকেই নিশানা করেছেন তিনি।
এক টুইট বার্তায় মায়াবতী বলেছেন- “পুলিশের সামনেই আতিক আহমেদ ও তার ভাই আশরাফ কে হত্যার ঘটনা থেকেই এটা প্রমাণ হয়েছে উত্তরপ্রদেশে আইনের শাসন নেই। রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে"। এর পাশাপাশি তিনি সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে এই ঘটনার তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন।
এর সঙ্গেই তিনি বলেছেন, 'উত্তরপ্রদেশে এখন "আইনের শাসন" এর পরিবর্তে ‘এনকাউন্টার রাজ্যে’ পরিণত হয়েছে। এর আগে, সমাজবাদী পার্টির নেতা এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবও যোগী সরকারকে একহাত নিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন- “রাজ্যে অপরাধ চরমে পৌঁছেছে এবং অপরাধীদের মনোবল তুঙ্গে। পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে যখন প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে কাউকে হত্যা করা হয়, তখন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দেয়। জনমনে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করছে বলেই আমার ধারণা”।
আতিক ও তার ভাইকে খুনের ঘটনায় এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন “গতকালের এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সম্পূর্ণরূপে মুখ্যমন্ত্রী দায়ী। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। এই গোটা ঘটনার পিছনে যোগী সরকারের ভূমিকা রয়েছে। ওয়াইসি বলেছেন, “উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকার বন্দুকের জোরে সরকার চালাচ্ছে। বিজেপি সরকার আইনে বিশ্বাস করে না। গতকাল যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা ছিল সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র”।