হুগলীর উত্তরপাড়ার পুজো মণ্ডপে ভাঙচুর নিয়ে শহর এখনও সরগরম। নিন্দার ঝড় কমেনি এক ফোঁটাও। পুজো চলাকালীন মণ্ডপে এই তাণ্ডব ভালভাবে নেন নি উত্তরপাড়ার মানুষ। শুক্রবার ভোরে উত্তরপাড়ার ইয়ংস্টার ক্লাবের পুজো মণ্ডপে একদল দুষ্কৃতী মদ্যপ অবস্থায় হামলা চালায়। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত অভিযুক্ত (এবং স্থানীয়দের হাতে প্রহৃত) তৃণমল কাউন্সিলর সুমিত চক্রবর্তী অধরা, যদিও তার দুই সাকরেদকে আটক করেছে পুলিশ। কিন্তু উত্তরপাড়া-কোতরাং পুরসভার চেয়ারম্যান দিলীপ যাদবের বক্তব্য, "আইন আইনের পথে চলা উচিত। মার খেলেও অন্যায় মাফ হয়ে যায় না।" তাঁর আক্ষেপ, "৩০ বছরের অর্জিত সম্মান একিদনে ধ্বংস হয়ে গেল।"
কেন এই হামলার ঘটনা? ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে কেন হামলা করতে গেলেন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের শাসকদলের কাউন্সিলর? তৃণমূল সূত্রের খবর, এই ঘটনার পিছনে রয়েছে দলের অন্তর্কলহ। সেই কলহ কেন দুর্গাপুজোয় মণ্ডপে আছড়ে পড়ল? স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই তৃণমূল কাউন্সিলর এর আগেও নানা ঝামেলায় জড়িয়েছেন। দুবছর আগেও এই এলাকাতেই তিনি গণ্ডগোলে অভিযুক্ত। সেই কাউন্সিলর ফের মদ্যপ অবস্থায় দলবল নিয়ে হামলা করেছেন। এই অভিযোগ ইয়ং স্টার ক্লাবের পুজো উদ্যোক্তাদের।
তৃণমূলের একাংশের মতে, এই কাউন্সিলরকে মদত যোগাচ্ছেন দলেরই এক বিধায়ক। আর বদনাম হচ্ছে পুরপ্রধানের। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই এই হামলা বলেই ওই সূত্রের দাবি। তাদের মতে, নেতাদের একাংশের পিঠে হাত থাকায় ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছে না পুলিশ।
যে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে হামলা হয়েছে, সেই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের সুস্মিতা সরকার। তিনি নিজের বাড়ির দুর্গাপুজো নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ঘটনার পর তিনিও গিয়েছিলেন ওই পুজো মণ্ডপে। তিনি বলেন, "আমার কাছেও স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। এই ধরনের ঘটনা কোনভাবেই সমর্থন করা যায় না। নিন্দার কোনও ভাষা নেই।"
অভিযুক্ত সুমিত চক্রবর্তীকে এদিনও ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছিল, তিনি ফোন ধরেননি। তবে ওই কাউন্সিলরকে দলের একাংশ সমর্থন করায় শহরজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। দলের অপর অংশের বক্তব্য, এই কাউন্সিলর আদতে প্রোমোটার। একাধিকবার নানা ঝামেলায় জড়িয়েছেন। তবু দল কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পুর চেয়ারম্যানের বক্তব্য, "আমি অন্যায় করব না, এটা বলতে পারি। অন্যায় রুখতে না পারলেও তাকে সমর্থন করতে পারছি না।" ঘটনার পর পরই খোদ কাউন্সিলর গণপিটুনি খাওয়ায় দলের একাংশ চিন্তিত।
এদিকে উত্তরপাড়ার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের এক কাউন্সিলর আক্রান্ত হয়েছেন ব্যারাকপুরের চিড়িয়া মোড়ে। অভিযোগ, প্রতিমা বিসর্জন দিতে গিয়ে ব্যারাকপুরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শুভ্রজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর অনুগামীদের রড, বাঁশ দিয়ে পেটায় একদল দুষ্কৃতী। এই ঘটনার পর টিটাগড় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এক্ষেত্রেও ঘটনার পেছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে তৃণমূলেরই একাংশ মনে করছে।