সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে রাম মন্দির উদ্বোধন বিজেপিকে 'এক্সট্রা মাইলেজ' দেবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ২৪-এর নির্বাচনে রেকর্ড আসনের সঙ্গে ক্ষমতার হ্যাটট্রিক গড়ে ইতিহাস তৈরি করতে মরিয়া মোদী। রামলালার প্রাণ প্রতিষ্টার পর, প্রধানমন্ত্রী মোদী স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, "রাম শুধু আমাদের নয়, রাম সকলের। শতাব্দীর অপেক্ষার পর এই মুহূর্তটি এসেছে। এখনেই আমরা থামব না"।
রাম মন্দির উদ্বোধনের পর গোটা দেশ 'রামময়' হয়ে উঠেছে। অযোধ্যায় নির্মিত নতুন এবং বিশাল রাম মন্দিরে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা ঘিরে দেশজুড়ে উন্মাদনা তুঙ্গে। দেশ জুড়ে পালন করা হয়েছে অকাল দীপাবলির। সারা বিশ্বের চোখ ছিল অযোধ্যায় ভগবান রামের মূর্তির অভিষেক অনুষ্ঠানের দিকে। রাম মন্দির উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাড়তি সুবিধা দেবে। তাতে কোন সন্দেহ নেই। ধর্মীয় ভাবাবেগ এবং হিন্দুত্ব এই দুই ইস্যুকে সামনে এনে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ৪০০ আসন পার করার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে বিজেপি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোমবার অযোধ্যায় ভগবান রামের মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর তার ভাষণে বলেছিলেন, 'আমাদের রাম এসেছেন। রামলালা আর তাঁবুতে নয়, মন্দিরে থাকবেন। এর সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, রাম শুধু আমাদের নয়, রাম সবার। রাম শুধু বর্তমান নয়, রাম চিরন্তন। শতাব্দীর পর শতাব্দী অপেক্ষার পর এই মুহূর্তটি এসেছে'।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে অযোধ্যায় ভগবান রামের প্রাণ প্রতিষ্ঠার আয়োজন করে প্রধানমন্ত্রী মোদী যে রাজনৈতিক এজেন্ডা নির্ধারণ করেছেন তার সমাধান খুঁজে বের করা বিরোধীদের পক্ষে খুব সহজ না। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠানে অংশ না নিয়ে ব্যাকফুটে রয়েছে এবং এখন প্রধানমন্ত্রী মোদী যেভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে রামলালার মন্দির কেবল অযোধ্যায় নির্মিত এক মন্দির নয়, এটা দেশের সাংস্কৃতিক বিকাশ। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন যে চেতনা ঈশ্বর থেকে দেশে এবং রাম থেকে জাতিতে প্রসারিত হওয়া উচিত।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৪০০ টিরও বেশি আসন জয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। রাম মন্দির ইস্যুটি একটি ধর্মীয়, কিন্তু বিজেপি বিরোধীদের কোণঠাসা করতে রাম মন্দির ইস্যুকে দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাচ্ছে। বিজেপি বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে কংগ্রেস এবং তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির বিরুদ্ধে রাম মন্দির উদ্বোধনে অংশ না নেওয়াকে কেন্দ্র করে হিন্দুত্ব বিরোধী তকমা দিয়েছে।
বিজেপি রাম মন্দিরকে তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলতে শুরু করেছে। প্রাণ প্রতিষ্টার মাধ্যমে, বিজেপির আগামী সাধারণ নির্বাচনে বিরোধীদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করার কৌশল রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা বলেছেন যে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী দেশের পরিবেশকে সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করেছেন, যার কারণে উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে বিরোধীদের জন্য খুব বেশি রাজনৈতিক জায়গা অবশিষ্ট নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রাণপ্রতিষ্ঠা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণে রামের আগমনের কথা বলে বড়সড় রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি স্পষ্ট বলেছেন যে ভগবান রাম এসেছেন এবং এখন তাকে তাঁবুতে নয়, রাম মন্দিরে থাকতে হবে। এইভাবে বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে বিজেপি এবং আরএসএসের কারণেই রাম মন্দিরের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন রাম মন্দির এবং জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্রে রেখে লড়াই জারি রাখছে বিজেপি। মোদির গ্যারান্টির কথা বলা হচ্ছে, বিজেপি সরকারের নয়। প্রধানমন্ত্রীকে রামকে জাতির সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। রাম মন্দির উদ্বোধনের আগে, প্রধানমন্ত্রী মোদী দক্ষিণের সেই সমস্ত মন্দিরগুলিও পরিদর্শন করেছিলেন, যেখানে রামের নাম কোনও না কোনও আকারে যুক্ত রয়েছে।
লোকসভা নির্বাচনে রামমন্দিরের মোকাবেলায় বিরোধী জোট থেকে এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দেখা যায়নি। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের খুব বেশি সময় বাকি নেই। এমন পরিস্থিতিতে রাম মন্দির বিজেপির হিন্দুত্ববাদী আখ্যানকে আরও শক্তিশালী করবে। বিজেপি অবশ্যই এমন একটি ইস্যুকে পুঁজি করার চেষ্টা করবে যার জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করেছে। বিরোধীরা মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের মতো ইস্যু তুললেও রাম মন্দির ও জাতীয়তাবাদের সামনে হয়তো তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না।
রামমন্দির প্রাণ প্রতিষ্টা অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়ে বিরোধীরা বিজেপিকে হিন্দু-বিরোধী এবং রাম-বিরোধী বলে ব্র্যান্ড করার সুযোগও দিয়েছে। বিজেপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য বিরোধীরা দেশের মানুষের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা পেশ করতে পারেনি। শুধু রাম মন্দির দিয়েই চারশো ছাড়িয়ে যাওয়ার অঙ্ক যে অর্জন করা যায় না তা বিজেপি ভালো করেই জানে, তাই বলার চেষ্টা করেছে রাম আমাদের নয়, সবার।
শুধুমাত্র রামমন্দিরের ভিত্তিতে বিজেপি ২০২৪ সালের নির্বাচনে জিততে পারবে না। সব রামভক্তই বিজেপির সমর্থক নয়, সব হিন্দুরা যদি রামের নামে বিজেপিকে ভোট দিত তাহলে আশি শতাংশ না হলেও অন্তত ষাট শতাংশ ভোট পেত। ২০১৯ সালে বিজেপি প্রায় ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল এবং ৩০৩ টি লোকসভা আসন পেয়েছে। তবে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৫০ শতাংশ প্লাস ভোট পাওয়ার কৌশল রয়েছে এবং ৪০০ এর বেশি আসন জয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর জন্য রামমন্দিরের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদের ইস্যু নিয়ে ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য পিচ তৈরি করেছে বিজেপি।