চলছে শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি। আগামী মাসেই রামমন্দিরের উদ্বোধন। অযোধ্যা জুড়ে তাই সাজো সাজো রব। লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে দেশবাসীকে রামমন্দির নিয়ে বিরাট চমক দিতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। জানুয়ারিতেই রামমন্দির উদ্বোধন। আমন্ত্রিতদের তালিকাতেও রয়েছে বিরাট চমক।
লালকৃষ্ণ আদবানি ও মুরলী মনোহর জোশীর বাড়ি গিয়ে তাঁদের অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করে এলেন সংঘ ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা। এর আগে সোমবার রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই বলেছিলেন, তিনি চান না ওই অনুষ্ঠানে আদবানি, জোশী আসুক। রাইয়ের এই মন্তব্য ঘিরে জলঘোলা শুরু হয়। তারপরই তড়িঘড়ি আদবানি ও জোশীর বাড়ি ছোটেন সংঘ ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা রামলাল, কৃষ্ণগোপাল, অলোক কুমাররা। তাঁরা দুই প্রবীণ নেতাকেই ২২ জানুয়ারি রামমন্দির উদ্বোধনের দিন অযোধ্যায় উপস্থিত থাকার অনুরোধ করেছেন। এই ব্যাপারে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা অলোক কুমার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘লালকৃষ্ণ আদবানির বয়স এখন ৯৬। আর মুরলী মনোহর জোশীর বয়স ৮৯। দু’জনকেই মন্দিরের অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দু’জনেই বলেছেন, তাঁরা আসার চেষ্টা করবেন।’
অযোধ্যা শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের রাজনীতি না হয় সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাম মন্দির ট্রাস্টের তরফে ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে বিরোধী নেতাদের আমন্ত্রণও পাঠিয়েছে। প্রধান বিরোধী কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি সনিয়া গান্ধীকেও এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন : < উৎসবের মরসুমে নয়া ত্রাস, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে করোনার নয়া ভ্যারিয়েন্ট, দেশজুড়ে প্রস্তুতি তুঙ্গে >
সূত্রের খবর, রাম মন্দির নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্র মিশ্র মঙ্গলবার মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁকে অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রণ জানান। তিনি সনিয়া গান্ধীকে ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, রাম মন্দির নির্মাণ নিয়ে বিজেপিকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে বিরোধী দলগুলির। প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানকে বিজেপির অনুষ্ঠান হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বিরোধী নেতাদের আমন্ত্রণের মাধ্যমে সৌহ্যার্দ্যপূর্ন রাজনীতির বার্তাই তুলে ধরা চেষ্টা করেছে বিজেপি।
জানা গিয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকেও অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পাঠানো হচ্ছে। তবে মনমোহন সিং অসুস্থ। সম্প্রতি, রাজ্যসভার কার্যক্রম চলাকালীন তাকে হুইল চেয়ারে দেখা গেছে। মঙ্গলবার মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়, নৃপেন্দ্র মিশ্র তাঁকে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
রামমন্দির কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কংগ্রেস সভাপতি এখনও সিদ্ধান্ত নেননি বলেই দলীয় সূত্রে খবর। সূত্রের খবর, অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার বিষয়ে আর কিছুদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে রামমন্দির ইস্যুটি প্রধান হয়ে উঠবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। এমন পরিস্থিতিতে অ-বিজেপি দলগুলির মধ্যে নির্বাচনে এর প্রভাব নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়াকেও রাম মন্দিরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়াও, লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীকেও রাম মন্দির প্রাণ প্রতিষ্টা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর আগে, রাম মন্দির আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী শীর্ষ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানিকেও মন্দির ট্রাস্টের পক্ষ থেকে একটি আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে। ২২ শে জানুয়ারী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে, রাম লালার অভিষেক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এই কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশে কর্মসূচি পালন করছে বিজেপি। এ ব্যাপারে হিন্দু সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে।
প্রাণ প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রী রাম জন্মভূমি ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দেশের অনেক বড় নেতাদের আমন্ত্রণ পাঠানো হচ্ছে। চলচ্চিত্র শিল্পী, বিজ্ঞানী, ক্রীড়াবিদ এবং অনেক বড় শিল্পপতিকে ইতিমধ্যেই আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে।
সূত্রের খবর, প্রতিটি রাজ্যকে পবিত্র অনুষ্ঠানের পরে মন্দির দেখার জন্য নির্দিষ্ট দিন বরাদ্দ করা হবে এবং কিছু বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হতে পারে।
সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, তার সিপিআই প্রতিপক্ষ ডি রাজা, বিএসপি প্রধান মায়াবতী এবং এএপি আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
অযোধ্যায় রাম লালার অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
অতিথিদের তালিকায় রয়েছেন তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা, যোগগুরু বাবা রামদেব, আদানি গ্রুপের শিল্পপতি গৌতম আদানি, রিলায়েন্সের মুকেশ আম্বানি, অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, রজনীকান্ত, মাধুরী দীক্ষিত,চলচ্চিত্র পরিচালক মধুর ভান্ডারকার, গীতিকার প্রসূন যোশী প্রমুখ।
ট্রাস্ট-এর তরফে প্রচুর সংখ্যক শ্রমিককেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে যারা মন্দির নির্মাণের কাজে যুক্ত ছিলেন এবং টাটা গ্রুপের নটরাজন চন্দ্রশেখরন এবং এলএন্ডটি গ্রুপের এসএন সুব্রহ্মণ্যনকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভিএইচপি মুখপাত্র বিনোদ বানসাল দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, “সব জাতীয় রাজনৈতিক দলের প্রধান ও দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। যারা আমাদের সময় দিয়েছেন তাদের ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। অন্যদের ডাকযোগে আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে।