রাজনীতি ছাড়ছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। জল্পনা চলছিল। এবার বিতর্ক উস্কে সক্রিয় রাজনীতি ছাড়ার ইঙ্গিত দিলেন খোদ বাবুলই। ফেসবুক পোস্টে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী লিখলেন, "চললাম, আলবিদা"। একই সঙ্গে তাঁর ঘোষণা সাসংদও পদেও ইস্তফা দেবেন তিনি। স্পষ্টভাবে তিনি জানিয়েছেন, মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার সঙ্গে তাঁর রাজনীতি ছাড়ার পদক্ষেপ গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। দলের অন্দরে বাবুল সুপ্রিয় কোণঠাসা- তা এযাবৎ প্রকাশ্য়ে এসেছিল। এই ইস্যুতে আসানসোলের সাংসদের ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট "2014 আর 2019 -এর মধ্যে অনেক ফারাক।"
একই সঙ্গে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর পোস্টে উল্লেখ, "বহু নতুন মন্ত্রী এখনো সরকারি বাড়ি পাননি তাই আমার বাড়িটি আমি এক মাসের মধ্যে (যত তাড়াতাড়ি সম্ভব - হয়তো তার আগেই) ছেড়ে দেবো। না, মাইনেও আর নেবোনা।"
তাহলে কী বিজেপি ছেড়ে অন্য দলে যোগ দিতে পারেন বাবুল সুপ্রিয়? সেই সম্ভাবনা উড়িয়েছেন তিনি। ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, "তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম, কোথাও নয় - Confirm করছি, কেউ আমাকে ডাকেওনি, আমিও কোথাও যাচ্ছি না।"
রাজনীতির বাইরে থাকলেও আগামী দিনে তিনি বাবুল সুপ্রিয় সমাজসেবা মূলক কাজে যুক্ত থাকতে চান বলে ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন তিনি। লিখেছেন, ‘সমাজসেবা করতে গেলে রাজনীতিতে না থেকেও করা যায়। নিজেকে একটু গুছিয়ে নিই আগে তারপর।’
সূত্রের খবর, সাংসদ পদ এবং বিজেপিও ছেড়ে দিতে পারেন বাবুল। তবে, এদিনের পোস্টেও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। পোস্টে লিখেছেন, 'বিগত কয়েকদিনে বার বার মাননীয় অমিত শাহ ও মাননীয় নাড্ডাজির কাছে রাজনীতি ছাড়ার সঙ্কল্প নিয়ে গেছি এবং আমি ওঁদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ যে প্রতিবারই ওঁরা আমাকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি তাঁদের এই ভালোবাসা কোনো দিন ভুলবো না আর তাই আবার তাঁদের কাছে গিয়ে সেই একই কথা বলার ধৃষ্টতা আর আমি দেখাতে পারবো না।'
আরও পড়ুন- পৃথক রাজ্য: দুই বিজেপি বিধায়কের গলায় পরস্পর বিরোধী সুর, অবস্থান স্পষ্টের দাবি তৃণমূলের
পাশাপাশি বাবুল এও লিখেছেন যে পদের জন্য তিনি কোনও দিনই লালায়িত ছিলেন না। তাই বার বার কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে যাওয়াও ঠিক হবে না। পোস্টে উল্লেখ, 'বিশেষ করে 'আমার আমি' কি করতে চায় তা যখন আমি অনেকদিন আগেই ঠিক করে ফেলেছি || কাজেই আবার একই কথার পুনরাবৃত্তি করতে গেলে কোথাও না কোথাও তাঁরা ভাবতেই পারেন যে আমি কোনো 'পদের' জন্য 'Bargain' করছি | আর তা যখন একেবারেই সত্য নয় তখন একেবারেই চাইনা যে তাঁদের মনের ঈশান কোণেও সেই 'সন্দেহের' উদ্রেক হোক - এক মূহুর্তের জন্য হলেও|'
চলতি মাসের শুরুতেই মন্ত্রীত্ব থেকে বাদ পড়েছেন বাবুল সুপ্রিয়ো। এরপরই ফেসবুকে নানা ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। গত বৃহস্পতিবার নিজের গায়ক, নাকি রাজনীতিবিদ সত্ত্বা জনপ্রিয় তা নিয়ে একটি পোস্ট করেছিলেন তিনি। গায়ক বাবুলই যে মানুষের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য তা ওই পোস্টে নিজের উপলোব্ধি থেকে জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার একরদ রাজনীতি ছাড়াই ঘোষণা করলেন আসানসোলের সাসংদ। কেন রাজনীতির প্রতি তাঁর এই মোহভঙ্গ? মন্ত্রিত্ব যাওয়ার জেরেই কী এই পদক্ষেপ? বাবুল জানিয়েছেন, 'মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার সাথে তার কি কোনো সম্পর্ক আছে? হ্যাঁ আছে - কিছুটা তো নিশ্চয় আছে! তঞ্চকতা করতে চাইনা তাই সে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেই তা সঠিক হবে-আমাকেও তা শান্তি দেবে। ' নিজের পদক্ষেপের পিছনে বাবুল সুপ্রিয়র যুক্তি, '2014 আর 2019 -এর মধ্যে অনেক ফারাক | তখন শুধু BJP-র টিকিটে আমি একাই ছিল (With due respect to Ahluwaliaji - GJM was BJP’s ally in the Darjeeling seat) কিন্তু আজ বাংলায় বিজেপিই প্রধান বিরোধী দল | আজ পার্টিতে অনেক নতুন Bright তরুণ তুর্কী নেতা যেমন আছে তেমনি অনেক প্রবীণ বিদগ্ধ নেতাও আছেন | এঁদের নেতৃত্বে দল এখান থেকে অনেক দূর যাবে এটা বলাই বাহুল্য | বলতে দ্বিধা নেই যে আজ পার্টিতে কোনও একজন ব্যক্তিবিশেষের থাকা না থাকাটা যে কোন বড় ব্যাপার নয় তাও স্পষ্ট হয়েছে এবং এটা মেনে নেওয়াটাই যে সঠীক সিদ্ধান্ত হবে এটাই আমার দৃঢ়, সুদৃঢ় বিশ্বাস!'
বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর বনিবনা না হওয়ার প্রসঙ্গও এদিন নিজের পোস্টে তুলে ধরেছেন বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর কথায়, রাজ্য নেতৃত্বের সহ্গে মনোমালিন্য ছিল। যা অস্বাভবিক নয়। তবে তা প্রকাশ্যে এসে পড়াটা কাম্য ছিল না। তাঁর দ্বারা মনোমালিন্যের কিছু কথা প্রকাশ্যে চলে আসাকেও শৃঙ্খলাভঙ্গ বলে দাবি করেছেন তিনি। যে এতে দলের কর্মীদের মনোবল চিড় খেয়েছে।
২০১৪-র লোকসভায় গোটা দেশে মোদী হাওয়া কাজ করেছিল। ব্যতিক্রম ছিল বাংলা। বঙ্গভূমিতে জোড়া-ফুলের জয়জয়কার ছিল। ৩৪টা আসন পায় তৃণমূল। বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ২টো। যার অন্যতম ছিল আসানসোলে বাবুল সুপ্রিয়র জয় লাভ। প্রথম মোদী মন্ত্রিসভাতেই প্রতিমন্ত্রী হন বাবুল। ১৯ সালেও একই কেন্দ্র থেকে জয় পান তিনি। এবার অবশ্য তৃণমূলের বিজয় রথে ধস নামায় পদ্ম ব্রিগেড। মোদী হাওয়াকে কাজে লাগিয়ে বাংলা থেকে বিজেপি ১৮ আসন দখল করে। ফের মন্ত্রিত্ব পান বাবুল সুপ্রিয়ো। এরপর একুশের বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করেছিল বিজেপি। সংগঠনের কলেবরও বৃহৎ হয়। দলে বাড়তে থাকে কোন্দল। বিধানসভায় সাংসদ বাবুলকে টালিগঞ্জ বিধানসভায় ভোটে লড়তে পাঠানো হয়। কিন্তু পরাজিত হন তিনি। এরপরই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয় আসানসোলের সাংসকে। শেষ পর্যন্ত এদিন রাজনীতিতে থেকেই সরে গেলেন বাবুল সুপ্রিয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন