‘‘দেবশ্রী রায় বিজেপিতে যোগ দিলে, আমি যোগ দেব না’’, বুধবার বিকেলে বিজেপি সদর দফতরে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের কয়েক মুহূর্ত আগে গেরুয়া নেতৃত্বের কাছে একসময়ের ‘বন্ধু’কে নিয়ে এমন শর্তই রেখেছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। এমনকী, আগমী দিনেও দেবশ্রী রায় বিজেপি-তে যোগ দিলে তিনি দল সেদিনই দল ছেড়ে দেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে এদিন কার্যত উভয় সংকটে পড়ে যায় দিল্লির পদ্ম নেতৃত্ব। শোভন না দেবশ্রী? কাকে দলে নেবেন? জানা যাচ্ছে, এই প্রশ্নের মুখে পড়েই বুধবার বিকেলে সাড়ে ৪টের সাংবাদিক বৈঠকের সময় আধঘণ্টা মতো পিছিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত মমতার ‘কাননে’ই আস্থা রেখে রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রীকে বিজেপি সদর দফতর থেকে পত্রপাঠ বিদায় করেন মুকুল রায়রা। শোভনের বিজেপিতে যোগদানের আগের মুহূর্তে এ ঘটনার কথা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানিয়েছেন বিজেপির নয়া সদস্য তথা শোভনের 'বান্ধবী' বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে শোভনের বিজেপিতে যোগদানের দিন দেবশ্রীর ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’-এর নেপথ্যে চক্রান্ত রয়েছে বলে মনে করছেন বৈশাখী।
আরও পড়ুন: পদ্ম কাননে শোভন-বৈশাখী
আরও পড়ুন: কাননকে নৈতিকতার পাঠ দিলেন ‘দিদি’
দেবশ্রী রায়কে নিয়ে ঠিক কী জানিয়েছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়?
‘শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তেই’ বিজেপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের পর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বৈশাখী বলেন, ‘‘আজ যোগদানের আগে একটা ঘটনা ঘটেছে। হঠাৎ দেবশ্রী রায় বিজেপি সদর দফতরে আসেন। দেবশ্রীকে দেখে আমি ও শোভন চমকে গিয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের কাছে জানতে চাই, উনি কেন এসেছেন? শোভন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, 'দেবশ্রী রায় বিজেপিতে যোগ দিলে, আমি কিছুতেই যোগ দেবেন না'। শোভন এও জানান যে, যদি কখনও দেবশ্রী রায় বিজেপিতে যোগ দেন, তাহলে সেদিনই বিজেপিতে শেষ দিন হবে শোভনের। তাই ওঁকে (দেবশ্রী) প্রত্যাখ্যান করা হয়। বিজেপির মধ্যেই দ্বিধাবিভক্ত থেকে কেউ ওঁকে (দেবশ্রী) এখানে আনেন। সঙ্গে সঙ্গে শোভন জানান, এই নোংরামি থেকে সরে এসেছেন, এখানে এরকমটা হলে কাজ করতে পারবেন না। দরকার হলে রাজনৈতিক সন্ন্যাস নিতে রাজি। শেষ পর্যন্ত নিজের জেদে দেবশ্রীর বিজেপিতে যোগদানের চেষ্টা ব্যর্থ করেছেন শোভনবাবু। শোভনদা আঘাত পেয়েছেন এতে’’।
আরও পড়ুন: শোভনের বিজেপিতে যোগদান দেখে হাসছেন রত্না! কেন?
এ প্রসঙ্গে বৈশাখী আরও বলেন, ‘‘শোভনদার ডিভোর্স মামলা যেদিন থেকে শুরু হয়, তখন রত্নার পক্ষেই দেবশ্রী ছিলেন। তারপর থেকেই দিদিমণিকেও বলেছিলেন, যে উনি দেবশ্রীর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখতে চান না। আজও সেই অবস্থানে অনড় থাকলেন। এক সময় শোভনের সঙ্গে দেবশ্রীর বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু সেই বন্ধুত্বের আড়ালে স্বার্থ ছিল। স্বার্থের সঙ্গে শোভনকে ব্যবহার করেছেন। শোভন বুঝেছেন, অভিনেত্রী ও নেত্রী হিসেবে দেবশ্রীর কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। লিডার হিসেবে দেবশ্রী পুরোপুরি ব্যর্থ। শেষবার দেবশ্রী হারতে বসেছিল, শোভনই জিতিয়েছিল। শোভন তাই বলেছে, এরকম কাউকে দলে নিলে কাজ করব না’’। পাশাপাশি বৈশাখী বলেন, ‘‘দেবশ্রীকে এখানে এনে কেউ চক্রান্ত করেছে কিনা জানি না। এটা খুবই বাজে ছিল। একটা জায়গায় দেবশ্রীই সমস্যায় পড়লেন। মমতা বারবার বলেছেন দেবশ্রী ভাল মেয়ে, আজ সেই ভাল মেয়েই এরকম কাজ (বিজেপি দফতরে হাজির হওয়া) করল’’।
আরও পড়ুন: বিজেপি দফতরে দেবশ্রী রায়
অন্যদিকে, বিজেপিতে যোগদান প্রসঙ্গে শোভনের এই বান্ধবী বলেন, ‘‘শোভনদার সিদ্ধান্তেই বিজেপিতে যোগ দিলাম। আজ সবে পরিবারের সদস্য হলাম। যা দায়িত্ব দেবে, তা পালন করব। মর্যাদার সঙ্গে কাজ করতে দিলে হবে, না হলে...কোনও শর্ত দিয়ে তো আসেনি’’।