দীপাবলির মুখে বঙ্গ রাজনীতিতে নয়া সমীকরণের ইঙ্গিত দিলেন অধ্যাপিকা তথা শোভন-বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। কালীপুজোর আগের দিন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেড় ঘণ্টা বৈঠক করলেন সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া বৈশাখী। শনিবার পার্থর পায়ে হাত দিয়ে প্রণামও করেছেন বৈশাখী। এদিনের বৈঠকে রাজনীতি নিয়েও কথা হয়েছে বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানিয়েছেন বৈশাখীদেবী। তিনি জানিয়েছেন, প্রাক্তন সতীর্থ শোভনের ব্যাপারে খোঁজও নিয়েছেন পার্থ। বৈশাখীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর এদিন পার্থর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘অনেক বিষয়ে কথা হয়েছে’’। তবে কি শোভন-বৈশাখী আবারও তৃণমূলে ফিরছেন? এদিনের হঠাৎ বৈঠকের পর এই প্রশ্নটাই এখন মাথা চাড়া দিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। তবে এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি বৈশাখী।
পার্থ-বৈশাখীর কী কথা হল?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলেজের কিছু সমস্যা নিয়ে পার্থদার সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছিলাম। আজ উনি সময় দিয়েছিলেন। কলেজের বিষয়ে কথা হয়েছে’’। রাজনীতি নিয়ে কথা হয়েছে? জবাবে বৈশাখী বলেন, ‘‘দেড় ঘণ্টা ধরে কথা হয়েছে। শুধু তো কলেজের বিষয়ে কথা হবে না, অন্যান্য বিষয়েও কথা হয়েছে। পার্থবাবুর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল। উনি শোভনদাকেও খুব স্নেহ করেন। শোভনের ব্যাপারে খোঁজ খবর তো নিয়েছেন নিশ্চয়ই’’। পার্থবাবুকে প্রণাম করেছেন? প্রশ্ন শুনে বৈশাখী বলেন, ‘‘বিজয়ার পর কারও বাড়িতে গেলে বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রণাম করাটাই তো শিষ্টাচার’’।
আরও পড়ুন: ‘ভাইফোঁটায় যেতে চেয়েছিলাম, মমতা কালীপুজোয় ডাকলেন’
বিজেপি-র সঙ্গে বঙ্গ রাজনীতির বহুলচর্চিত যুগলের দূরত্ম প্রসঙ্গে এদিন বৈশাখী বলেন, ‘‘দল কাউকে সক্রিয় করবেন নাকি নিষ্ক্রিয় করবেন, সেটা দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত’’। তাহলে শেষ পর্যন্ত তৃণমূলেই ফিরছেন? বৈশাখীর মন্তব্য, ‘‘আমি কখনই তৃণমূলে ছিলাম না। এই দল সম্পর্কে জানিও না। এ ব্যাপারে মন্তব্য করা ঠিক নয়’’।
আরও পড়ুন: বৈশাখীকে ‘চরম হেনস্থা-গালিগালাজ’, কলেজে ধুন্ধুমার
বৈশাখীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর তৃণমূল মহাসচিব তথা পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলায় কোনও দোষ দেখি না। শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন। শোভন সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করেছি। তাঁর শরীর কেমন আছে, খোঁজ নিয়েছি। কেউ অন্য কোনও রাজনৈতিক দলে চলে গেলেই যে সুস্থতা কামনা করব না, সেই সংস্কৃতি আমাদের নেই। অনেক কথাই হয়েছে। সব কথা তো বলা যায় না’’।
EXCLUSIVE: দেবশ্রী রায়: ‘শোভন-বৈশাখী যাবে জানলে আমি পরের দিন যেতাম’
অন্যদিকে, পার্থ-বৈশাখী সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে কার্যত ‘নিশ্চুপ’ বঙ্গ বিজেপি। এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, ‘‘রাজনীতি নিয়ে, ভূগোল নিয়ে, জ্যামিতি নিয়ে কথা বলতেই পারেন। যে কেউ যে কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেন। অসুবিধা নেই’’। আরেক বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। ওঁদের মধ্যে কথা হয়েছে। আমাদের কোনও বক্তব্য নেই’’। আরেক বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওঁরা শর্ত দিয়েছিলেন বলে আপত্তি তুলেছিলাম। আমরা কখনও দলে শর্ত দিইনি...কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সব লক্ষ্য রাখছেন, দলই সিদ্ধান্ত নেবে’’।
আরও পড়ুন: বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত শোভন-বৈশাখীর, ‘অপমান সহ্য করে পুরানো দলেই থাকা যেত’!
উল্লেখ্য, বিজেপিতে যোগদানের আগে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কের কালো মেঘ সরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একবার মধ্যরাতে শোভনের ফ্ল্যাটেও যেতে দেখা গিয়েছিল পার্থকে। কিন্তু সে সময় শোনা যায়, তৃণমূলে যে তিনি থাকবেন না, সে ব্যাপারে স্পষ্ট ভাষায় পার্থকে জানিয়েছিলেন শোভন। এদিকে, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর শোভন-বৈশাখীকে ঘিরে অসন্তোষ প্রকাশ করে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। বিজেপিতে যোগদানের দিন দিল্লিতে দলের সদর দফতরে তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়ের উপস্থিতি নিয়ে চরম নাটক চলে। ‘দেবশ্রী রায় বিজেপিতে যোগ দিলে আমরা যোগ দেব না’, পদ্মবাহিনীর উপর এ শর্তই চাপিয়েছিলেন শোভন। এ নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয় বঙ্গ বিজেপিতে। পাশাপাশি কলকাতায় ৬ মুরলীধর সেন লেনে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বৈশাখীকে আমন্ত্রণ না জানানো নিয়ে চরম ক্ষোভপ্রকাশ করেন বৈশাখী। এরপর থেকেই শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের অসন্তোষ সামনে আসে। আচমকাই বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন শোভন-বৈশাখী। এরপরই এই যুগলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে বিজেপির। সেই প্রেক্ষাপটে আবারও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের এহেন সাক্ষাৎ রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ।