নন্দীগ্রামে নিজের জয়ের ভিত মজবুত করতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব দিয়েছেন বর্ষীয়াণ তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। যা নিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমোকে বিঁধতে ছাড়ছে না বিরোধী শিবির। কেন ভোট কৌশলী পিকে-কে বাদ দিয়ে ফের বর্ষীয়ান নেতার উপর ভরসা রাখছেন নেত্রী, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
টিম পিকে-ই এখন জোড়া-ফুল শিবিরের চাণক্য। সংগঠনে রদবদল থেকে তৃণমূলের কোন নেতা কি করবেন, বলবেন তা কার্যত পিকে-ই ঠিক করেন। এ হেন পিকে-কেই খোদ নেত্রীর প্রেস্টিজ ফাইটের জয়ের ভিত রচনায় কেন ব্রাত্য রাখা হল তা এখন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর স্ক্যানারে।
এই ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন বিজেপির নেত্রী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ডায়মন্ডহারবারে দলীয় সভায় শোভন 'বান্ধবী' বৈশাখী বলেছেন, 'দিদি আজ আপনি রেইকি করতে পাঠাচ্ছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। কোথায় গেল আপনার কোটি টাকার সেই ঠিকাদার সংস্থা পিকে। আজ আবার দলের পুরনো মুখগুলোকে মনে পড়ছে আপনার, তাহলে কী কাজ করল পিকে?'
এর আগে 'বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না' বলে মমতাকে আক্রমণ করেছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বঙ্গ রাজনীতিতে যা বহু চর্চিত। নন্দীগ্রামে সুব্রতবাবুর সমীক্ষা নিয়ে এদিন সেই প্রসঙ্গে টানেন বৈশাখীদেবী। মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে তাচ্ছিল্লের সুরে বলেন, 'অবশ্য এখন যাঁদের মনে পড়ছে তাঁরা আপনার জেলে যাওয়ার পার্থনা করতেন। বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না বলতেন। তাঁদের হাতেই আপনি গুরুভার তুলে দিচ্ছেন।'
আরও পড়ুন- মর্যাদার লড়াই, তারুণ্যের আগ্রাসন বধে অভিজ্ঞতায় ভরসা নেত্রীর
জোড়া-ফুলের 'বিদ্রোহী'দের আবিলম্বে দল ছাড়ার কড়া বার্তা দিয়েছেন নেত্রী। 'দলবদলু'দের 'লোভী-ভোগী' বলে দেগে দিয়েছেন তিনি। জানান, যাঁরা তৃণমূলে থেকে যাচ্ছেন তাঁরা হলেন ত্যাগী। যা নিয়ে তৃণমূল নেত্রীকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী ক্ষেত্র ডায়নমন্ডহারবার থেকে পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন একদা মমতারই প্রিয় পাত্র কাননের 'বান্ধবী'। বলেছেন, 'যা যা বলে আপনি সবাইকে তাড়িয়েছেন। ত্যাগীরা বিজেপিতে দলে দলে যোগ দিচ্ছেন, আর লোভী-ভোগীরা তৃণমূলে থেকে যাচ্ছে।'
নন্দীগ্রাম আন্দোলনের দুই কাণ্ডারী আপাতত চরম প্রতিপক্ষ। এই প্রেক্ষাপটে নন্দীগ্রাম থেকে নিজেকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাক্তন নেত্রীকে হারাতে পাল্টা ধর্মীয় মেরুকরণের পথে হেঁটেছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। একেবারে সংখ্যাতত্বের বিশ্লেষণ করেছেন। অন্য ভোটেও সিঁদ কাটবেন বলে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন শুভেন্দু। ফলে একদা তৃণমূল ও নেত্রীর রাজনৈতিক উত্থানের জমি নন্দীগ্রামে এবার লড়াই হাড্ডাহাড্ডি। একই সঙ্গে মর্য়াদারও।
এই পরিস্থিতিতে দিদির জয়ের ভিত তৈরিতে নন্দীগ্রাম যাচ্ছেন বর্ষীয়ান সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সেখানে তিন দিন থাকবেন তিনি। মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন। অভাব-অভিযোগ শুনবেন। মোদ্দা কথায় তাঁকে নন্দীগ্রামের সার্ভে করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। ঘাস-ফুলে রাজনীতির অভিজ্ঞতায় এই মুহূর্তে প্রথম সারিতে রয়েছেন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ সুব্রতবাবু।
'টাফ ফাইট' জিততে যখন নেত্রীর বড় ভরসা সুব্রতবাবু, তখন অবশ্য অতীত রাজনীতির নানা প্রসঙ্গ টেনে মমতাকে বিঁধতে মরিয়া বিরোধী শিবির।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন