পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক ‘বোমা’ ফাটালেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করে চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। মিল্লি আল আমিন কলেজের অধ্যক্ষার পদ থেকে এদিন ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামিকালই আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দেবেন বলে এদিন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানিয়েছেন বৈশাখী। উল্লেখ্য, তিনি যে বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে মমতার কাছেই মমতার নামে অভিযোগ করবেন সে কথা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন বৈশাখী।
আরও পড়ুন: ‘পার্থবাবু নিষেধ করেছেন’, আজ ইস্তফা দিলেন না বৈশাখী
চাকরিতে ইস্তফার সিদ্ধান্তের জন্য মমতাকেই দায়ী করেছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পাশে বসে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে বৈশাখী বলেন, ‘‘দিদিকেই বলতে চাই। আপনি কি সত্যিই নির্দেশ দিয়েছেন যে, সাম্প্রদায়িক তকমা দিয়ে চাকরি খেয়ে নেবেন! নাকি আপনার নাম করে অন্য কেউ এসব বলছেন’’। মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন বৈশাখী। কাঁদতে কাঁদতে বৈশাখী এদিন বলেন, ‘‘আমার সম্মান ভূলন্ঠিত হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করব, উষ্মা হলে, ক্রোধ হলে বকুন। কিন্তু, কেন আপনি এই অন্যায় অবিচার করছেন?’’ বৈশাখীর পাশে থেকে এদিন নিজের দলের বিরুদ্ধেই সুর চড়িয়েছেন একদা মমতা ঘনিষ্ঠ শোভন চট্টোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আমার সবথেকে বেশি ক্ষতি করেছেন’
ঠিক কী বলেছেন শোভন-বৈশাখী?
সাংবাদিক বৈঠকে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত ২ দিন ধরে হেনস্থা করা হচ্ছে। আমার কাছে যা রিপোর্ট আছে, তাতে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে হেনস্থা করা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রীর উপর নির্দেশ রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। পুরো বিষয়টি অত্যন্ত বেদনার এবং বিস্ময়কর। সাম্প্রদায়িক তকমা দিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে। তাই দিদিকেই বলতে চাই, আপনি কি সত্যিই নির্দেশ দিয়েছেন যে,সাম্প্রদায়িক তকমা দিয়ে চাকরি খেয়ে নেব! নাকি আপনার নাম করে অন্য কেউ এসব বলছেন’’। এদিন সাংবাদিক বৈঠকের পর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বৈশাখী বলেন, ‘‘এতদিন ধরে কলেজে ভালভাবে কাজ করে এসেছি। দুই ধর্মের দারুণ মেলবন্ধন ছিল। কিন্তু আজ আমায় সাম্প্রদায়িকতার তকমা লাগিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে। এটা মেনে নিতে পারিনি। কালই আচার্যের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দেব’’।
আরও পড়ুন: তৃণমূলে ফেরার প্রশ্নই নেই, ভাল লোকেরাই দল ছাড়ছে: বৈশাখী
অন্যদিকে, শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ গত ২৩ জুলাই আচমকাই পার্থ দা আসেন। বহু আলোচনার মধ্যে তখনও বলেছিলাম, রাজনৈতিক সঙ্গী হিসেবে, প্রতিপক্ষ হিসেবে কাউকে স্কেপগোট করা উচিত নয়। তখনও বলেছেন, কেন বৈশাখী ইস্তফা দেবেন, আমার উপর আস্থা রাখ। কিন্তু, বাস্তবে যা হচ্ছে, তাতে বৈশাখী ইস্তফার জায়গায় পৌঁছেছেন। কী হল, সেটা আমাদের কাছেও জিজ্ঞাস্য। যদি মনে করে থাকেন, আঘাত করবার জন্য রুটিরুজি, সাম্মানের জায়গায় ছেলেখেলা করবেন, তাহলে সেটা তাঁদের বিচার-বুদ্ধি। ভবিষ্যতেই বোঝা যাবে কোন পথে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’’।
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই গভীর রাতে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে যান পার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা শোভনের ফ্ল্যাটে ছিলেন পার্থ। শোভন-পার্থর এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বৈশাখীও। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে শোভনকে তৃণমূলে ফেরার প্রস্তাব দেন পার্থ। কিন্তু পার্থর ডাকে শোভন সাড়া দেননি। এই বৈঠকের পরই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, ‘‘তৃণমূলে ফেরার কোনও প্রশ্নই নেই’’। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, পার্থর প্রস্তাব পত্রপাঠ খারিজ করাতেই বৈশাখীকে কোণঠাসা করা হচ্ছে। আর অতীতে বৈশাখী বলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের কথা হয়েছে এবং তিনি গেরুয়া শিবিরকে অচ্ছুৎ মনে করেন না। ফলে, বৈশাখীর এদিনের সাংবাদিক বৈঠকের পিছনে বিজেপির ছায়াও দেখছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
Get all the Latest Bengali News and West Bengal News at Indian Express Bangla. You can also catch all the Politics News in Bangla by following us on Twitter and Facebook
Web Title: