লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর তৃণমূল নেতৃত্ব চাইছে, দলে ফের সক্রিয়ভাবে ফিরে আসুন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। প্রয়োজনে ২০২০ সালের পুরসভা নির্বাচনে তাঁকে ফের মেয়র পদপ্রার্থী হিসাবে সামনে রেখেই লড়াইয়ে নামবে রাজ্যের শাসকদল। শোভনের বন্ধু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, তাঁকে নিজের বাড়িতে ডেকে এমনই অনুরোধ করেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
সূত্রের খবর, গত রবিবার, ২৩ জুন বৈশাখীকে নিজের নাকতলার বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন পার্থ। প্রায় ঘন্টা তিনেক কথা হয়েছে দু-জনের। প্রথমে বৈশাখীর কলেজের কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও দ্রুতই তা মোড় নেয় তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রসঙ্গে। শোভন যাতে ফের তৃণমূলের হয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠেন, সে বিষয়ে বৈশাখীকে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেন পার্থ। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীর সঙ্গে একান্তে বৈঠকও করতে চান তিনি। পাশাপাশি, শোভন যাতে কোনওমতেই বিজেপিতে যোগ না দেন, তা নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেন বৈশাখীকে। তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার প্রাক্তন নেত্রী বৈশাখী অবশ্য পার্থের কাছে কোনওকিছু 'কমিট' করতে রাজি হননি। বরং তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরাসরি শোভনের সঙ্গেই কথা বলতে। তবে বৈশাখীর বয়ান অনুযায়ী, পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, সরাসরি কথা বললে শোভনের অস্বস্তি বোধ হতে পারে, তাই তিনি বৈশাখীকে অনুরোধ করছেন।
আরও পড়ুন- নুসরতকে নিয়ে তৃণমূলেই ‘ক্ষোভ’, পাশে লকেট!
বৈশাখী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, "শিক্ষামন্ত্রী আমাকে ওঁর বাড়িতে ডেকেছিলেন। আমি কলেজের কিছু সমস্যা নিয়ে কথা শুরু করেছিলাম। তারপর উনি নিজেই শোভনবাবুর প্রসঙ্গ তোলেন। শোভনবাবুকে দলে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেন আমায়। জানান, শোভনবাবু চাইলে তাঁকেই আবার কলকাতা পুরসভার মেয়র করা হবে। মন্ত্রীত্বও দেওয়া হবে। আসন্ন পুরভোটে শোভনবাবুকে মেয়র পদপ্রার্থী করে নির্বাচনে যেতেও আপত্তি নেই দলের"। বৈশাখীর কথায়, "পার্থবাবু বারবার করে বলছিলেন, শোভনবাবু যেন কোনও পরিস্থিতিতেই বিজেপিতে যোগ না দেন। আমাকেও সংসদীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিতে আপত্তি নেই তৃণমূলের। বিভিন্ন কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দেন শিক্ষামন্ত্রী"।
বৈশাখীর দাবি, তৃণমূলের মহাসচিবকে তিনি জানিয়েছেন, শোভনবাবুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে, তা কলকাতার প্রাক্তন মেয়র নিজেই ঠিক করবেন। তাঁর কথায়, "আমি ওঁকে বলেছি, তৃণমূল নেতৃত্ব শোভনবাবুর সঙ্গে কী আচরণ করেছেন, তা ওঁর ভুলে যাওয়ার কথা নয়। তাছাড়া, ওঁর রাজনৈতিক জীবন কোন খাতে বইবে, তা উনিই ঠিক করবেন। আমি এই বিষয়ে কথা বলার কেউ নই।" শোভনের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জল্পনা প্রসঙ্গে বৈশাখী বলেন, "শোভনবাবুর মতো নেতাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলই পেতে চাইছে। বিজেপি-ও ব্যতিক্রম নয়। তবে উনি যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিজেই নেবেন।"
আরও পড়ুন, স্কুলে যৌন হেনস্থা বন্ধে সরকারের ১০ দাওয়াই
পার্থের সঙ্গে এদিন একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। টেক্সট মেসেজেরও উত্তর মেলেনি। এ বিষয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলেই, তা এই প্রতিবেদনে যুক্ত করা হবে। তবে প্রবীন তৃণমূল নেতা তথা কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, "বৈশাখী পার্থের বাড়ি গিয়েছিলেন কি না আমি জানি না। পার্থ যদি ওঁর মাধ্যমে শোভনকে দলে ফেরার প্রস্তাব দিয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয় দলের অনুমতি নিয়েই তা করেছেন। তবে শোভন ফিরে এলে আমার ভালই লাগবে"।