গত ১৭ জানুয়ারি বিবিসি তার চ্যানেল বিবিসি ২-এ তার তথ্যচিত্র, 'ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন' এর প্রথম অংশ সম্প্রচারের ঠিক আগে, এটি বিবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজে তার অনুষ্ঠান 'ইমপ্যাক্ট'-এ তথ্যচিত্রের উপর ১১ মিনিটের বেশি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যদিও বিবিসি ২ চ্যানেলের নাগাল ব্রিটেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু, ইংরেজিভাষী বিশ্বের বিভিন্ন অংশে বিবিসি ওয়ার্ল্ডের প্রচুর দর্শক রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য অংশেও বিবিসি ওয়ার্ল্ড দেখা যায়। তার ফলে স্পষ্টতই বিবিসির উদ্দেশ্য ছিল, এই তথ্যচিত্রের প্রতি সারা বিশ্বের যতটা বেশিসংখ্যক দর্শকের আগ্রহ জাগিয়ে তোলা। আর, একে শুধুমাত্র ব্রিটেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না-রাখা।
'ইমপ্যাক্ট' প্রতিবেদনের উপস্থাপকও অনুষ্ঠানটি এই বলে শুরু করেছিলেন যে, '২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার প্রায় ২১ বছর পরে, বিবিসির একটি নতুন তথ্যচিত্রে ঘটনাগুলোর প্রভাব এবং এটি কীভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে প্রভাবিত করেছে, যিনি সেই সময় রাজ্যের প্রধান ছিলেন, তার ওপর একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরেছে।' এটা তাৎপর্যপূর্ণ যে বিবিসি এই তথ্যচিত্রকে শুধুমাত্র তার একটি চ্যানেলের পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করেনি। বরং, পুরো নেটওয়ার্কের অংশ বলে মনে করেছে।
এই তথ্যচিত্রটি তৈরিতে কমপক্ষে দুই বছর লেগেছে। বিবিসি নিজেকে স্বাধীন বলে দাবি করেন। তবে, এর প্রতিষ্ঠার সঙ্গে ব্রিটেনের বিদেশনীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। পাশাপাশি, বিবিসির অনুষ্ঠান কার্যত ব্রিটেনের বিদেশনীতিকেই বা বিদেশনীতির অবস্থানকেই প্রচার করে। সুতরাং, এটি স্পষ্ট যে ব্রিটিশ সংস্থার অন্তত একটি প্রভাবশালী অংশ জনজীবনে মোদীর অতীতের একটি বিতর্কিত অংশের ওপর নজর দেওয়ার ও তা প্রকাশ্যে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তথ্যচিত্রটিতে গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে ব্রিটিশ বিদেশ দফতরের সরকারি রিপোর্টকে 'সীমাবদ্ধ' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। 'ইমপ্যাক্ট' প্রোগ্রামে বিবিসি দাবি করেছে যে দুই দশক ধরে এই রিপোর্ট তাদের কাছে ছিল। আর, তারা এর কিছু অংশ আগে ব্যবহার করেছিল। এখন কেবল পুরোপুরি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাধারণত 'সীমাবদ্ধ' শব্দটি হল সরকারি নথিগুলোর একটি নিম্নস্তরীয় সুরক্ষা শ্রেণিবিন্যাস। এর অর্থ হল, এটি প্রকাশিত হওয়া উচিত নয়। কারণ, এর বিষয়বস্তু প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার বিব্রত হতে পারে।
আরও পড়ুন- শ্রদ্ধা হত্যা মামলায় ৬,৬২৯ পাতার চার্জশিট পেশ, খুনের কারণ জানাল দিল্লি পুলিশ
আর, বিবিসির এই সব বক্তব্যের জেরেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি ঋষি সুনাকের দাবি পূরণ না-করায় মোদী সরকারের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে? অথবা, ঋষি সুনাকের বন্ধু হওয়ায় মোদীর বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছেন ব্রিটেনের একাংশ? যাতে মোদীকে কোণঠাসা করে সুনাককেও বিপাকে ফেলা যায়? আবার, সম্প্রতি বেশ কয়েকবার ব্রিটেনে গিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ইতালির পাশাপাশি ব্রিটেনের সঙ্গে সোনিয়া ও রাহুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বিবিসির তথ্যচিত্র প্রকাশ কি তারই জের? এই সব প্রশ্নও তুলছেন অনেকেই।
Read full story in English