তখন মনমোহন সিং সরকারের প্রথম মেয়াদের এক বছর। অর্থ নিয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসার অভিযোগে কেঁপে উঠেছিল সংসদ। তেমনই অভিযোগের এবার মুখোমুখি হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সেই সময় কোবরাপোস্ট ওয়েবসাইট একটি স্টিং অপারেশন চালিয়েছিল। অভিযোগ করেছিল, কিছু সাংসদ অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন করতে, প্রচার চালাতে রাজি হয়েছিলেন। কংগ্রেসের পবনকুমার বনসলের নেতৃত্বে একটি সংসদীয় কমিটির তদন্তের পর বিজেপির ছয় জন, বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) তিন জন এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) আর কংগ্রেস (রাম সেবক) থেকে একজন করে মোট ১১ সাংসদকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। এই পর্বটি সেই সব সংসদ সদস্যদের বেশিরভাগেরই রাজনৈতিক কেরিয়ারকে লাইনচ্যুত করেছিল, যাঁরা পরবর্তীকালেও অভিযোগ থেকে মুক্তি পাননি। কেউ কেউ আবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও দল পালটেছেন। সংগঠনে থেকেছেন। কিন্তু, জনগণের মনে দাগ কাটতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত জনাদুয়েক আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনাও করছেন বলে জানা গেছে।
যশবন্ত গিরিধর মহাজন
মহাজন ২০১৮ সালে ৭৭ বছর বয়সে মারা যান। তিনি ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের জলগাঁও নির্বাচনী এলাকা থেকে বিজেপির দুই মেয়াদের সাংসদ ছিলেন। তাঁকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বহিষ্কারের পর তিনি বিজেপিতে থাকলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি।
সুরেশ চান্দেল
চান্দেলের বয়স এখন ৬৩। হিমাচল প্রদেশের হামিরপুর থেকে লোকসভায় তিনবার বিজেপির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। চান্দেল ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০০ সাল পর্যন্ত রাজ্য বিজেপির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৯৮, ১৯৯৯ এবং ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি জয়ী হন। সংসদ থেকে বহিষ্কারের পরেও তিনি দলের জন্য কাজ চালিয়ে যান এবং 2012 সালে হামিরপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিলাসপুর থেকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৭ সালে তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়নি। ২০১৯ সালে তিনি কংগ্রেসে চলে যান। গত বছর হিমাচল বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে, তিনি বিজেপিতে ফিরলেও তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়নি।
প্রদীপ গান্ধী
তিনি ২০০৩ সালে ডোঙ্গারগাঁও থেকে ছত্তিশগড় বিধানসভায় প্রথম প্রবেশ করেন। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর রমন সিংয়ের জন্য তাঁর আসনটি খালি করতে হয়। বিনিময়ে, প্রদীপ গান্ধীকে রমন সিং তাঁর রাজনন্দগাঁও নির্বাচনী আসন দিয়েছিলেন। সেখান থেকে প্রদীপ গান্ধী ২০০৪ সালে জিতেছিলেন। অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন কেলেঙ্কারির পরে, তাঁকে বিজেপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এরপর প্রদীপ গান্ধী ২০১০ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন করেন। দলের রাজ্য কমিটিতে তাঁকে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁকে ছত্তিশগড়ে ওয়ার্কিং কমিটিতে বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য করা হয়েছে। প্রদীপ গান্ধী বর্তমানে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত আছেন।
চন্দ্রপ্রতাপ সিং
৬৬ বছর বয়সি চন্দ্রপ্রতাপ সিং ১৯৯৯ এবং ২০০৪ সালে মধ্যপ্রদেশের সিধি থেকে বিজেপির টিকিটে জিতেছিলেন। লোকসভা থেকে বহিষ্কারের পর চন্দ্রপ্রতাপ সিং প্রতিবেশী ছত্তিশগড়ের সরগুজায় চলে যান। তিনি অবশ্য তারপর থেকে কোনও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। ছত্তিশগড়ের বিজেপি সূত্রে খবর, বর্তমানে তিনি মধ্যপ্রদেশের শাহদোলে থাকেন।
রাজা রাম পাল
রাজা রাম পালের বয়স ৬২ বছর। তিনি উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় ১৯৯৬ সালে কানপুর নগর জেলার ঘটামপুর থেকে বিএসপির টিকিটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০২ সালে হেরে যান। ২০০৪ সালে বিএসপি প্রার্থী হিসেবে বিলহাউর থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। সংসদ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর, পাল কংগ্রেসে যোগ দেন এবং আকবরপুর থেকে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হন। পরের দুটি নির্বাচনে তিনি হেরে যান। গত বছর ইউপি নির্বাচনের আগে তিনি সমাজবাদী পার্টিতে (এসপি) যোগ দেন। বর্তমানে, পাল সমাজবাদী পার্টির সর্বভারতীয় সম্পাদক এবং আকবরপুর থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
নরেন্দ্রকুমার কুশওয়াহা
৫৩ বছর বয়সি নরেন্দ্রকুমার কুশওয়াহা ২০০৪ সালে মির্জাপুর থেকে বিএসপির টিকিটে সংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে তিনি সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেন। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হন। ছয় মাস পর আবার বিএসপিতে ফিরে আসেন। তিনি মির্জাপুর জেলার মারিহান থেকে বিএসপির টিকিটে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দ্বিতীয় হন।
লালচন্দ্র কোল
লালচন্দ্র কোলের বর্তমান বয়স ৭৪ বছর। তিনি ২০০৪ সালে সোনভদ্র জেলার রবার্টসগঞ্জ (তপশিলি জাতি সংরক্ষিত) আসন থেকে বিএসপির টিকিটে সাংসদ হন। চার বছর আগে লালচন্দ্র কোল সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি দলের কোনও পদে নেই। সমাজবাদী পার্টি সূত্রে খবর, কোল লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মনোজকুমার ভুঁইয়া
আরজেডি নেতা মনোজকুমার ভুঁইয়ার বর্তমান বয়স ৫০ বছর। তিনি ২০০৪ সালে পালামু লোকসভা আসনে জিতেছিলেন। তার আগে বিজেপি টানা চারবার পালামু জিতেছিল। ২০১৪ সালে ভুঁইয়া রাষ্ট্রীয় জনতা দলের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ব্যর্থ হন। এরপর ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চা (প্রজাতান্ত্রিক) দলে যোগ দেন। এই দল এখন বিজেপির সঙ্গে মিশে গেছে। ২০১৯ সালে ভুঁইয়া এবং তাঁর স্ত্রী পুষ্পা দেবী বিজেপিতে যোগ দেন। পুষ্পা দেবী ছত্তারপুরের বিধায়ক। এই ছত্তারপুর, পালামু লোকসভা আসনের ছয়টি বিধানসভা কেন্দ্রের একটি। সূত্রের খবর, ভুঁইয়া আগামী লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইছেন।
ছতরপাল সিং লোধা
ছতরপাল সিং লোধার বয়স এখন ৭৭। তিনি উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে ১৯৯১ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে একটানা চারটি মেয়াদে বিজেপির প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ২০০৪ সালে, বিজেপি তাঁকে ওড়িশা থেকে রাজ্যসভায় মনোনীত করেছিল। লোকসভা থেকে বহিষ্কারের পরও তিনি বিজেপিতে থেকে যান এবং বুলন্দশহরের অনুপশহর থেকে ২০১২ সালের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি বিএসপির গজেন্দ্র সিং-এর কাছে হেরে গিয়েছিলেন। তারপর থেকে কোনও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। বুলন্দশহরের এক স্থানীয় বিজেপি নেতা জানিয়েছেন, লোধা আর রাজনীতিতে সক্রিয় নন।
আরও পড়ুন- বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেড়েছে বিমান ভাড়া, যাত্রীরা নাজেহাল, কারণটা কী?
আন্নাসাহেব এমকে পাতিল
আন্নাসাহেব এমকে পাতিলের বয়স এখন ৮৪ বছর। তিনি ১৯৯৬ সালে মহারাষ্ট্রের জলগাঁও জেলার এরন্দোল আসন থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার লোকসভায় নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৮, ১৯৯৯ এবং ২০০৪ সালে এরন্দোল আসনটি জিতেছিলেন। অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের প্রতিমন্ত্রী (গ্রামীণ উন্নয়ন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন কেলেঙ্কারি পাতিলের নির্বাচনী জীবন শেষ করে দেয়। তারপর থেকে তিনি কোনও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। তবে, তিনি বিজেপির সঙ্গে যুক্ত আছেন। বর্তমানে তিনি ইন্ডিয়ান ফেডারেশন অফ গ্রিন এনার্জি (IFGE)-এর চেয়ারপার্সন। এই সংস্থা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সেক্টরের প্রতিনিধিত্বকারী। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রী নীতিন গড়করি এই সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকদের অন্যতম। নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রীরা প্রায়শই এই সংস্থার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
— রাঁচিতে অভিষেক অঙ্গদের ইনপুট-সহ