২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের পর ক্রমাগত ঘর ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপির। 'গৃহযুদ্ধ'-ই নিজেদের প্রচারেও রেখেছে। এরইমধ্যে আসানসোল সাংসদ আসন এই রাজ্য থেকে কমেছে গেরুয়া শিবিরের। ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং পাট ইস্যুতে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রীকেই নিশানা করেছেন। এই ইস্যুতে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে এক যোগে আন্দোলনে যেতেও তাঁর আপত্তি নেই বলেও ঘোষণা করেছেন। চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। লড়াই থেকে সরবেন বা স্পষ্ট জানিয়েছেন এই বিজেপি সাংসদ।
তৃণমূল থেকে একের পর নেতা এসেছেন বিজেপিতে, ফের দলে দলে ঘরেও ফিরে গিয়েছেন। আসানসোল উপনির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন নির্বাচনে দরজা খুলে দিলে সব ফাঁকা হয়ে যাবে। বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকে দেখা গিয়েছিল ঝাঁকে ঝাঁকে ঘরওয়াপসির ঘটনা। অর্জুন সিং, তাঁর ভাইপো সৌরভ সিং, প্রাক্তন বিধায়ক সুনীল সিং-সহ অনেকেই তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। অর্জুন সিং ছাড়া বাকি দুজন ইতিমধ্যে তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন। বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার পাশাপাশি বিজেপির বিক্ষুব্ধ অংশ একেবারেই বসে গিয়েছেন। গেরুয়া শিবেরর খবর, তাঁদের দলের সভা-সমাবেশেও দেখা যাচ্ছে না।
২০১৮ লোকসভা নির্বাচনের আগে ২০১৭-তে লালবাজার অভিযান করে রাজনৈতিক টেম্পো তুলেছিল বঙ্গবিজেপি। ওই দিনের আন্দোলনে ব্যাপক গন্ডগোল হয়েছিল। তারপর লাগাতার আন্দোলন, পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী দেওয়ার নাছোড়বান্দা মনোভাব সব মিলিয়ে বিজেপির লক্ষ্য ছিল ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন। পঞ্চায়েতে বাকি বিরোধী শক্তি সিপিএম-কংগ্রেসের থেকে ভাল ফল করে বিজেপি। তাছাড়া বহু আসনে তৃণমূলী সন্ত্রাসের জন্য প্রার্থী দিতে না পারার অভিযোগ তোলে বিজেপি। বহু আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় ঘাসফুল শিবিরের প্রার্থীরা। একইসঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্ব মূলত বিজেপিকে প্রধান প্রতিপক্ষ চিহ্নিত করে সংগঠনের অন্দরে ও বাইরে আক্রমণ শুরু করে। বিজেপি এই সমস্ত কিছুর ফায়দা তোলে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে। ২ থেকে ১৮ আসনে পৌঁছে যায় পদ্মশিবির।
এরাজ্য়ে আম আদমি পার্টি সদস্য় সংগ্রহ অভিযানের মাধ্যমে সংগঠন বিস্তারের কাজ শুরু করে দিয়েছে। আপ পঞ্চায়ত ভোটের মাধ্য়মে নিজেদের পরোখ করে নিতে চায়। তাই তৃণমূলস্তরে পরিকল্পনা করে বঙ্গ রাজনীতিতে নেমেছে আপ। গত কয়েক দিন ধরে এরাজ্যে বিজেপিতে পদত্যাগের হিরিক চলছে। তারই মধ্যে নিজেদের সতেজ রাখতে রাণী রাসমণি রোডে সোমবার সভা করে বিজেপি। এমন আবহে চলতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার বাংলায় আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
বিধানসভা নির্বাচনের পর এই প্রথম তিনি বাংলায় আসছেন। মূলত বঙ্গ বিজেপির সংগঠন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল শাহ। রাজনৈতিক মহলের মতে, সরকারি অনুষ্ঠান থাকলেও 'ছন্নছাড়া' বিজেপিকে ভোকাল টনিক দিতে পারেন অমিত শাহ। নবান্ন অভিযান বা বড় কোনও আন্দোলন নিয়ে আলোচনাও হতে পারে বলে সূত্রের খবর। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এখন থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের রণকৌশল না ঠিক করলে লোকসভা নির্বাচনে ভুগতে হবে বিজেপিকে।