BJP: জ্বালানির উপর ভ্যাট কমানোর দাবিতে বিজেপির মিছিল। পুলিশি অনুমতি ছাড়াই এই মিছিলের আয়োজন। অপ্রিতিকর পরিস্থিতি এড়াতে গার্ড রেল দিয়ে বিজেপির সদর দফতর আটকালো পুলিশ। তারপরেও মিছিলের প্রস্তুতি তুঙ্গে। পুলিশি এই সক্রিয়তাকে তোপ দাগেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। মিছিল আয়োজনের পুরোভাগে বিজেপির দুই সাংসদ জগন্নাথ সরকার এবং দেবশ্রী চৌধুরী।
বিজেপির রাজ্য অফিসের সামনে দলের নেতৃত্বের সঙ্গে পুলিশ কর্তাদের একপ্রস্থ বচসার দৃশ্য চোখে পড়েছে। পুলিশের মন্তব্য, 'এই অতিমারি পরিবেশে কোনওভাবেই তারা মিছিল বের হতে দেবে না।' বিজেপি নেতৃত্বের পাল্টা, 'দরকার হলে পুলিশ আইনি পথে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু মিছিল তারা করবেই।' বিজেপি দফতরের বাইরে মিছিলে যোগদানে উপস্থিত দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী, জয়প্রকাশ মজুমদার-সহ অন্য রাজ্য নেতৃত্ব।
নিজের বক্তব্যে শুভেন্দু বলেন, 'জ্বালানির দাম আরও কমাতে আমরা পথে নেমেছি। বিজেপি শাসিত সব রাজ্য ভাগের ভ্যাট কমিয়েছে। কিন্তু জ্বালানির দাম কমাতে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী রাস্তায় হাঁটলেও, এখন ভাগের কর কমাচ্ছেন না। বাংলার মেয়ে এখনও ঘুমাচ্ছেন। আমরা আইন ভাঙতে আসিনি, আমরা পেট্রোল- ডিজেলের দাম কমানোর দাবি নিয়ে এসেছি।'
বিজেপিকে যত মারবে, বিজেপি তত বাড়বে। এভাবেও সরব হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তার বার্তা, 'মাননীয়া আপনি ঘুম ভাঙুন। কেন্দ্রের মতো, আপনিও জ্বালানির উপর থাকা কর কমান।'
শুভেন্দু আরও বলেন, 'বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, তার প্রতিবাদ। উৎসব-পুজোগুলো বাদ দিয়ে পথে নামবে দল।' এই মিছিলে বক্তব্য রাখেন দিলীপ ঘোষ। তার প্রশ্ন, 'কেন রাজ্য দাম কমাচ্ছে না। আমরা আজ পথে নেমেছি দিদিমনির ঘুম ভাঙাতে। কীভাবে প্রশাসন চালাতে হয় মোদিজির থেকে শিখুন মুখ্যমন্ত্রী। দিদিমনি বলেছিলেন আজীবন বাংলার মানুষকে ফ্রি রেশন দেবেন। যেই কেন্দ্র আপদকালীন রেশন ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছে, দিদির দল থেকে চিঠি লিখে সেই রেশন আরও ৬ মাস বাড়ানোর আবেদন করেছে।'
দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, 'দিদিমনির কানে যে পর্দা পড়েছে, সেই পর্দা ভেদ করে আমাদের আওয়াজ পৌঁছতে এই কর্মসুচি।' তিনি বলেন, 'আপনি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে পেট্রোল - ডিজেলের দাম কমাতে বলেছিলেন। উনি কমিয়েছে, এবার আপনি কমান! আপনি কথায় কথায় বলেন এগিয়ে বাংলা। রাজ্যের অন্য সব রাজ্য ভাগের কর কমিয়ে দিয়েছে। আপনি কমাচ্ছেন না কেন? আসলে কাটমানিতে এগিয়ে বাংলা।'
এদিন পুলিশি সক্রিয়তা নিয়ে তোপ দাগেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, 'পুলিশ আজকে বলছে অতিমারী আবহে মিছিলের অনুমতি দেওয়া হবে না। কিন্তু কাল কী হল? এক তৃণমূল নেতার জন্মদিনে খোকাবাবু সেজেগুজে বেরিয়ে পড়লেন। দিদিমনি আগে গুন্ডা কন্ট্রোল করতেন। এখন করোনা কন্ট্রোল করেন। কীভাবে? তৃণমূলের কর্মসুচিতে উনি করোনা আটকে দেন আর বিজেপির কর্মসুচিতে করোনা ছড়িয়ে দেন। পুলিশ দলদাসে পরিণত হয়েছে।'
দলের কর্মী- সমর্থকরা আগামী দিনে পেট্রোল পাম্পে অবস্থান করে প্রতীকী ধর্না করব। এদিন জানান বালুরঘাটের সাংসদ। এমনকি, আগামী দিনে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে পথে নামব। সোমবার কর্মসুচি থেকে হুঁশিয়ারি দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি।
তৃণমূলের নির্বাচনী স্লোগান 'বাংলার গর্ব'কে কটাক্ষ করে এদিন বাংলার গর্ত সম্বোধন করেন তিনি। রাজ্যের পথের বেহাল দশা নিয়ে এই মন্তব্য তার। সুকান্ত মজুমদারের দাবি, 'বিজেপি শৃঙ্খলাপরায়ন দল। তাই কোনও কর্মী- সমর্থক শৃঙ্খলা ভাঙবেন না। শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়েই আমরা মিছিল এগিয়ে নিয়ে যাব। পুলিশ প্রয়োজনে আমাদের গ্রেফতার করুক। কিন্তু মিছিল এগোবে।'
এদিকে, বিজেপির মুরলিধর সেন লেনের অফিসের সামনে ধুন্ধুমার। চারদিক আটকে ব্যারিকেড দিয়েছে পুলিশ। বন্ধ কলেজ স্ট্রিট, প্রেসিডেন্সির দিকে রাস্তা এবং সেন্ট্রাল এভেনিউয়ের দিকে রাস্তা। সেই বজ্র আঁটুনি গলে বিজেপি কর্মী - সমর্থকরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়েছেন। প্রতীকী প্রতিবাদ হিসাবে রাজ্য অফিসের সামনেই আগুন জ্বেলে স্লোগানিং করে তারা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন