Advertisment

বিজেপিকে হারিয়ে তৃণমূলকে স্বস্তি দিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী

'আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। জিতেছি। দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। দিলীপ ঘোষ ও বিজেপিকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে।'

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
mamata banerjee, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।

বাংলায় মমতা ম্যাজিক অব্যাহত। তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফল অন্তত সেই আভাসই দিচ্ছে। কিন্তু, দলীয়ভাবে এই জয়ের নেপথ্য নায়ক তৃণমূলের দুই তরুণতুর্কি নেতা। শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি কালিয়াগঞ্জ ও খড়গপুরে প্রথমবারের জন্য জয় ছিনিয়ে আনতে আস্থাভাজন নেতা শুভেন্দুকেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। অন্যদিকে, করিমপুরের দায়িত্বে ছিলেন 'কাজের ছেলে' হিসাবে পরিচিত ডোমজুরের বিধায়ক তথা বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট যুদ্ধে বাজিমাত করে দলনেত্রীর মুখে হাসি ফোটালেন এই দুই নবীন নেতাই।

Advertisment

একদা 'নন্দীগ্রামের নায়ক' শুভেন্দু অধিকারী বরাবরই তৃণমূলে বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকেন। অনেকেই বলে থাকেন, অধিকারী পরিবারের এই সন্তান সংগঠন তৈরিতে বিশেষ প্রতিভা সম্পন্ন এবং প্রশআসনিক দক্ষতাও উল্লেখযোগ্য। সেই শুভেন্দুকেই তিন কেন্দ্রের মধ্যে 'সবথেকে কঠিন' কালিয়াগঞ্জ এবং সম্মানের আসন 'খড়গপুর সদরে'র দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আর সেই দায়িত্ব পালনে একশ শতাংশ সফল শুভেন্দু। এদিন ফল প্রকাশ পেতেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে তিনি বলেন, "বিরাট জয়। আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। জিতেছি। দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল।" কিন্তু লোকসভার থেকে কোথায় পার্থক্য গড়ে দিল এই ভোট? শুভেন্দুর জবাব, 'দিলীপ ঘোষ ও বিজেপিকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রত্যেক ভাষাভাষির মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। মিথ্যা কথা বলে রাজনীতি করলে তা বেশিদিন চলে না। মানুষ বোকা নয়।'

আরও পড়ুন- বিজেপি কেন তিন আসনেই হারল? মুখ খুললেন দিলীপ ঘোষ

publive-image অলঙ্করণ - অভিজিৎ বিশ্বাস

খড়গপুর আসনটি ছিল তৃণমূল ও বিজেপির কাছে সম্মান রক্ষার লড়াই। দলের জন্মলগ্ন থেকে কখনও এই আসনটি জেতেনি তৃণমূল। ২০১৬ সালে এই কেন্দ্রে পদ্ম পাপড়ি মেলেছিল, বিধায়ক হয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। এর আগে একটানা কংগ্রেসের জ্ঞানসিং সোহন পাল জয়ী হতেন এখান থেকে। সদস্যসমাপ্ত লোকসভাতে নির্বাচনেও বিজেপির জয়ের ধারাই অব্যাহত ছিল। লোকসভা ভোটের নিরিখে এই বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ৪৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী। ফলে খড়গপুরে উপনির্বাচন ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জ।

আরও পড়ুন- ‘পিকে ম্যাজিক’? একশোয় একশো তৃণমূল

এই চ্যালেঞ্জের মোকবিলা করতে গত জুন মাস থেকে খড়গপুরের ময়দানে নামেন শুভেন্দু। নিজের হাতে কৌশল সাজিয়ে স্থানীয় নেতাকে প্রার্থী করে এগিয়ে দিয়েছেন তিনি। গোষ্ঠীকোন্দল মিটিয়ে পোক্ত করেছেন দলীয় সংগঠন। প্রচারে তৃণমূলের আশ্বাস ছিল, ১৪ মাসেই উন্নয়ন হবে। অন্যদিকে, সাংসদ দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে রেল-সহ নানা কাজ বাস্তবায়িত না হওয়ায় মানুষের অসন্তোষ দানা বেঁধেছিল। যার ছাপ ইভিএমে পড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি অ-বাঙালি নানা ভাষাভাষির মানুষও আস্থা রেখেছেন রাজ্যের শাসক দলের উপরই। আর তাতেই কেল্লা ফতে।

আরও পড়ুন- খড়গপুরে ঐতিহাসিক জয় তৃণমূলের, প্রশ্নের মুখে দিলীপ ঘোষের নেতৃত্ব

তবে, কালিয়াগঞ্জের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। এই বিধানসভা কেন্দ্রও বরাবরই কংগ্রেসের দখলে ছিল এবং তৃণমূল এই আসনটিও কখনও জেতেনি। ২০১৬-তেও এখানে শক্ত ছিল হাতের মুঠো। কিন্তু, লোকসভায় এই কেন্দ্রে এগিয়ে যান বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী। ব্যবধান ছিল প্রায় ৫৭ হাজার ভোটের। সেই কেন্দ্রেই বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীলাভ হল তৃণমূলের। ঘাসফুল প্রার্থীর জয়ের ব্যবধান ২,৩০৪ ভোট। ভোট পুনরুদ্ধারের পাশপাশি বেড়েছে ভোটের শতাংশ। সীমান্তের এই কেন্দ্রে হিন্দু ভোট মেরুকরণের লক্ষ্যে এনআরসির প্রচার করেছিল গেরুয়া শিবির। আর তাতেই পাশা বদলে যায়। মানুষ ভরসা করতে শুরু করেছেন মমতাকে। সেই ব্যাখ্যাই উঠে এল 'নায়ক' শুভেন্দুর কথায়। রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী ও তৃণমূলের উত্তর দিনাজপুরের পর্যবেক্ষকের দাবি, 'মমতাদি বলেছেন, এনআরসি হবে না। আমরা বলেছি, তৃণমূলকে ১৪ মাসের সময় দিয়ে আস্থা রাখতে। আর, ওরা বলেছে এনআরসি হবেই। ভিটে হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত মানুষ। জনসংযোগ না থাকলে এসব বোঝা যায় না। ফল তাই আমাদের পক্ষে গিয়েছে।'

আরও পড়ুন- বিজেপির ঔদ্ধত্যের রাজনীতি পরাজিত হয়েছে: ‘বিজয়িনী’ মমতা

অন্যদিকে, করিমপুরে দায়িত্বে ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। মাস ছয়েক আগে সেচমন্ত্রী থেকে তাঁকে সরিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্বে আনেন মমতা। বাড়ানো হয় তাঁর সাংগঠনিক দায়-দায়িত্ব। লোকসভায় করিমপুরে তৃণমূল জিতলেও বিজেপি মাথাচারা দিচ্ছিল। মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন রাজীব। যার ফল মিলেছে হাতে নাতে। জোড়াফুল জিতল হাসতে হাসতে। এর কৃতিত্ব অবশ্যই নদিয়ায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাপ্য।

আরও পড়ুন- ‘তৃণমূল না এনআরসি-র কাছে হেরে গেলাম’

আরেক সীমান্ত কেন্দ্র করিমপুরে সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। লোকসভা ভোটে এখানে দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি। কিন্তু, তারপর থেকে হিন্দু ভোট একত্রিত করতে মাঠে নামে গেরুয়া শিবর। আর সেই পদক্ষেপই ম্লান হয়ে যায় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালে। মাটি কামড়ে নীরবে কাজ চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। ফল মিলেছে হাতেনাতে। রাজীব বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কথায়, 'বিজেপি উন্নয়নের কথা বলেনি। রুটি, বস্ত্র ও আশ্রয় নিয়ে কিছু প্রতিশ্রুতি দেয়নি। উল্টোদিকে রাজ্য সরকারের উন্নয়ন চোখে দেখেছে মানুষ। সুবিধাবাদী কংগ্রেস-সিপিএমের জোটকেও দেখেছেন ভোটাররা। কাকে তাঁরা বিশ্বাস করেন মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন।'

tmc west bengal politics
Advertisment