ঘটা করে চুক্তি হলেও সেই চুক্তি স্বস্তি দিলো না প্রশাসনকে। ভাঙড়ে পঞ্চায়েত এর বোর্ড গঠন করতে আতঙ্কে প্রশাসন । তাই আগে ভাগেই বিতর্কিত বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকার পোলেরহাট ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন মুলতুবি করে দিলো প্রশাসন।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ভাঙড়ের বিতর্কিত বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকার পোলেরহাট ২ গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল না জমি কমিটি সমর্থিত নির্দল প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে তা নিয়ে জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে দুই শিবিরের মধ্যে। বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে ।
পরিস্থিতি যা তাতে আদৌ পঞ্চায়েতের গঠন কতটা স্বাভাবিকভাবে হবে তা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়ে ছিল। এমনিতে ভাঙ্গড়ের বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে ভাঙ্গড়ের পোলেরহাট ২ এলাকা জুড়ে লাগাতার সংঘর্ষ ও খুনোখুনি লেগে রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন নিয়ে বড় গোলমাল ও রক্তপাতের আশঙ্কা করছে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি অংশ। প্রশাসনও যথেষ্ট চিন্তিত। কারণ, ভাঙড়ের পোলেরহাট ২ এলাকায় জমি কমিটির দাপটে কার্যত তৃণমূল নেতৃত্ব কোণঠাসা ।
পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আগামী ২০ তারিখ পোলেরহাট ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের তারিখ নির্ধারিত ছিল। কিন্তু পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে আবারও অগ্নিগর্ভ হতে পারে ভাঙড় সেই আশঙ্কায় পোলেরহাট ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের কাজ পাল্টা বিজ্ঞপ্তি জারি করে আপাতত মুলতুবি রাখল ব্লক প্রশাসন। এ বিষয়ে ভাঙড় ২ এর বিডিও কৌশিক কুমার মাইতি বলেন, ‘আইন শৃঙ্খলা জনিত কিছু সমস্যা থাকার জন্য ২০ তারিখ বোর্ড গঠন স্থগিত রাখা হয়েছে পোলেরহাট ২ এ।‘
পোলেরহাট ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬ টি আসনের মধ্যে ১১ টি তে হাকিমুলসহ অন্যান্য তৃণমূল প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। অন্য দিকে জমি কমিটির সমর্থনে আছে ৫ জন নির্দল প্রার্থী। সেক্ষেত্রে বিনা বাধায় পঞ্চায়েত এর দখল আরাবুল-হাকিমুল ইসলাম দের থাকার কথা। যদিও এ বিষয়ে জমি কমিটির নেতা মির্জা হাসানের দাবি চারজন জয়ী তৃণমূল প্রার্থী দল ছেড়ে নির্দল হয়ে জমি কমিটির প্রার্থীদের সমর্থন করবে। ফলে ৯- ৭ এর ব্যবধানে অনায়াসেই বোর্ড গঠন করবে নির্দল প্রার্থীরা। এ বিষয়ে পাল্টা পোলেরহাট ২ এর প্রাক্তন তৃণমূল প্রধান হাকিমুল ইসলাম বলেন, ‘জমি কমিটির লোকেরা আমাদের জয়ী প্রার্থীদের বাড়িতে বারে বারে হামলা করছে। বিশ্বজিত শীল, মোফিজুল, মোসলেম সহ ১১ জন সদস্য ওদের ভয়ে বাড়ি ছাড়া। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি।‘
জমি কমিটির বিজয়ী প্রার্থী ছালেহার বিবি বলেন, ‘আরাবুল গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত চার মাসে এলাকায় একটাও বোমা ফাটেনি, গুলি চলেনি, রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ হয়নি। তারপরও পুলিশ শাসকদলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে বোর্ড গঠন স্থগিত রাখলো। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি।‘এ বিষয়ে বারুইপুর জেলা পুলিশের সুপার অরিজিত সিংহ বলেন, ‘পরিস্থিতির ওপর আমদের নজর আছে।‘
উল্লেখ্য, ভাঙড়ের বিদ্যুৎ প্রকল্পের জট কাটাতে এবং এলাকায় শান্তি ফেরাতে প্রশাসনের পক্ষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে বিদ্যুৎ প্রকল্প সহ ক্ষতিপূরণ এবং এলাকায় উন্নয়নের জন্য দুই পক্ষই চুক্তি স্বাক্ষর করে। তার পর বিনা বাধায় পুলিশ এবং প্রশাসনিক কর্তারা এলাকায় গিয়ে বিদ্যুৎ প্রকল্পের গেট খুলে কাজ শুরু করে এবং এলাকায় মানুষের মধ্যে আর্থিক সাহায্য ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু হয়। অন্তহীন যুদ্ধ থেকে এলাকায় ফেরে শান্তির ছবি। এখন পঞ্চায়েতের দখল ঘিরে নতুন করে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায়। যা আবারও অগ্নিগর্ভ চেহারা নিতে পারে বলে মনে করছেন প্রশাসনের একাংশ।