ফিরোজ আহমেদ, ভাঙড়
ভাঙড় আন্দোলনের নেতা অলীক চক্রবর্তীকে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিলেন বারুইপুর মহকুমা আদালতের বিচারক। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুবনেশ্বর থেকে গ্রেফতার করা হয় ভাঙড়ে জমি কমিটির মুখপাত্র অলীক চক্রবর্তীকে। ট্রানজিট রিমান্ডে এ রাজ্যে নিয়ে এসে তাঁকে শনিবার বারুইপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ ইউএপিএ-তে আগেই মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এবার ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ৩০২, আর্মস অ্যাক্ট ২৫, ২৭ এক্সপ্লোসিভ অ্যাক্টের তিন চারটি মামলা রুজু করা হয়েছে।
কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে নিয়ে আসা হয় অলীককে। আদালত চত্বরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়। সকাল থেকেই আদালত চত্বরে ভিড় করেন অলীক চক্রবর্তীর অনুগামীরা।
অন্য়দিকে, অলীকের গ্রেফতারির দিনই বারুইপুর মহকুমা আদালত থেকে জামিন পান ভাঙড় কান্ডে ধৃত মজদুরক্রান্তি পরিষদের অমিতাভ ভট্টাচার্যসহ ভাঙড় সংহতি কমিটির শঙ্কর দাস ও বিশ্বজিৎ হাজরা। এর পাশাপাশি শনিবার যখন বারুইপুর মহকুমা আদালতে একদিকে অলীক চক্রবর্তীর শুনানি চলছে, ঠিক তখনই আদালতের অন্য এজলাস থেকে জামিন পেলেন তরুণ চিকিৎসক রাতুল। একজনের পুলিশ হেফাজত, অন্য় চারজনের জামিন বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
উল্লেখ্য, ভাঙড়ের আক্রান্ত গ্রামবাসীদের চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন রাতুল। পুলিশ সূত্রে খবর, গত ১৭ জানুয়ারি পুলিশের উপরে হামলা, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরসহ রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অলীক চক্রবর্তী এবং গণ আন্দোলনে জড়িত আরও অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সেই মামলায় রাতুলেরও নাম ছিল। গত ১০ এপ্রিল বেলঘড়িয়ার বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার হয়। আজ বারুইপুর মহকুমা আদালত থেকে রাতুল জামিনে মুক্তি পেয়েছেন, জানিয়েছেন জমি কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মির্জা হাসান। এদিন মির্জা বলেন, "অলীক গ্রেফতার হয়েছে তাতে আমাদের পিছু হটার কোন কারণ নেই। এখন আমাদের ঘরে ঘরে একাধিক অলীক তৈরি আছে।" তিনি আরও বলেন, "এখন আর আমরা শাসক দলের দুষ্কৃতীদের ভয় পাই না, পুলিশকে রুখতে আমরা লাঠি কাটার কর্মসূচি নিয়েছি, সোমবার প্রতিটি গ্রামে লাঠি কাটা হবে।"
ভাঙড় আন্দোলনের 'নিউক্লিয়াস' অলীক চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করে গণ আন্দোলন দমন করা যাবে না, বারুইপুর আদালতে দাঁড়িয়ে তা ফের জানিয়ে দিলেন তিনি। এদিন তিনি স্পষ্ট বলেন, "আমাকে গ্রেফতার করে আন্দোলন দমনো যাবে না, আন্দোলন চলছে চলবে।" অলীকের এই বক্তব্যে আন্দোলন নতুন মাত্রা পেল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অন্যদিকে, ঠান্ডা মাথার অলীক গ্রেফতার হওয়ার ফলে নেতাহীন ভাঙড় আন্দোলন জঙ্গি চেহারা নিতে পারে বলে মনে করছে পুলিশের একাংশ।