ভাঙড়ের আন্দোলনের আগুন নিভে গেল প্রশাসনিক ভবনের ঠান্ডা ঘরে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের পর দেড় বছর ধরে চলা আন্দোলন শেষ বলে ঘোষণা করলেন অলীক চক্রবর্তী। চুক্তিপত্রে তিনি ছাড়াও সই করেছেন শর্মিষ্ঠা চৌধুরী। আন্দোলনকারীরা এবার বিজয় উৎসব করবেন বলেও জমি কমিটির তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাঁদের দাবি মানা হয়েছে। প্রশাসন বলছে, মঙ্গলবার থেকে কাজ শুরু হবে। অলীক বলছেন, দেরিতে হলেও রাজ্য সরকার সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক বলছেন, জট কেটে গিয়েছে। দু পক্ষের জয়ের অনুভব দেওয়ার পিছনে রয়েছে কয়েকটি কৌশল। স্থির হয়েছে, পরিবর্তিত প্রকল্পে পাওয়ার গ্রিড নয়, তৈরি হবে সাব স্টেশন। এবং ঠিক এখানেই জয়ের জায়গা দেখছেন অলীকরা।
সাব স্টেশনের জন্য এখন দুটি ৪০০ কেভি ও WBSETCL-এর দুটি ২২০ কেভি বিদ্যুৎ সংবহন লাইন নির্মিত হবে। WBSETCL-এর দুটির মধ্যে একটির কাজ হবে মাটির নিচ দিয়ে এবং একটির কাজ হবে মাটির উপর দিয়ে। মাটির উপর দিয়ে যে লাইনটি যাবে তার জন্য, এখন যে নির্মিত টাওয়ার রয়েছে, তার চেয়ে বড় একটি টাওয়ার বানাতে হবে।
এ ছাড়াও চুক্তিপত্রে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পরেই পাওয়ারগ্রিড বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত যাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রয়েছে, সেগুলিকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার কাজ শুরু হবে। এবং, পাওয়ারগ্রিড বিরোধীদের উপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ শুরু করবে।
চুক্তিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে ক্ষতিপূরণের বিষয়েও। যাঁরা জমির ক্ষতিপূরণ পাননি, তাঁরা তো বটেই, আন্দোলন করতে গিয়ে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁরাও ক্ষতিপূরণ পাবেন।
শনিবার আলিপুরে নব প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স হলে ভাঙড়ের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, আজ চূড়ান্ত মিটিং হয়েছে, ভাঙড়ের বিদ্যুৎ প্রকল্পের জট কেটে গিয়েছে। আগামী মঙ্গলবার থেকে কাজ শুরু হবে।
অন্য দিকে ভাঙড় আন্দোলনের নেতা অলীক চক্রবর্তী বলেন, দেরিতে হলেও রাজ্য সরকার আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য সদর্থক ভুমিকা নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা দাবি করছি, সরকার যেমন ভাঙড়ের ক্ষেত্রে সদার্থক ভুমিকা নিয়ে ঠিক তেমনই ভাবাদীঘি সহ অন্য সমস্যার ক্ষেত্রেও সদর্থক ভুমিকা নিয়ে সমস্যার সমাধান করুক। এদিন অলিক বলেন, ভাঙড়ের বিদ্যুৎ প্রকল্পের জট কেটে গিয়েছে, দুই পক্ষের মধ্যে একটা চুক্তি হয়েছে। এর পাশাপাশি ওখানে কাজ করা ও এলাকার মানুষের আর্থিক ক্ষতিপূরণ সহ অন্যান্য সহযোগিতা করার জন্য প্রশাসন ও জমি কমিটির মধ্য থেকে একটা কমিটি তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন, অলীকরা যেটাকে জয় বলে চালাতে চাইছে, সেটার কোনো মানে নেই
কোন পথে এলো ভাঙড় সমস্যার সমাধান, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাঙড় সমস্যার সমাধানের জন্য গ্রামের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা জন্য জেলা শাসক ওয়াই রত্নাকর রাওকে নির্দেশ দেন। সেই মত গত দুই মাস ধরে পর পর পাঁচটি বৈঠক করেন জেলা শাসক। এ বিষয়ে জেলা শাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, রাজ্য সরকারের সহযোগিতা এবং নির্দেশে আজ ভাঙড়ের বিদ্যুৎ প্রকল্পের জট কেটে গিয়েছে, এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে প্রশাসন তীক্ষ্ণ নজর রাখবে।
এদিনের বৈঠক শেষে নকশাল নেতা অলীক চক্রবর্তী সঙ্গে ভাঙড়ের আন্দোলনকারীরা প্রশাসনিক ভবনে আনন্দে গা ভাসান। এ বিষয়ে আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী শর্মিষ্ঠা চৌধুরী বলেন, আজ ভাঙড় আন্দোলনের সব থেকে বড় জয়, কাল রবিবার গ্রামে বিজয় উৎসব হবে।
এদিনের বৈঠক শেষে এক জমি কমিটির এক নেতা বলেন, আমরা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি তাই আর্থিক ক্ষতিপূরণ হিসাবে ২০ কোটি টাকা দাবি করেছিলাম কিন্তু প্রশাসন ১২ কোটি টাকা দিতে রাজি হয়েছে। অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তিসহ মৃতদের পরিবারকে বিশেষ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এছাড়া যাঁদের জমির উপর দিয়ে হাইটেনশন লাইন যাবে টাওয়ার বসানো হবেনা তাদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
এদিনের এই বৈঠকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন জেলা শাসক ওয়াই রত্নাকর রাও-সহ বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার অরিজিৎ সিনহা, নবান্নে স্পেশাল অফিসার শান্তনু বসু সহ বিদ্যুৎ দফতর আধিকারিক, পাওয়ার গ্রিড কর্তৃপক্ষর আধিকারিকরা। পাশাপাশি ভাঙড়ের আন্দোলনকারীদের মধ্যে ছিলেন অলীক চক্রবর্তী, শর্মিষ্ঠা চৌধুরী সহ ৫০ জনের প্রতিনিধি দল।
আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, প্রায় ১২ কোটি টাকা ওখানে ব্যয় করা হবে। এর মধ্যে শহীদ পরিবারের আর্থিক সাহায্য সহ আন্দোলনের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তিদের আর্থিক সাহায্য ছাড়াও রয়েছে খামারআইট গ্রামের জন্য স্পেশাল প্যাকেজ। প্রশাসনের দাবি, ওই বিপুল পরিমাণ টাকা এলাকার উন্নয়নের খাতে ব্যাবহার করা হবে। এ ব্যাপারে গ্রামভিত্তিক টাকার অঙ্ক কষা হবে। সেক্ষেত্রে খামারআইটকে প্রায় দেড় কোটি টাকা দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
Get all the Latest Bengali News and West Bengal News at Indian Express Bangla. You can also catch all the Politics News in Bangla by following us on Twitter and Facebook
Web Title:
'ভোটে অনাচার হলেই অপসারণ', রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া বার্তা নির্বাচন কমিশনের
'আমরাই খাওয়াব, বানিয়ে দেব ঘর', বাগবাজার বস্তিবাসীদের বরাভয় মমতার
মাথায় ক্ষতচিহ্ন, বাথটবে রক্তাক্ত পরিণীতি, প্রকাশ্যে 'দ্য গার্ল অন দ্য ট্রেন'-এর টিজার
মেয়েদের বিয়ের বয়স নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য, শিশুসুরক্ষা কমিশনের নোটিস কংগ্রেস নেতাকে
ধোনি, রায়না, বিরাট সবারই কন্যাসন্তান, 'এ তো ভবিষ্যতের মহিলা ক্রিকেট টিম', বলছেন অমিতাভ
১৬ জানুয়ারি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন! শতাব্দী রায়ের ফ্যান ক্লাবের পোস্ট ঘিরে জল্পনা
ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে দাবি শোভনের, 'ভিত্তিহীন' অভিযোগ বলে ওড়াল তৃণমূল