Advertisment

অশান্তির আশঙ্কায় হল না পোলেরহাট পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন

মে মাসে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল। ভাঙড় ২ নং ব্লকের ১০ টি গ্রাম পঞ্চায়েতেও ভোট হয়। ৯ টি পঞ্চায়েতে ইতিমধ্যে বোর্ড গঠন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পোলেরহাট ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতে হয় নি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

৬ মাসেও বোর্ড হল না পঞ্চায়েতের

নির্বাচনের ছ’মাস পরেও বোর্ড গঠন হল না একদা অশান্ত ভাঙড়ের পোলেরহাট ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের। কাদের দখলে থাকবে এই পঞ্চায়েত, এই নিয়ে অশান্তির আশঙ্কায় স্থগিত করে দেওয়া হয় বোর্ড গঠন। যার ফলে থমকে দাঁড়ায় পঞ্চায়েত এর কাজকর্ম। পঞ্চায়েতের কাজ ও এলাকার উন্নয়নের জন্য অবশেষে ওই পঞ্চায়েতে প্রশাসক বসালো রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তর।

Advertisment

গত মে মাসে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল। ভাঙড় ২ নং ব্লকের ১০ টি গ্রাম পঞ্চায়েতেও ভোট হয়। ৯ টি পঞ্চায়েতে ইতিমধ্যে বোর্ড গঠন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পোলেরহাট ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতে হয় নি। এই পঞ্চায়েত এবারও তৃণমূলের হাতে আসে। পঞ্চায়েতের ১৬ টি আসনের মধ্যে ১১ টি পায় তৃণমূল, এবং জমি জীবিকা বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির নির্দল প্রার্থীরা পান ৫ টি। এই পোলেরহাট-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনেই অবস্থিত নির্মীয়মাণ পাওয়ার গ্রিড প্রকল্প।

পুজোর আগে সব জায়গায় নতুন পঞ্চায়েত বোর্ড তৈরি হয়। সেই সময় এই পঞ্চায়েত গঠনের জন্য প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু পঞ্চায়েতের দখল নিয়ে তৃণমূল এবং জমি কমিটির মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়। আবারও অগ্নিগর্ভ চেহারা নিতে পারে ভাঙড়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, এই আশঙ্কায় পুলিশের পক্ষ থেকে পোলেরহাট ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনে আপত্তি তোলা হয়।

আরও পড়ুন: কলকাতা পুলিশের তত্ত্বাবধানে ভাঙড়ে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন

প্রশাসন সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে অবশেষে ভাঙড়ের পোলেরহাট-২ গ্রাম পঞ্চায়েত চালাতে বিডিও-র তত্ত্বাবধানে প্রশাসক বসানোর নির্দেশ দেয় রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তর। তার পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলাশাসকের নির্দেশে সেখানে ভাঙড়-২ ব্লক অফিসের এক আধিকারিককে পঞ্চায়েতের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই আধিকারিক পঞ্চায়েতের প্রতিদিনের কাজ চালাবেন। আগামী ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

উল্লেখ্য, ভাঙড়ের এই পোলেরহাট ২ নং অঞ্চলে নির্মীয়মান বিদ্যুৎ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দু'বছর অশান্ত ছিল ওই অঞ্চল। আন্দোলন, হরতাল, অবরোধ, মিছিল, মিটিং নিয়ে সরগরম ছিল ভাঙড়। কখনও আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্লোগান, তো কখনো পুলিশ-প্রশাসন, মায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবধি। সেই ভাঙড় আন্দোলন রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সময়ের নিয়ম মেনে স্তিমিত হতে শুরু করে আন্দোলন, আলোচনার টেবিলে বসেন প্রশাসনিক আধিকারিক ও জমি কমিটির নেতৃত্ব। আর্থিক সাহায্য সহ এলাকার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিতে আবারও শুরু হয় বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। যদিও আজও জমি কমিটি তাঁদের সংগঠন ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। এলাকায় তাঁদের বিরোধী শক্তিকে ঘেঁষতে দিতে নারাজ।

এদিকে, বোর্ড তৈরি না হওয়াতে এলাকায় পঞ্চায়েতের কাজও থমকে গিয়েছিল। জমি কমিটির নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যরা প্রশাসনের কাছে এ নিয়ে দরবার করেন। প্রশাসক বসানোর দাবিও জানান। শেষ পর্যন্ত সমস্ত স্তরে আলোচনার ভিত্তিতে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসন পোলেরহাট-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজ চালাতে প্রশাসক বসানোর জন্য পঞ্চায়েত দপ্তরকে চিঠি দেয়। তাতে সিলমোহর দেয় পঞ্চায়েত দপ্তর। জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, "পোলেরহাট-২ পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সমস্ত পরিষেবা ও বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চালু করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এখন আর কোনও অসুবিধা হবে না।"

আরও পড়ুন: ভাঙড়: টাকার অঙ্ক নিয়ে রফা করতে আলোচনা শুরু

এ বিষয়ে জমি কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মির্জা হাসান বলেন, "এই পঞ্চায়েতের ১১ জন মেম্বার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন, তাঁরা মানুষের রায় মেনে নেন নি, সুতরাং তাঁদের হাতে পঞ্চায়েত চালানোর ভার দেওয়া যাবে না। তাঁরা পঞ্চায়েতের দায়িত্ব পেলে এলাকার মানুষ পঞ্চায়েত পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। ফের এলাকা উত্তপ্ত হতে পারে । এই আশঙ্কায় প্রশাসক বসানোর দরবার করেছিলাম। প্রশাসক বসেছেন, আশা রাখি এলাকার উন্নয়ন হবে।"

এ বিষয়ে পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান এবং বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য আরাবুল পুত্র হাকিমুল ইসলাম বলেন, "এলাকার মানুষ পঞ্চায়েতের পরিষেবা পান, এটাই আমাদের কামনা।" এর পাশাপাশি তিনি রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।

west bengal politics power grid
Advertisment