ফিরোজ আহমেদ: সকালে নবান্নে ডাক পড়েছিল কাইজার আহমেদ, হবিবুর রহমানদের। বেলা গড়াতে বিডিওর ফোন পেয়েছিলেন মির্জা হাসানরা, নবান্নে হাজির হওয়ার। প্রথম পক্ষ নবান্নে পৌঁছে জানলেন বৈঠক বাতিল, দ্বিতীয় পক্ষ জানলেন রওনা হওয়ার আগেই। ভাঙড়ের তৃণমূল নেতৃত্ব ও পাওয়ার গ্রিড বিরোধী নেতৃত্ব, দু পক্ষকেই একদিনে হতাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত শনিবার আন্দোলনকারী গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলিপুরে জেলাশাসকের বৈঠকের পর সোমবার সকালে নবান্নে ডাক পড়ে ভাঙড়ের কয়েক জন তৃণমূল নেতার। প্রশাসন সূত্রের খবর, পাওয়ার গ্রিড নিয়ে জট কাটাতে জেলাশাসকের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠকের পর্যালোচনা করতে ভাঙড়ের কয়েক জন নেতাকে নবান্নে তলব করা হয়। এর মধ্যে ছিলেন ভাঙড় ১ নং ব্লকের সভাপতি কাইজার আহমেদ, ভাঙড় ২ নং ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অহিদুল ইসলাম, জেলা পরিষদ সদস্য নান্নু হোসেন এবং পোলেরহাট ২ নং অঞ্চলের তৃণমূল নেতা হবিবর রহমান বিশ্বাস। এক তৃণমূল নেতা বলেন, "বিডিও অফিস থেকে খবরপেয়েছিলাম ভাঙড় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান। খবর পেয়ে আমরা সকাল সকাল নবান্নে হাজির হই। দুপুর দুটো নাগাদ আমাদের জানানো হয় মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে প্রশাসনিক কাজে বেরিয়ে গিয়েছেন, মিটিং বাতিল।" খবর পেয়ে মুষড়ে পড়ে বাড়ি ফেরেন ভাঙড়ের তৃণমূল নেতৃত্ব।
অন্যদিকে এদিন দুপুর বারোটা নাগাদ জমি আন্দোলনের নেতা মির্জা হাসানকে ফোন করেন ভাঙড় ২ নং ব্লকের বিডিও কৌশিককুমার মাইতি। বিডিওর তরফ থেকে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আজই বৈঠকে বসতে চান। চিঠিপত্র ছাড়াই হঠাৎ বৈঠকে বসতে প্রথমে কিন্তু কিন্তু করছিলেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ডাকের গুরুত্ব ও সম্মানের কথা বিবেচনা করে তাঁরা বৈঠকে বসতে রাজিও হন। তড়িঘড়ি তৈরি হয়ে নতুনহাটে পাওয়ার গ্রিডের সামনে এসে হাজির হন আন্দোলনকারী গ্রামবাসীদের প্রতিনিধিরা। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন তাঁরা। দেড়টা নাগাদ আবার বিডিও ফোন করে তাঁদের জানান, বৈঠক বাতিল। এ ঘটনায় তাঁরা যে হতাশ, সে কথা গোপন করেননি জমি কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মোশারেফ হোসেন।
আরও পড়ুন, মৃত্যু হলেও পাওয়ারগ্রিড হতে দেব না, ভাঙড়ে জয়ের পর বললেন নির্দল প্রার্থী
সূত্রের খবর, গত শনিবার আলিপুরে জেলা শাসকের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের প্রায় দুঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়। বৈঠকে বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং এলাকার সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয় বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। এই বৈঠকে আন্দোলনকারীরা সমস্যা সমাধানের জন্য কয়েকটি শর্তের কথা জানান, একই সঙ্গে তোলেন কিছু অভাব অভিযোগের প্রসঙ্গও। এ নিয়ে বিশেষ আলোচনা করতেই সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী ভাঙড়ের দলীয় নেতৃত্বের কয়েকজনকে তলব করেন। এই বৈঠকে ভাঙড়ের কয়েক জন নেতার পাশাপাশি উপস্থিত থাকার কথা ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার তৃণমূল কংগ্রেস এর সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় ও ভাঙড়ের বিধায়ক তথা মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লারও ।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বর মাসে অগ্নিগর্ভ ভাঙড় কে শান্ত করতে এবং পাওয়ার গ্রিড এর জট কাটাতে ভাঙড়ের নেতৃত্ব দের নিয়ে নবান্নে বিশেষ বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকে যে সব জমির উপর দিয়ে পাওয়ার গ্রিডের হাইটেনশন লাইন গিয়েছে, সেই সব জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়। এর পাশাপাশি ভাঙড়ের নেতাদের ঐকবদ্ধ হয়ে কাজ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পরেও পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে শুরু করে বিভিন্ন দলীয় অনুষ্ঠানে অনৈক্যের ছবি ধরা পড়ে।