লোকসভা ভোটের বছরে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরাট চমক। বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কর্পুরী ঠাকুর মরণোত্তর ভারতরত্ন সম্মান প্রদানের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের। ১৯৭০ সালে প্রথম অকংগ্রেসী হিসেবে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন কর্পুরী ঠাকুর। তার আগে বিহারের শিক্ষামন্ত্রী, উপ-মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তাঁকে লালু প্রসাদ যাদব , রাম বিলাস পাসোয়ান , দেবেন্দ্র প্রসাদ যাদব এবং নীতীশ কুমারের মতো বিশিষ্ট নেতাদের পরামর্শদাতা বলেও বিবেচনা করা হয় । অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষদের জন্য তিনি আপোষহীন লড়াই চালিয়েছিলেন। আর সেই কারণে তিনি জননায়ক হিসাবে পরিচিত। অনগ্রসর শ্রেণী থেকে উঠে এসে দেশের রাজনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।
২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে, বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কার্পুরী ঠাকুরকে মরণোত্তর 'ভারতরত্ন' পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা হিন্দি বলয়ে বিজেপির প্রভাব বিস্তারের এক প্রচেষ্টা এমনই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। নীতিশের জাত শুমারির নিয়ে যখন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সওয়াল তুলেছেন খোদ রাহুল। এবং সেই সঙ্গে ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশ জুড়ে জাত শুমারির কথা ঘোষণাও করেন তিনি ঠিক সেই সময়তেই বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কার্পুরী ঠাকুরকে মরণোত্তর 'ভারতরত্ন' পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা মোদী সরকারের।
বিজেপি এখনও পর্যন্ত বিহারে প্রভাব দেখাতে পারেনি। সম্প্রতি, বিহার সরকার একটি জাত শুমারি চালিয়েছিল, জাত শুমারি অনুসারে 'ঠাকুর' অত্যন্ত অনগ্রসর শ্রেণীর (ইবিসি) অংশ। এই হিসাব অনুসারে, ইবিসি ৩৬ শতাংশ এবং ওবিসিগুলি রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ।
আরও পড়ুন : < Fake Certificate Racket: আরও এক বিরাট দুর্নীতি বাংলায়, হোমগার্ড এবং তৃণমূল নেতা জামাইবাবুর পর্দাফাঁস >
নীতীশ কুমার ও লালু প্রসাদ ঠাকুরকে ভারতরত্ন দিয়ে সম্মানিত করার দাবিও জানিয়ে আসছেন বহুদিন ধরে। কার্পুরী ঠাকুরের একজন ভক্ত নীতীশ কুমার, ইবিসি এবং অ-যাদব অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর একটি বড় অংশের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেই তিনি রাজনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছেন বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কর্পুরী ঠাকুরের ছেলে রামনাথ ঠাকুরকে রাজ্যসভার সদস্য করাও তাঁর কৌশলের একটি অংশ।
আরও পড়ুন : < Ayodhya Ram Mandir: প্রথম দিনেই রেকর্ড ভিড়, ৫ লাখ ভক্তকে সামলাতে দিশাহীন প্রশাসন, আসরে নামেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী >
বিহারের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে নীতীশ কুমারের দেখানো পথেই হাঁটতে চাইছে বিজেপি। সেই কারণেই বিজেপি বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে তার ভোটব্যাঙ্ককে ছিনিয়ে করার চেষ্টা করছে। এই কৌশলের অংশ হিসাবে, বিজেপি পিছিয়ে পড়া কোয়েরি সম্প্রদায়ের নেতা সম্রাট চৌধুরীকে রাজ্য সভাপতি হিসাবে নিযুক্ত করেছে। বিজেপি বিশ্বাস করে যে ঠাকুরকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া তাদের প্রচারকে আরও শক্তি দেবে। কেন্দ্র কার্পুরির নামে একটি পোস্টাল স্ট্যাম্প এবং মুদ্রা প্রকাশ করারও পরিকল্পনা করছে।
আরও পড়ুন : < Bharat Jodo Nyay Yatra: রাহুলকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বিরুদ্ধে অমিত শাহকে ‘নালিশ’ খাড়গের >
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেছেন, "যদিও সামাজিক ন্যায়বিচারের পথপ্রদর্শক জননায়ক কার্পুরী ঠাকুরকে ভারতরত্ন প্রদান করা মোদী সরকারের হতাশা ও ভণ্ডামিকে প্রকাশ করে, তবুও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস মরণোত্তর ভারতরত্ন পুরস্কারকে স্বাগত জানাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশব্যাপী জাত শুমারি করতে অস্বীকার করেছে কেন্দ্র। তা করলেই জননায়ক কার্পুরী ঠাকুরকে উপযুক্ত সম্মান প্রদান করা হত"।