বিজেপিতে যোগ দিলেন ভারতী ঘোষ। কানাঘুষো চলছিল দীর্ঘদিন ধরেই, সোমবার দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে মুকুল রায় এবং কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের উপস্থিতিতে পদ্ম শিবিরে যোগ দেন ভারতী। একদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতি ঘনিষ্ঠ এই আইপিএস অফিসার কয়েকমাস আগেই চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছিলেন। এক সময় মমতা প্রশাসনের অতি বিশ্বাসভাজন অফিসার হওয়া সত্ত্বেও পরবর্তীকালে ভারতীর প্রতি বিরূপ হন মুখ্যমন্ত্রী। আর এরপরই চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন রাষ্ট্রপুঞ্জে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অফিসার ভারতী ঘোষ। এই মুহূর্তে ভারতী ঘোষ ও তাঁর স্বামী এম. ভি. রাজুর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে পুলিশের খাতায়। অতীতে তাঁদের বাড়িতেও হানা দিয়েছে সিআইডি।
আরও পড়ুন: “এখনই রাষ্ট্রপতি শাসন হবে না রাজ্যে”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একদা 'জঙ্গল মহলের মা' বলে উল্লেখ করা ভারতী এদিন বিজেপি-তে যোগ গিয়েই পূর্বের অবস্থান বদল করেছেন। পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নিয়েই তিনি সটান নিশানা করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। 'দেশ বাঁচাতে' রবিবার রাত থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'সত্যাগ্রহ', আসলে 'অসত্যাগ্রহ' বলেও মন্তব্য করেছেন ভারতী। কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে 'বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অফিসার'-এর যে স্বীকৃতি মমতা দিয়েছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ভারতী ঘোষ।
আরও পড়ুন: “তৃণমূল আমাকে ভয় পেয়ে আটকেছে”
জঙ্গলমহলে মাওবাদী দমনে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন ভারতী ঘোষ, বাহিনীর অন্দরে কান পাতলে আজও এমনটাই শোনা যায়। কিন্তু, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগের তীরও বরাবর বিদ্ধ করেছে এই আইপিএস-কে। তাঁদের অভিযোগ ছিল, শাসক দলের হয়ে অনৈতিক কাজ করতেন এই অফিসার। সবং-এর বিধায়ক এবং তৎকালীন কংগ্রেস নেতা মানস ভূঁইয়া বহুবার এই ধরনের অভিযোগ করেছেন ভারতীর বিরুদ্ধে। তবে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের হয়ে কাজ করার দায়ে বিরোধীদের চোখে অভিযুক্ত হলেও পরবর্তীকালে এই তৃণমূলেরই চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন ভারতী।
শোনা যায়, একদা মমতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকলেও 'রাজনৈতিক কারণে'ই পরবর্তীকালে মমতার রোষের মুখে পড়েন ভারতী ঘোষ। ভারতীর জেলায় গেরুয়া ব্রিগেডের বাড়বাড়ন্তই না কী রাজ্য প্রশাসনের অপছন্দের তালিকায় ফেলে দেয় তাঁকে। এর পাশাপাশি, তিনি মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলেও শোনা যায়। তৃণমূল ছেড়ে মুকুল রায় বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর, ভারতীর সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে বলে মনে করে ওয়াকিবহাল মহল।
আরও পড়ুন- কে এই রাজীব কুমার? কী অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে?
উল্লেখ্য, চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরই ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে তোলাবাজির মামলা দায়ের করে পুলিশ। এরপর বেশ কিছু দিন লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুলিশ সুপার। কিন্তু গত বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে ভারতীর একটি অডিও বার্তা প্রকাশ্যে আসে। ওই অডিও ক্লিপে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আমি পলাতক নই, শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, আমায় যেন গ্রেফতার না করা হয়। আমি পলাতক, এরকম একটা ধারণা তৈরি করে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে”। ভারতী ঘোষ যে বিজেপি-তে যোগ দেবেন, এমন জল্পনা জারি ছিল বেশ কয়েক মাস ধরেই। শেষ পর্যন্ত সেই মুকুল রায়ের হাত ধরেই পদ্ম পতাকা হাতে নিলেন একদা খাকি উর্দিধারী জাঁদরেল এই আইপিএস।