একদিকে জোট বাঁধার চেষ্টায় দেশের বিরোধী দলগুলো। অন্যদিকে গেরুয়া জোটের অন্দরেই কৌশলে বেসুরো শরিক। প্রকাশ্যে পাত্তা না দিলেও পদ্ম নেতৃত্বের কপালে বাড়ছে চিন্তার ভাঁজ।
নজরে ২০২৪। ইতিমধ্যেই জোট গড়ে মোদী সরকারকে উৎখাতে উদ্যোগী বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। বাদল অধিবেশনে সংসদের অন্দরের সরকার বিরোধীতায় বিরোধী ঐক্যের ছাপ লক্ষ্য করা গিয়েছে। তার বাইরেও রণকৌশল নির্ধারণে বৈঠকে বসেছেন বিরোধী নেতৃত্বরা। বিরোধী জোটই বিজেপিকে সরাতে একমাত্র বিকল্প বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। অবশ্যই জোটের সলতে পাকাতে কাঠবিড়ালির ভূমিকায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সব ধরণের সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ ভুলে দেশ বাঁচানোর ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু এরই মধ্যে বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে বিরোধী জোটের মুখ কে? যদিও ইতিমধ্যেই এর জবাব দিয়েছেন মমতা। সাফ জানিয়েছেন, আগে লক্ষ্য স্থির করে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই, পরে নেতৃত্বের মুখ নির্ধারণ করা হবে। তিনি নিজে যে প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে নেই বিরোধী জোটের নেতাদের সেই বার্তাও দিয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের তরফে 'দেশের পরবর্তী বাঙালি প্রধানমন্ত্রী চাই' বলে প্রচার চলেছে। জোড়া-ফুলে কার্যত চাপ বাড়িয়ে দলনেত্রীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ প্রস্তুত করছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এরই মধ্যে দেশের আরও একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও দেশ শাসনের যোগ্য বলে তুলে ধরতে চাইছে খোদ এনডিএ-র শরিক দল। কেন্দ্রের বিজেপিকে চাপে ফেলতেই নীতীশ কুমারের জেডিইউ-এর এই প্রয়াস বলে মনে করা হচ্ছে।
দীর্ঘদিনের এনডিএ শরিক হলেও জেডিইউ-এর সঙ্গে গেরুয়া দলের সম্পর্ক যে খুব মসৃণ তা নয়। দ্বিতীয় মোদী মন্ত্রিসভায় প্রথম দু'বছর কোনও পদ দেওয়া হয়নি বিহারের এই শরিক দলকে। গত মাসে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ হলে অবশ্য সেখানে ঠাঁই হয় নীতীশের দলের সাংসদদের। যদিও তার আগে সাংসদ সংখ্যার বিচারে মন্ত্রিসভায় জায়গা পাকা করতে চাপ বাড়িয়েছিল বিহারের এই শাসক দলটি।
রবিবার ছিল জেডিইউ-য়ের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। সেখানেই বিভিন্ন বিষয়ে এনডিএ-তে সুষ্ঠু আলোচনার জন্য বাজপেয়ী আমলের মতো সমন্বয় রক্ষা কমিটি গঠনের দাবি তোলা হয়। এছাড়াও শাসক জোটের মধ্যে থেকে নেতৃত্বের পরস্পর বিরোধী মন্তব্য না করার কথা বলা হয়েছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে জেডিইউ-র জাতীয় মুখপাত্র কেসি ত্যাগী বলেছেন, "নীতীশজি প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে নেই, কিন্তু তাঁর মধ্যে দেশ শাসনের নেতৃত্বদানের সব ক্ষমতা রয়েছে। এই বিষয়টি দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে প্রস্তাব আকারে পাশ করানো হয়েছে।"
কেন হঠাৎ এই প্রস্তাব পাশ? কেসি ত্যাগীর কথায়, "নীতীশজির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দাবি নানা মহল থেকে বিভিন্ন সময় উঠেছে। তাই প্রস্তাব পাশ করিয়ে তার রেকর্ড রাখা হল।" রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, এই প্রস্তাব পাশ করিয়ে কার্যত প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বকেই চ্যালেঞ্জ জানাল এই এনডিএ শরিক। নরেন্দ্র মোদী যে একমাত্র যোগ্য তা মেনে নিতে রাজি নয় জেডিইউ, বিজেপির বন্ধু দল মনে করে এনডিএ-র মধ্যেই নেতৃত্বের প্রশ্নে মোদীর বিকল্প প্রস্তুত রয়েছে। কৌশলে শরিকদের যোগ্য সম্মান ও অধিকার আদায়ের বিষয়টি এ ভাবেই নিশ্চিত করতে চাইছে নীতীশ কুমারের দল।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন