মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল: রাজ্যসভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত বিল পেশ করা প্রসঙ্গে আম আদমি পার্টি বলেছে যে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান বিচারপতির প্রতিও কোন আস্থা নেই। অন্যদিকে বিরোধী 'ইণ্ডিয়া' জোট বলেছে- 'এই বিল পেশ সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা'।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ) রাজ্যসভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নিয়োগ সংক্রান্ত বিল উত্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছে। এই বিল এনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) নির্বাচনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া 'স্বতন্ত্র নির্বাচন বোর্ড' সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে।
আপ বলেছে যে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার উদ্দেশ্যে, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে সিইসি এবং ইসিকে একটি স্বাধীন নির্বাচন বোর্ডের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা এবং ভারতের প্রধান বিচারপতিকে (সিজেআই) এই বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বিলটি এনে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে একেবারে 'উল্টে' দিয়েছে
বিলের প্রস্তাবে বলা হয়েছে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত একজন মন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে আম আদমি পার্টির সিনিয়র নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, 'দেশের মন্ত্রিসভা ও প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রধান বিচারপতির ওপর প্রথমবারের মতো এত বড় অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। ভারতের সংসদীয় ইতিহাসে এটা 'কালো হরফে' লেখা থাকবে। একইভাবে, সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে দিল্লি সরকারের হাতেই পরিষেবা সম্পর্কিত ক্ষমতা থাকবে, কিন্তু বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার তাও বাতিল করে দিয়েছে'।
ভরদ্বাজ আরও বলেন, 'কেন্দ্রীয় সরকার একটি অধ্যাদেশ এনে দিল্লি পরিষেবা সংক্রান্ত সুপ্রিম নির্দেশ বাতিল করেছিল। একই ভাবে প্রধানমন্ত্রী ফের সুপ্রিম কোর্টের প্রতি তাঁর অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও বলেন, "গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতার সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির একটি প্যানেলের সুপারিশ করে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তও বাতিল করা হয়েছে। প্রবীণ এএপি নেতা ভরদ্বাজ বলেছেন যে 'আজ দেশের সংসদের দুর্ভাগ্য যে প্রধানমন্ত্রী সেই প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বাস করেন না, যে প্রতিষ্ঠানকে সারা দেশ সম্মানের চোখে দেখে'।
সুপ্রিম কোর্ট ২০২৩ সালের মার্চে এক আদেশে বলেছিল যে প্রধানমন্ত্রী, ভারতের প্রধান বিচারপতি এবং বিরোধী দলের নেতার পরামর্শে রাষ্ট্রপতির সুপারিশ মেনে সিইসি নিয়োগ করা উচিত। মোদী সরকারের এই বিলের বিরোধীতায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল টুইট বার্তায় লিখেছেন- 'এই বিলের মাধ্যমে সরকার সুপ্রিম কোর্টের আরেকটি সিদ্ধান্তকে বদলাতে চলেছেন। কেজরিওয়াল বলেছেন প্রধানমন্ত্রী দেশের সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকেও মানেন না। তাঁর বার্তাই তা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সুপ্রিম কোর্টের যে আদেশই তিনি পছন্দ করেন না, তিনি সংসদে আইন এনে তা বাতিল করতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী যদি প্রকাশ্যে সুপ্রিম কোর্টের কথা না মানেন, তাহলে সেটা দেশের পক্ষে 'বিপজ্জনক'। তিনি আরও বলেন, 'সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ উল্টে দিয়ে মোদীজি এমন একটি কমিটি করেছেন, যেটি তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তারা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনার করতে পারবে। এতে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই থাকবে'।
রাজ্যসভায় আরও একটি অধ্যাদেশ পেশ করল কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট চলতি বছরের মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্টের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই অধ্যাদেশ আনল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় সরকারের এই অধ্যাদেশের পর কংগ্রেস ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল মোদী সরকারকে নিশানা করেছেন। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা এটিকে 'মোদী নির্বাচন কমিশন' বলে সম্বোধন করেছেন।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে.সি. ভেনুগোপাল মোদীকে নিশানা করে বলেন, 'নির্বাচন কমিশনকে প্রধানমন্ত্রীর হাতের পুতুল বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন মোদী সরকার'। তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ করেছে যে এই বিল ২৪ -এর লোকসভা নির্বাচনে কারচুপির একটি স্পষ্ট পদক্ষেপ।বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার অনুপ চন্দ্র পান্ডে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি অবসর নিতে চলেছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সম্ভাব্য দিন ঘোষণার কয়েকদিন আগেই তিনি অবসর নেবেন। বিলটি পাস হলে সরকার নিজেদের মতো করে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করতে পারবেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।