বীরভূমের নানুরে গুলিবিদ্ধ বিজেপি কর্মীর মৃতদেহ ঘিরে কলকাতার পর উত্তেজনা ছড়াল বোলপুরে। ‘‘মৃতদেহ নিতে হলে এসডিপিও-র অনুমতি লাগবে’, বোলপুর হাসপাতাল থেকে একথাই বলা হয়েছে পরিবারকে। এরপরই বোলপুরে বাঁশ-লাঠি নিয়ে অবরোধ করেন বিজেপি কর্মীরা।
রবিবার কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে বিজেপি কর্মী স্বরূপ গড়াইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর শেষ ইচ্ছানুসারে রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে দেহ আনার ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দেয় না পুলিশ। স্বরূপের পরিবারের দাবি, পুলিশের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে গিয়েই দেহ বিজেপি দফতরে নেওয়ার জন্য এবার হাইকোর্টে আবেদন জানাবেন তাঁরা।
স্বরূপ গড়াইয়ের খুনের প্রসঙ্গে নানুরের বিজেপি জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মন্ডল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, "তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই স্বরূপ গড়াইয়ের দেহ তুলে দেওয়া হয় নি পরিবারের হাতে। রাতের অন্ধকারে স্বরূপের দেহ পুলিশ কার্যত 'কিডন্যাপ' করে শ্রীরাম হাসপাতালের মর্গে ঢুকিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দলের কর্মীর দেহ নিয়ে শহরে ঘুরেছেন কিন্তু আমাদের তা করতে দেওয়া হচ্ছে না। স্বরূপের খুনিদের গ্রেফতারি এবং তাঁর শেষ ইচ্ছা পূরণের দাবিতে সাতদিনের বিক্ষোভ ধর্না মঞ্চে আমাদের এই ধর্না চলবে।"
আরও পড়ুন: তৃণমূল নেতাকে ‘গুলি করে খুন’ মুর্শিদাবাদে
পরিবারের দাবি, বিজেপির একনিষ্ঠ কর্মী স্বরূপের শেষ ইচ্ছে ছিল, মৃত্যুর পর যেন তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় ৬ মুরলীধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে। সেই 'ইচ্ছে' পূরণ করতেই নানুরে প্রথমে তাঁর মৃতদেহ নিয়ে যেতে অস্বীকার করেন তাঁর পরিবার। কিন্তু রবিবার রাত পেরিয়ে সোমবার এলে মৃতের পরিবার জানতে পারেন, তাঁদের সঙ্গে কোনওরকম পরামর্শ ছাড়াই পুলিশই স্বরূপ গড়াইয়ের দেহ নানুরে নিয়ে যায়। সেখান থেকেই শুরু নয়া বিতর্কের।
ঠিক কী অভিযোগ?
স্বরূপের পরিবারের অভিযোগ, শুক্রবার বাড়িতে এসে চড়াও হয়ে স্বরূপ গড়াইকে গুলি করে হত্যা করে তৃণমূলের কর্মীরা। অবস্থার অবনতি হলে কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকার টিআরএ জেনারেল হাসপাতালে স্বরূপ গড়াইকে আনা হলে রবিবার সন্ধ্যায় মারা যান তিনি। এই ঘটনার পরই খুনে জড়িত থাকার দায়ে তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মৃত্যুর পর স্বরূপ গড়াইয়ের শেষ ইচ্ছার কথা মাথায় রেখেই পরিবারের তরফে মৃতদেহ রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে নিয়ে যাওয়ার কথা হলে পুলিশের পক্ষ থেকে সেই অনুমতি প্রত্যাখ্যান করা হয়, এমনই অভিযোগ পরিবারের।
আরও পড়ুন: ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হবেন, ৮ কোটি টাকা চুরির দায়ে’, বিস্ফোরক মুকুল রায়
কিন্তু পুলিশের এই নিষেধ মানতে নারাজ গড়াই পরিবার। পুলিশের নিষেধাজ্ঞার পর তাঁরা হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ নিতেও অস্বীকার করেন বলে খবর, এমনকি মৃত স্বরূপের 'শেষ ইচ্ছা' রাখতে হাইকোর্টে আবেদন করার কথাও জানান তাঁরা। মৃতের ভাই অরূপ গড়াই বলেন, "আমরা এখনই মৃতদেহ নেব না। দেহ হাসপাতালেই থাক। আমার ভাইয়ের শেষ ইচ্ছে ছিল যেন তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাজ্য বিজেপির দফতরে। আমরা মঙ্গলবার আদালতের দ্বারস্থ হব এই বিষয়টি নিয়ে।" তবে জানা যাচ্ছে, সোমবার রাতেই হাসপাতাল থেকে স্বরূপ গড়াইয়ের দেহ নানুরে নিয়ে যায় পুলিশ।
আরও পড়ুন: কলকাতা পুলিশ এসটিএফের হাতে চেন্নাইয়ে গ্রেফতার জেএমবি জঙ্গি
এই ঘটনাকে 'অত্যন্ত দুঃখজনক' আখ্যা দিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক দেবজিৎ সরকার। অন্যদিকে, বঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ এই ঘটনায় পুলিশকে তোপ দেগে বলেন, "আমরা চাই স্বরূপ গড়াইয়ের দেহ রাজ্য বিজেপির দফতরে আনতে। আমরা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করব, দরকার হলে সিবিআই তদন্তেরও দাবি জানাব।" দিলীপের এই মন্তব্য নিয়ে কলকাতা পুলিশের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে নানুরে তৃণমূলের যুব সংগঠনের সভাপতি শেখ রফিক বলেন, "অন্য কোনও দলের লোক তাঁকে গুলি করেছে। পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করছে। আমাদের দলের কেউ এই ঘটনায় জড়িত নয়।"
Read the full story in English