বাংলা জয়ে পাখির চোখ ২০২১। তাই 'আনলক ১.০' য়ের শুরুতেই প্রথমবারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা, কর্মী, সমর্থকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে জনসভা করবেন অমিত শাহ। এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মুরলীধর সেন লেন জুড়ে এখন তৎপরতা তুঙ্গে। ইতিমধ্যেই রাজ্য কমিটি পুনর্বিন্যাস করেছে বঙ্গ বিজেপি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা ও আমফান ত্রাণকার্য নিয়ে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে সরব গেরুয়া নেতারা। রাজ্যব্যাপী পুরভোট ও পরের বছর বিধানসভা ভোট। তার আগে বিরোধের সেই চড়া সুর বজায় রাখতে শাহ রাজ্য নেতৃত্বকে দিকনির্দেশ করতে পারেন বলে খবর।
দলের রাজ্যসভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেছেন, 'ভিডিও সমাবেশের মাধ্যমে দলের প্রত্যেক নেতা, কর্মী, সমর্থকের কাছে বার্তা পৌঁছে যাবে। প্রথম বৈঠক হবে ৮ই জুন। সেদিনই দিল্লি থেকে বাংলার দলীয় নেতা, কর্মীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করবেন অমিত শাহ।' তিনি জানান, 'প্রতিটি ভিডিও বৈঠকে বিজেপি নেতা, কর্মী মিলিয়ে হাজার জন হাজির হতে পারবেন। অন্যরাও দর্শক হিসাবে উপস্থিত হতে পারেন। রাজ্য নেতৃত্ব অমিতজির সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারবেন।'
তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বলার পাশাপাশি এই ভিডিও বৈঠকে দ্বিতীয় মোদী সরকারের প্রথম বছরের সাফল্যের খতিয়ানও পেশ করা হবে। যা ভোটের আগে ভোটারদের কাছে তুলে ধরতে পারবেন দলের নেতারা।
আরও পড়ুন- বিজেপির নতুন রাজ্য কমিটিতে গুরুত্ব বাড়ল লকেট-অর্জুন-সৌমিত্রর
দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে করোনা আবহেই সোমবারই বঙ্গ বিজেপির নয়া রাজ্য কমিটি ঘোষণা করা হয়। সোমবার দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এই নতুন কমিটির কথা ঘোষণা করেন। এবারের কমিটিতে নির্বাচিত সাংসদদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনও আনা হয়েছে। গত কমিটির সহসভাপতি তথা নেতাজি পরিবারের সদস্য চন্দ্রকুমার বসুকে এবারের কমিটিতে কোনও পদেই রাখা হয়নি। বিশেষ পরিবর্তন আনা হয়েছে দলের মোর্চাগুলিতেও। তবে মুকুল রায়ের হাত ধরে যাঁরা গেরুয়া শিবিরে এসেছিলেন তাঁদেরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কমিটিতে। এমনকী নতুন কমিটিতে রয়েছেন লোকসভা ভোটে পরাজিত আইপিএস ভারতী ঘোষও। কিন্তু স্বয়ং মুকুল রায় এখনও দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যই রয়ে গিয়েছেন।
হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে মহিলা মোর্চার সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে অন্যতম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। সহসভাপতি করা হয়েছে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংকে। সাধারণ সম্পাদক পদে নিয়ে আসা হয়েছে পুরুলিয়ার সাংসদ জ্য়োতির্ময় সিং মাহাতোকে। তবে বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকার আগের কমিটিতেও সহ-সভাপতি ছিলেন, এবারও একই পদে রয়েছেন। এছাড়া, উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মুকে এসটি মোর্চার রাজ্য সভাপতি করা হয়েছে। যুব মোর্চার যুব মোর্চার রাজ্য সবাপতি করা হয়েছে বিষ্ণপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁকে। দলের মহিলা মোর্চার রাজ্য সভাপতি হলেন ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল। বঙ্গ বিজেপির সম্পাদক করা হয়েছে বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত ও লকেট চট্টোপাধ্যায়কে।
বিজেপির বহু পুরনো মুখকে রাজ্য কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি, বদলে তৃণমূল ও অন্য দল থেকে যাঁরা পদ্ম শিবিরে যোগ দিয়েছেন তাঁদেরই নেতৃত্বের ভার তুলে দেওয়া হয়েছে। এতে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের সম্ভাবনা বাড়তে পারে কি? জবাবে দিলীপ ঘোষ বলেন, 'ক্ষমতা অনুসারে দলীর পদ বন্টন করা হয়েছে। আমাদের বড় দল, আস্তে আস্তে প্রত্যেকেই পদ পাবেন। এতে দ্বন্দ্বের কোনও কারণ নেই।'
আমফানে ত্রাণ নিয়ে মমতা সরকার 'রাজনীতি' করছে বলে এদিন তোপ দাগেন বিজেপি রাজ্য় সভাপতি। বলেন, 'বহু মানুষের শেষ সম্বলটুকু ধ্বস হয়েছে। কিন্তু, আমাদের দলের লোকেদের ত্রাণ নিয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। বলা হচ্ছে প্রশাসনকে আগে সব জানাতে হবে। মনে হচ্ছে ত্রাণের অধিকার একমাত্র তৃণমূলের করলেই মিলবে।' প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ঘিরেও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিয়োগ করেন দিলীপ ঘোষ। তাঁর প্রশ্ন, 'প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় অর্থ এলেও কিভাবে এত কাঁচা বাড়ি এখনও রয়ে গেল? বহু মানুষ এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের পুরো টাকা পাননি। এক কিস্তিতে টাকা পেলে পরের বার টাকা দেওয়ার সময় কাট মানি চাওয়া হচ্ছে।'
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন