বুধবারের ধর্মঘট সাম্প্রতিক অন্যান্য ধর্মঘটের চেয়ে আলাদা রূপ নেবে একথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। কারণ, ওই দিন বিজেপি রাস্তায় নামবে বনধকে সফল করতে। অন্যদিকে রাজ্য সরকার কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে বনধ রুখতে। পাশাপাশি তৃণমূল কর্মীরাও যে রাস্তায় নামবেন, তা হলফ করে বলা যায়। পুলিশের একাংশের আশঙ্কা, বাংলায় বনধ ফিরতে চলেছে পুরনো চেহারায়। বাম-কংগ্রেসের বনধ অনায়াসে মোকাবিলা করা গেলেও এবার যে বিজেপি বনধ সফল করতে মরিয়া হয়ে উঠবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাই রাজ্য জুড়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে চলেছে সরকার।
আরও পড়ুন: ইসলামপুরে শিক্ষক নিয়োগ ও পুলিশি গুলিচালনার পিছনে কী?
বুধবার বিজেপির ডাকা বাংলা ধর্মঘটে জনজীবন সচল রাখতে সমস্তরকম ব্যবস্থা নেবে রাজ্য সরকার। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য গঠিত মন্ত্রিগোষ্ঠী বৈঠক করে। ওই বৈঠক শেষে গোষ্ঠী প্রধান তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, বনধ মোকাবিলায় সরকার। তিনি বলেন, “জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে বুধবার পর্যাপ্ত পরিমাণে সরকারি পরিবহণ রাস্তায় নামাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পরিবহন মন্ত্রীকে। একইসঙ্গে বেসরকারি বাস, মিনিবাস ও ট্যাক্সি যাতে যথেষ্ট সংখ্যায় পথে নামে সে জন্য মালিক সংগঠনগুলির সঙ্গে সরকার কথা বলছে। এবারও রাজ্য সরকারি কর্মীদের ওই দিন হাজিরা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।’’
বিজেপির রাজ্য সাধারন সম্পাদক সায়ন্তন বসুর দাবি, "বুধবার রাজ্যের মানুষ ধর্মঘটে সামিল হবেন। ওই দিন ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল করবে বিজেপি।" তৃণমূল কংগ্রেস মনে করছে ধর্মঘট সফল করার নামে "গোলমাল পাকাতে" সচেষ্ট থাকবে বিজেপি। তবে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে বলে এদিন পার্থবাবু হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “রাজ্যের সাধারন মানুষ এই কর্মনাশা রাজনৈতিক সংস্কৃতি মেনে নেবেন না।"
আরও পড়ুন: ইসলামপুরের বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি সিপিএমের, ধর্মঘট এসএফআইয়ের
শিক্ষামন্ত্রী জানান, ইসলামপুরে গুলিতে দুই যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কোন দলীয় রং না দেখেই কড়া ব্যবস্থা নেবে। তাঁর অভিযোগ, "বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ওই ঘটনা নিয়ে অপপ্রচারে নেমেছে। শিক্ষা দপ্তর ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট ডিআইকে সাসপেন্ড করেছে। ভবিষ্যতে কোনভাবেই যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে সরকার শিক্ষা দপ্তরের সমস্ত ডি আই এবং এস আইদের নির্দেশ দিয়েছে।"
সম্প্রতি মাঝেরহাট সেতু ভাঙা দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরকারেরও দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন উত্তরবঙ্গ সফরে। সেই ঘটনা চাপা পড়ে গেল বড়বাজারের বাগরি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে। চারদিনেও আগুন ঠিক ভাবে নিভছিল না। রবিবার ভোর রাতে আগুন লাগে। সেদিন সকালে মুখ্যমন্ত্রী সদলবলে চলে যান জার্মানী ও ইতালি সফরে। এরপরই ঘটল ইসলামপুরে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে দুই যুবকের গুলিতে মৃত্যু। তোলপাড় হয়ে গেল শিক্ষক সমাজ থেকে সাধারন মানুষ।
গুলি চালানো নিয়ে বিতর্ক চলছে, তবে ঘটনার পরই শিক্ষামন্ত্রী সরাসরি এর সঙ্গে বিজেপি এবং আরএসএস যুক্ত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদেই বুধবার বাংলা বনধ ডেকেছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী বিদেশে, তাই বনধের মোকাবিলা আপাতত কার্যনির্বাহী মন্ত্রীগোষ্ঠীর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।