করিমপুরে বিজেপি প্রার্থীর উপর হামলার ঘটনায় রাজ্য-রাজনীতি তোলপাড়। বিজেপি সরাসরি দোষারোপ করেছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। বিজেপি নেতা মুকুল রায় জেলাশাসক ও জেলাপুলিশ সুপারকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে, তৃণমূল ঘটনার দায় এড়িয়ে গেরুয়া গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব আওড়েছে। কংগ্রেস ও সিপিএম নির্বাচনের দিন প্রার্থীকে মারধরের ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেছে। তারা সম্পূর্ণ দায় চাপিয়েছে নির্বাচন কমিশনের উপর।
বিধানসভা নির্বাচনে এর আগে প্রার্থী নিগৃহীত হয়নি এমন নয়। কিন্তু সোমবার নির্বাচন শুরু হওয়ার কিছক্ষণের মধ্য়ে করিমপুরের বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারকে যে ভাবে ধাক্কা দিয়ে, লাথি মেরে ঝোপের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে, তাতেই সরব হয়েছে সব মহল। কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, "যে দলেরই প্রার্থী হোক না কেন, লাথি মেরে জঙ্গলে ফেলে দিয়েছে, এটা ভাবতেই পারা যায় না। আমরা কোথায় বসবাস করছি! নির্বাচন কমিশনের কাছে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। ব্যবস্থা নিতে বলেছি।"
প্রদীপবাবু এই ঘটনায় কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়েছেন নির্বাচন কমিশনকেও। রাজ্যসভার এই সাংসদ বলেন, "নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমার্জনীয় অপরাধ করেছে নির্বাচন কমিশন। সংবিধানের দেওয়া দায়িত্ব তারা অবহেলা করেছে, অগ্রাহ্য করেছে। যেখানে পুলিশ ও প্রশাসন আছে, সেখানে একজন প্রার্থী কী করে প্রহৃত হন? কেন্দ্রীয় বাহিনী কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছিল! আমি বুঝতে পারছি না, যাঁরা ওখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের দায়িত্বে ছিলেন, কেন তাঁদের নির্বাচন কমিশন সাসপেন্ড করেনি অথবা শো কজ করেনি!"
আরও পড়ুন: ‘মুকুলই সব জানে, আমি ছিলাম না’, বিস্ফোরক অভিযোগ পার্থর
বিজেপি প্রার্থীকে লাথি মারার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনকে এক হাত নিয়েছেন সিপিএম পটিটব্য়ুরো সদস্য় মহম্মদ সেলিমও। প্রাক্তন এই সাংসদ বলেন, "পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে তৃণমূলের ভৈরব বাহিনীর আক্রমণ নতুন নয়। পঞ্চায়েত নির্বাচন, সাধারণ নির্বাচন, পুরসভা নির্বাচন, কো-অপারেটিভের ভোট সবেতেই মাস্তানি, গুন্ডামি, মারামারি ও খুনোখুনি আমরা দেখেছি। যে দলেরই প্রার্থীই হোক না কেন, আমরা এই ঘটনার নিন্দা করছি। উপনির্বাচনে নির্বাচন কমিশনেরও দায়িত্ব আছে। নির্বাচক থেকে নির্বাচন কর্মী ও নির্বাচনের প্রার্থী সবার নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশেনর। নির্বাচন কমিশনও ফেল করছে বারবার।" তাঁর বক্তব্য, "লোকসভা নির্বাচনের সময় আমার উপর আক্রমণ হয়েছিল। এফআইআর করেছিলাম, তারপরও কিছু হয়নি। উল্টে আমার নামে কেস করে দিয়েছিল। নির্বাচন কমিশন কোনও ব্যবস্থা নেয় না।"
এদিনের ওই ঘটনার পর তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে বিজেপি। নির্বাচন কমিশনে পুরো বিষয়টি জানিয়েছে তারা। এমনকী যারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের নামের তালিকাও প্রাকশ করেছে কমিশন। মুকুল রায় এদিন বলেন, "তিনটে উপনির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডাবাহিনী ও পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ জেলাশাসক ও জেলাপুলিশ সুপারকে বরখাস্ত করা হোক।" অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "জয়প্রকাশ মজুমদারকে লাথি কি নিজের দলের লোকেরা মেরেছে না মানুষ মেরেছে! হেরে যাবে জেনে এসব সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা। তাতে লাভ কিছু হবে না।"