Advertisment

Purulia Update: জোড়া খুনের পর দলিত রাজনীতির চারা রোপণ বিজেপির

ত্রিলোচন মাহাতো এবং দুলাল কুমার, মৃত দুজনেই নিম্নবর্ণীয়। এই দুই মৃত্যুকে সামনে রেখে গেরুয়া শিবির দলিত নীপিড়নের ইস্যু সামনে তুলে আনছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
purulia deadbody

পুরুলিয়ায় গাছে ঝুলন্ত মৃতদেহ, রাজনৈতিক চাপানউতোর

দলিতদের টার্গেট করা হচ্ছে, দাবি দিলীপ ঘোষের

Advertisment

রামনবমীর সশস্ত্র মিছিল কিছুটা হলেও কোন কোন পকেটে অক্সিজেন জুগিয়েছে বিজেপি-কে। আংশিক সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে হনুমান জয়ন্তীও পালন করেছে  গেরুয়া শিবির। এবার বাংলায় তারা আস্তিন থেকে বের করার চেষ্টা করছে নতুন তাস, দলিত।

গোবলয় বলে চিহ্নিত এলাকায় তো বটেই, তার বাইরেও দলিত-উচ্চবর্ণীয় বিরোধ বহুকালের। যে বিরোধ ও উৎপীড়নের কথা বারবার শিরোনামে এনেছে বহু এলাকাকে। পায়ের ওপর পা তুলে বসার জন্য, ঘোড়ায় চড়ার জন্য, পাগড়ি পরার জন্য, এমনকি কুয়োর জল ব্যবহার করার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে বহু দলিতকে। দলিতদের উপর উচ্চবর্ণীয়দের অত্যাচারের কারণে বহুক্ষেত্রে সশস্ত্র নকশালপন্থী তথা মাওবাদী আন্দোলন বিস্তার লাভ করেছে দেশের বহু এলাকায়। লছমনপুর-বাথে গণহত্যার মত ঘটনার বীজ উপ্ত ছিল এই দলিত-উচ্চবর্ণীয় বিরোধের মধ্যেই। ফুলন দেবীর ডাকাত হয়ে ওঠাও সেই বর্ণবিভাজনেরই ফসল। কিন্তু এ রাজ্যে উচ্চবর্ণীয়-নিম্নবর্ণীয় বিভাজন তেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেনি কখনও। যেমন ধর্মীয় বিভাজনও গত বেশ কয়েক দশকে তত মাথাচাড়া দেয়নি এ রাজ্যে।

আরও পড়ুন: Pranab-RSS: অষ্টমীতে প্রণববাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন সংঘের কর্তারা!

পুরুলিয়ায় পঞ্চায়েত ভোটে জোরদার ছাপ ফেলেছে বিজেপি। ১০ টি জেলা পরিষদ, ৪ টি পঞ্চায়েত সমিতির দখল নিয়েছে তারা। ভোটের এই ফলাফল শিরদাঁড়ায় ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিয়েছে শাসকদলের। তার ঠিক পর পরই অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বিজেপি-র দুই কর্মীর। সুপুরডির বাসিন্দা ত্রিলোচন মাহাতো সম্পর্কে জানা গিয়েছে, রামনবমীর মিছিলের আগে পর্যন্ত তিনি তত সক্রিয় ছিলেন না। অস্ত্র মিছিলের পর থেকেই তাঁর সক্রিয়তা বাড়ে। এবং দাভা গ্রামের দুলাল, যাঁর মৃতদেহ মিলল হাইটেনশন তারে ঝুলন্ত অবস্থায়, তিনিও বিজেপি-তে যোগ দেন একই সময়ে।

ত্রিলোচন মাহাতো এবং দুলাল কুমার, মৃত দুজনেই নিম্নবর্ণীয়। এই দুই মৃত্যুকে সামনে রেখে গেরুয়া শিবির দলিত নীপিড়নের ইস্যু সামনে তুলে আনছে। দলের রাজ্য় সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলছেন, "দলিতদের টার্গেট করা হচ্ছে। যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে দলিতরাই সংখ্যায় বেশি। এ রাজ্যে দলিত, নিম্নবর্গ এবং পিছিয়ে পড়া মানুষদের সম্মান, সুরক্ষা কিছুই যে নেই, তা বারবার প্রমাণিত।" দলিত রাজনীতি কি এখানে সফল হবে? সরাসরি উত্তর না দিলেও তাঁরা যে এ নিয়ে রাজনীতি করবেন, সে কথা প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিলেন খড়গপুরের বিধায়ক। বললেন, "এখানে দলিতরা মারা যাচ্ছে, এটা বাস্তব ঘটনা।"

আরও পড়ুন: Purulia Update: জোড়া মৃত্যু নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি চাপানউতোর

বিজেপি-র দলিত ইস্যু নিয়ে মুখর হওয়াকে "হাস্যকর" আখ্যা দিচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, "এ রাজ্যে জাতপাতের রাজনীতি করে কোনও লাভ হবে না।" অন্য রাজ্যে দলিতদের ওপর বিজেপি যে অকথ্য অত্যাচার করছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে পার্থ বলেছেন, "বিজেপি তো এ রাজ্যে কংগ্রেস এবং সিপিএমের দয়ায় রাজনীতি করছে।"

পুরুলিয়া-সহ গোটা জঙ্গলমহলই নিম্নবর্গীয় ও আদিবাসী অধ্যুষিত। সেই অঞ্চলে গেরুয়া শিবিরের ভোটে ভাল ফল শাসকসহ অন্যান্য বিরোধীদের কাছে নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, এ কথা সত্যি। আবার একই সঙ্গে এও সত্যি যে সেখানে শাসক এবং যে কোন বিরোধীদলের মূল শক্তি নিম্নবর্গীয় ও আদিবাসীরাই। জোড়া মৃত্যুর ঘটনায় এখনও কেউ ধরা পড়েনি, তবে যাঁদের দিকে অভিযোগের তির, তাঁরাও নিম্নবর্গীয়ই। এ ঘটনাকে দলিতবিরোধী বলে দাঁড় করানোর বিজেপি-র চেষ্টা খুব বেশি সফল হওয়ার কথা নয়। ফলে ত্রিলোচন মাহাতো ও দুলাল কুমারের মৃত্যুর ঘটনা থেকে খুব বেশি রাজনৈতিক ফায়দা হয়ত হবে না গেরুয়া শিবিরের। তবে রামনবমীর অস্ত্র মিছিলের মতোই দলিত ইস্যুও এ রাজ্যে বিজেপি-র রোপিত আরেকটি সফল চারা হয়ে উঠবে কি না তা সময়ই বলবে।

Dalit tmc bjp purulia west bengal politics hanuman jayanti
Advertisment