একটি ম্যাটাডোর ভর্তি একের পর এক খিচুড়ি ভর্তি গামলা। ম্যাটাডোরের সামনে লম্বা লাইন। পদ্মফুল আঁকা গেরুয়া উত্তরীয় পরিহিত দুজন স্বেচ্ছাসেবক পালা করে খিচুড়ি বিলি করছেন লালবাজার অভিযানে আসা কর্মী-সমর্থকদের। তখনও মিছিল শুরু হয় নি, কিন্তু প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা এসে গিয়েছেন। কিন্তু খিচুড়ির সামনের লাইন কমার কোনও লক্ষণই নেই। বাধ্য হয়ে কলকাতার এক বিজেপি নেতা খানিকটা ধমকের সুরেই বললেন, "মিছিলে যাওয়ার বদলে খিচুড়ি খাওয়াতেই তো আপনাদের বেশি আগ্রহ। দিলীপদা, মুকুলদা এসে গেছেন, সামনে চলুন।" ধমকে অবশ্য কাজ হয় নি তেমন।
পুলিশের লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাসের শেল বর্ষণ, জলকামান, বিজেপি কর্মীদের পাল্টা ইটবৃষ্টি - এসব তো ছিলই, তার পাশাপাশি বৃহস্পতিবারের লালবাজার অভিযানে টুকরো টুকরো এমন অনেক ছবি। মিছিলের শুরুতেই নজর কাড়ছিলেন দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি কর্মী শুভব্রত রায়। বছর চল্লিশের ভদ্রলোক পেশায় ব্যবসায়ী। এদিনের কর্মসূচিতে এসেছিলেন মাথায় প্লাস্টিকের তৈরি হেলমেট পরে। প্রশ্ন করতে বললেন, "আমি সাধারণত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গেলে মাথায় হেলমেট পরেই যাই। রাজ্যজুড়ে তৃণমূল যা তাণ্ডব করছে, তাতে ঝুঁকি নিতে ভরসা পাই না। তার উপর আজ লালবাজার অভিযান। পুলিশ নিশ্চয় মারধর করবে, তাই হেলমেট খোলার প্রশ্নই নেই।"
কর্মসূচির শেষে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে ফের দেখা হল ওই বিজেপি কর্মীর সঙ্গে। হেলমেটে মাথা বেঁচেছে ঠিকই, কিন্তু হাতে-পায়ে পুলিশের লাঠির বাড়ি লেগেছে। কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় লাল হয়ে যাওয়া চোখ থেকে জল মোছার ফাঁকে বললেন, "ফাইবারের লাঠি দিয়ে মেরেছে। ভালই লেগেছে। যাক গে, কিছু করার নেই। বর্ম পরে তো আর আন্দোলন করা যায় না।"
মিছিলে আসা সমর্থকদের জন্য এক ম্যাটাডোর ভর্তি জলের পাউচ রেখেছিল বিজেপি। মিছিলের শুরুর দিকে প্রবল রোদে ক্লান্ত কর্মীরা ওই পাউচ চেয়ে নিচ্ছিলেন গলা ভেজাবেন বলে। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হতেই বদলে গেল তার ব্যবহার। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ থেকে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট তখন রণক্ষেত্র। পুলিশের লাঠি, কাঁদানে গ্যাসের মুখে একবার পিছু হটছেন বিজেপি কর্মীরা, পরক্ষণে তাঁদের ধাওয়ায় পিছিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় ঠিকমতো তাকানো যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে ওই ম্যাটাডোর থেকে পানীয় জলের পাউচ ছোড়া শুরু হল। সেই জলের ঝাপট দিয়ে চোখ আর ত্বকের জ্বালা কমানোর চেষ্টা শুরু করলেন গেরুয়া শিবিরের কর্মীরা।
সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের কটাক্ষ, "ওঁদের অনেক টাকা। তাই মিনারেল ওয়াটার বিলি করতে পারেন। আমরা গরীব মানুষের পার্টি। অনেক মার খেয়েছি, কাঁদানে গ্যাসের শেলের মুখোমুখি হয়েছি। এসব কখনও প্রয়োজন হয় নি।"