করোনা পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক মন্দা, সীমান্তে চিনা আগ্রাসন নিয়ে এমনিতেই নাস্তানাবিত অবস্থা বিজেপির। তার মাঝেই পাঞ্জাব ও হরিয়ানার হাজার হাজার কৃষক মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন। আর কৃষকদের পক্ষ নিয়ে বৃহস্পতিবার মোদী মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বহু দিনের বিশ্বস্ত জোটসঙ্গী শিরোমণি অকালি দলের হরসিমরত কউর বাদল। এতে সরকারের কোনও অসুবিধা হবে না। তবে, হরসিমরতের ইস্তফা জোট রাজনীতির প্রেক্ষিতে পদ্ম বাহিনীর কাছে বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে।
এক বছর পূর্ণ করেছে দ্বিতীয় মোদী সরকার। তার মাঝেই দীর্ঘ দিনের জোটসঙ্গী শিবসেনা মহারাষ্ট্র ভোটের পর পরই ক্ষমতা দখল নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে এনডিএ ছেড়েছিল। এবার জোট না ছাড়লেও মন্ত্রীত্ব ছেড়েছেন অকালি দলের হরসিমরত কউর বাদল। চলতি বাদল অধিবেশনে কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারের তিনটি অধ্যাদেশ পাশ করাতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। বিলের বিষয়বস্তু ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিজেপির সঙ্গে মতপার্থক্যে জড়িয়ে পড়ে জোটসঙ্গী। বিরোধিরা বিলের বিপক্ষে সরব। এবার শিরোমণি অকালি দল সোচ্চায় হওয়ায় যেন বিরোধী শিবিরের দাবিই মান্যতা পেল। এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে এবার সংসদ ও বিহার ভোটের প্রচারে কংগ্রেস সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে প্রবলভাবে ঝাঁপাবে বলে মনে করছে পদ্ম শিবির।
আরও পড়ুন- বিহার ভোট ২০২০: আসন রফা নিয়ে জেডিইউ-বিজেপি চাপানউতোর, নীতীশের নজরে ১১৫
১) কৃষি পণ্যের বাণিজ্য সংক্রান্ত অধ্যাদেশ, ২) কৃষি পরিষেবা ও কৃষি পণ্যের মূল্যের নিশ্চয়তা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ এবং ৩) অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন অধ্যাদেশ চলতি অধিবেশনে পাস করাতে মরিয়া মোদী সরকার। এগুলোকে প্রথমে সমর্থন করে অকালি দল। পরে অবশ্য কৃষকদের আন্দোলন নজরে পড়তেই তারা বিলের উদ্দেশ্য নিয়ে বিজেপির সঙ্গে মতপার্থক্যে জড়িয়ে পড়ে।
বিজেপির দাবি, এই তিন অধ্যাদেশ কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করবে। কৃষকরা নিজের এলাকার বাইরে অন্যত্র বা অন্য রাজ্যে তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বিপণনের সুযোগ পাবেন। কোনও বাধা থাকবে না। বর্তমানে চাল, গম সহ বেশ কিছু কৃষিপণ্য চাষিরা নোটিফায়েড এলাকার বাইরে বিক্রি করতে পারেন না। তা ছাড়া নয়া অধ্যাদেশের বলে কৃষকরা বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে কৃষি পণ্য উৎপাদন করতে পারবেন। বিলগুলিকে 'ঐতিহাসিক' বলে জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কৃষক ও কৃষি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের বিভ্রান্ত না হওয়ারও
পরামর্শ দেন মোদী।
হরিয়ানা, পাঞ্জাব দেশে কৃষি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাদ্য নিশ্চতা প্রকল্পেও এইসহ রাজ্যের ভূমিকা অপরিসীম। সেখানকার কৃষকদের আন্দোলন তাই ভাবাচ্ছে বিজেপি সরকারকে। তাই কৃষি সংস্কার বিল নিয়ে অকালি দলের সঙ্গে বহুবার আলোচনা সেরেছে গেরুয়া দলের নেতারা। কিন্তু লাভ হয়নি। এখানেই যেন অরুণ জেটলির অভাব উপলোব্ধি করছেন শাহ-নাড্ডারা।
উদ্বেগ বাড়লেও মুখে অবশ্য সেকথা স্বকার করছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। একবিজেপি নেতা কথায়, 'অকালি দল কৃষি সংস্কার বিলের ভোটাভুটিতে বিরুদ্ধে ভোট দিতেই পারে। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার-সিএএ নিয়ে সরকারের সঙ্গে নীতীশের দল জেডিইউ-এরও মতপার্থক্য রয়েছে।' উলেখ্য, বিহারের জোট হলেও যদিও জেডিইউ মোদী সরকরের অংশ নয়।
বিতর্ক যাতে না বাড়ে বা বিজেপির গায়ে যাতে কৃষক বিরোধী তকমা না লাগে তাই এই বিলগুলো কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ আমলের বলে প্রচার করছে পদ্ম শিবির। তুলে ধরা হচ্ছে ২০১৯ সালে ইউপিএ-এর ইস্তেহার।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন