প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, প্রবীণ আদিবাসী নেতা বিষ্ণুদেও সাইকে ছত্তিশগড়ের নতুন মুখ্যমন্ত্রী মনোনীত করল বিজেপি। কে হতে চলেছেন ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী, তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই নানা জল্পনা চলছিল। অবশেষে তার অবসান ঘটিয়ে বিজেপি ঘোষণা করল যে, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাইই হবেন ছত্তিশগড়ের নতুন মুখ্যমন্ত্রী। গেরুয়া শিবির ২০১৮ থেকে ছত্তিশগড়ে বিরোধী আসনে ছিল। ভোটের সংখ্যায় সেই অবস্থানের বিশাল পরিবর্তন ঘটিয়ে এবার দুর্দান্ত জয় পেয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
যাঁর নাম ঘোষিত হয়েছে, সেই সাইকে ছত্তিশগড়ের সবচেয়ে প্রবীণ আদিবাসী নেতাদের মধ্যে অন্যতম বলা হয়। একজন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং চারবার লোকসভার সাংসদ তিনি। ৫৯ বছরের সাই অবিভক্ত মধ্যপ্রদেশের দুইবারের বিধায়কও। একটি নির্বাচনী সমাবেশে অমিত শাহ বলেছিলেন যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে সাইকে 'বড় পদ' দেবে।
দলীয়ভাবে বিধানসভায় শাসক দলের নেতা নির্বাচিত হওয়ার পরে, সাই সাংবাদিকদের বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি মধ্যপ্রদেশ সরকারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মোদীর গ্যারান্টি (বিজেপির প্রাক-নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি) পূরণ করার চেষ্টা করব। ১৮ লক্ষ ঘর অনুমোদন করা (আবাসন প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের) রাজ্যের প্রথম কাজ (করা হবে)।'
আরও পড়ুন- মহুয়ার ঠিক আগেই বহিষ্কৃত, আমেরিকার স্যান্তোসের সঙ্গে মৈত্রের মিল অবাক করছে সকলকে!
বিজেপির নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X-এ লিখেছেন, 'কুঙ্কুরির বিধায়ক ও আদিবাসী নেতা শ্রী@বিষ্ণুদেও সাইজিকে আজ বিধায়ক দলের সভায় সর্বসম্মতভাবে ছত্তিশগড়ে বিজেপির বিধায়ক দলের নেতা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি নতুন দায়িত্ব (মুখ্যমন্ত্রিত্ব) পাওয়ায় শুভেচ্ছা জানাই। আপনার নেতৃত্বের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা সবাই সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে বিজেপির সংকল্পপত্র (মোদীর গ্যারান্টি) পূরণ করে রাজ্যে প্রগতিশীল পরিবর্তন আনতে সফল হব এবং বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকারের অধীনে ছত্তিশগড় দ্বিগুণ উন্নয়ন করব। যা দ্রুততার সঙ্গে নতুন রেকর্ড গড়বে।'
বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলও তাঁর শুভেচ্ছাবার্তায় জানিয়েছেন, 'কুঙ্কুরির বিধায়ক ও প্রবীণ বিজেপি নেতা শ্রী বিষ্ণুদেব সাইজিকে বিজেপির বিধায়কদল নেতা নির্বাচিত করায় অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। আমি চাই, আপনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ছত্তিশগড়ে ন্যায়বিচার এবং অগ্রগতির যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যান।' বিজেপির রেণুকা সিং-ও মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড়ে ছিলেন। তিনি বলেন, 'সাইজি আমার চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ।' বিধায়কদলের বৈঠকে সাইয়ের নাম কারা সমর্থন করেছে, জানতে চাইলে রেণুকা সিং বলেন, 'রমন সিংজি, লতা সেন্দি (প্রাক্তন মন্ত্রী) ও ব্রিজমোহন আগরওয়াল (দীর্ঘকাল ধরে দায়িত্ব পালনকারী বিধায়ক, যিনি চতুর্থবার জয়ী হয়েছেন) তাঁকে সমর্থন করেছেন।'
ফলাফল ঘোষণার এক সপ্তাহ পরেও নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণায় বিলম্ব আগে থেকেই জল্পনার জন্ম দিয়েছিল। মনে করা হচ্ছিল, লোকসভা নির্বাচনের পাঁচ মাস আগে বড় আকারে জয়ের জেরে ছত্তিশগড়ে নতুন মুখ বাছতে পারে বিজেপি। বর্তমানে ছত্তিশগড় বিধানসভায় ৯০টি আসন আছে। যার মধ্যে বিজেপি এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ৫৪টিতে জিতেছে। এক্সিট পোলের ফলাফল মিথ্যে প্রমাণ করেছে। দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ ছত্তিশগড়ে কংগ্রেসের ভূপেশ বাঘেলের সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিজেপি এবার এই রাজ্যে ৪৭টি আসনে নতুন প্রার্থী দিয়েছিল। ফলও মিলেছে হাতেনাতে। ২০১৮ সালে বিজেপি যে কটি আসন পেয়েছিল (১৫টি), তার তিনগুণেরও বেশি আসনে জিতেছে। আর, কংগ্রেস ২০১৮ সালে পেয়েছিল ৬৮টি আসন। এবারের নির্বাচনে তাদের আসন সংখ্যা কমে হয়েছে ৩৫।