আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের বহু আসনেই পদ্ম ব্রিগেডের প্রার্থী হয়ে লড়বেন মুসলিমরা। আর এই কৌশলেই তৃণমূলের 'সাধের' সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসিয়ে পাশার চাল উল্টাতে চায় বঙ্গ বিজেপি।
গেরুয়া শিবিরের হঠাৎ কেন এই ভোল বদল?
পশ্চিমবঙ্গে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল দেখেই বিজেপির এই 'বোধদয়' বলে মনে করা হচ্ছে। তিন দফার এই নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে ৮৫০টিরও বেশি আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি। আর এঁদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক প্রার্থীই জয়লাভ করেছেন। এর থেকেই লোকসভায় সংখ্যালঘুদের টিকিট দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আনে রাজ্যের গেরুয়া শিবির। তবে পিটিআই-কে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, "আমাদের দল ধর্মের ভিত্তিতে টিকিট দেয় না, তবু প্রার্থী হতে চেয়ে বহু সংখ্যালঘু আমাদের কাছে আবেদন করছেন, তাঁরা যে খুব আগ্রহী সে কথা জানাচ্ছেন"। উল্লেখ্য, গত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে মাত্র ২টি আসনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রার্থীদের টিকিট দিয়েছিল বিজেপি।
আরও পড়ুন- তৃণমূল ডিফেন্সিভ, আমরা অফেন্সিভ হয়ে গিয়েছি, দাবি দিলীপ ঘোষের
পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত। আর এই সংখ্যালঘু ভোটই রাজ্যের যেকোনও নির্বাচনে বড় ফারাক গড়ে দেয়। ২০১১ সালে পরিবর্তনের নির্বাচনের সময় থেকেই রাজ্যে সংখ্যালঘুদের একটা বড় অংশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের পাশে থেকেছেন। আর ভোটের রাজনীতিতে 'নির্ণায়ক ভূমিকা' পালন করা এই ভোট ব্যাঙ্ক তৃণমূলের সঙ্গে রেয়েছে বলেই রাজ্য জুড়ে তাদের আজও এত রমরমা, এমনটাই মনে করেন বিশ্লেষকদের একটা বড় অংশ। এবার সেই সংখ্যালঘুদেরই পাশে পেতে চাইছে ২০১৮ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে রাজ্যে ক্রমশ দ্বিতীয় রাজনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠা বিজেপি।
এদিকে আবার মুসলিমদের প্রার্থী করা নিয়ে দিলীপ ঘোষের মন্তব্যই যেন প্রতিধ্বনীত হচ্ছে দলের সংখ্যালঘু মোর্চার প্রধান আলি হোসেনের গলায়। তিনিও বলছেন, সংখ্যালঘুরাই আসন্ন নির্বাচনে 'নির্ণায়ক ভূমিকা' নেবেন। তবে, এখনই বেশি সংখ্যক টিকিট দাবি করে দলের উপর চাপ দিতে নারাজ তিনি। বরং আলি হোসেন বলছেন, পরিস্থিতি বুঝে দল সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে। সম্প্রতি এই মোর্চা সভা করে তিন তালাক এবং এনআরসি ইস্যুতে বিরোধীদের প্রচারকে ভোঁতা করতে উঠে পড়ে লেগেছে।
আরও পড়ুন- বিজেপির রথযাত্রায় থাকছেন দেড় হাজার কর্মী, আইনজীবী, রথের মেকানিক
তবে বিজেপির এই সংখ্যালঘু তাস নিয়ে মোটেই ভাবিত নয় রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। দলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, "সংখ্যালঘুদের আমাদের প্রতি সম্পূর্ণ ভরসা রয়েছে। বিজেপির এই কৌশল হাস্যকর এবং সংখ্যালঘুরা খুব ভাল করেই জানেন ওদের (বিজেপির) আসলে কি অভিসন্ধি"। তৃণমূলের মতোই কংগ্রেস এবং সিপিএমও বিজেপির এই 'সমখ্যালঘু প্রেম'কে 'কুম্ভীরাশ্রু' বলে উল্লেখ করেছে।
আরও পড়ুন- রাম মন্দির নিয়ে এবার এ রাজ্যে পুরোদমে ঝাঁপাচ্ছে ভিএইচপি
তৃণমূল-সিপিএম-কংগ্রেস যাই বলুক, আপাতত বিজেপি সে সব কথায় কান দিচ্ছে না। দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, তাঁদের দল রাজ্যে রীতিমতো ভাল সংগঠন গড়ে তুলেছে এবং মুসলিমদের তারা এরমধ্যে সামিল করতে চান। এই মুহূর্তে কেন্দ্রে ও মোট ২০ টি রাজ্যে বিজেপি সরকারে আছে। আর এসব রাজ্যের মুসলিমদের অবস্থাও বেশ ভাল। ফলে, সংখ্যালঘুরা যে বিজেপির প্রতি আকৃষ্ট হবে এ বিষয়ে প্রত্যয়ী দিলীপ ঘোষ। আর এভাবেই আসন্ন লোকসভা ভোটে অমিত শাহকে দেওয়া কথা রাখতে চায় দল। উল্লেখ্য, ২০১৯-এর নির্বাচনে রাজ্যে অন্তত ২২টি আসনে গেরুয়া শিবির জিতবে বলে অমিত শাহকে কথা দিয়েছেন রাজ্যের নেতারা। আর এরমধ্যে ১০ থেকে ১২টি আসনে বড় ভূমিকা নেবেন সংখ্যালঘুরা, এমনটাই হিসেব রাজ্যের গেরুয়া শিবিরের ভোট ম্যানেজারদের।
Read the full story in English