চার পুরনিগম ভোটের আগে বঙ্গে পদ্মের প্রতিপক্ষ কে? তৃণমূল, নাকি দলীয় কোন্দল? অপাতত সেই প্রশ্নেই যেন পাহাড় প্রমাণ অস্বস্তি রাজ্যে বিজেপিতে। গত কয়েক দিন ধরেই বঙ্গ বিজেপিতে বিধায়ক, সাংসদের দলীয় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়ার হিড়িক। মতুয়া সম্প্রদায়ের একাধিক বিধায়ক, সাংসদ আগেই দলের বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুফ 'লেফ্ট' করেছেন। এবার সেই তালিকায় নবতম সংযোজন খড়গপুরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়। কেন গ্রুপ ছাড়লেন তিনি? জবাবে বোমা ফাটিয়েছেন হিরণ।
একাধিক বিধায়কদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ 'লেফ্ট'-এর জেরে বিড়ম্বনায় এ রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব। এ প্রসঙ্গকে 'দলীয় বিষয়' বলে মুখ খোলেননি রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এর মধ্যেই খড়গপুরের বিধায়কের গ্রুপ ছাড়ার ঘটনাকে কেন্দ্রকে পদ্ম শিবিরে শোরগোল।
মতুয়া সাংসদ, বিধায়কদের দাবি বিজেপির নয়া রাজ্য কমিটিতে তাঁদের যোগ্য গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এমনকী জেলা কমিটিতেই তেমনভাবে সম্মান দেখানো হয়নি মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতাদের। ফলে যোগ্য সম্মানের দাবিতে মতুয়া বিধায়করা ও এক সাংসদ দলীয় হোয়াসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে দিয়েছেন।
দলে প্রাসঙ্গিকতার প্রশ্নে মরুলীধর সেন লেনের নেতাদের ভূমিকা নিয়ে বিস্ফোরক খড়গপুরের বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়। গ্রুপ 'লেফ্ট'-এর খবর জানাজানির পরই এই বিজেপি বিধায়ক বলেছেন, 'আমি দলে অপ্রাসঙ্গিক। কাজ করতে দেওয়া হয় না। কোনও দলীয় মিটিং-এ আমাকে ডাকা হয় না। মেদগিনীপুরের সাংসদ যিনি আমাদের দলের পূর্বতন রাজ্য সভাপতি তিনি তাঁর মতো করে কাজ করেন। কখন দলীয় বৈঠক হয় তাও জানতে পারি না। রাজ্য বিজেপি যেভাবে চলছে সেটা ঠিক নয়। তাই কাজের সুযোগ না থাকলে আমার দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে থেকে লাভ নেই। কেন্দ্রীয় নেতারা কাজ করতে বলেছেন, সেই মতো বিধায়ক হিসাবে আমি আমার কাজ করে যাবো।'
হিরণের নিশানায় সাংসদ দিলীপ ঘোষ। এ প্রসঙ্গে পূর্বতন রাজ্য বিজেপি সভাপতি বলেন, 'উনিই তো দলীয় সভায় ডাকলেও আসেন না। বলে স্ট্যানডিং কমিটির মিটিং-এ আছেন। তাহলে আমার কী করার রয়েছে? সাংসদ, বিধায়কদের মানুষ নির্বাচিত করেছেন। আমরা উভয়ই উন্নয়ের কাজ করব। বাকি কে কোন গ্রুপ ছাড়ল, কী বলছেন তা দলের রাজ্য নেতারা দেখবেন।'
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস ধরে নানা বিষয়ে বিধায়ক হিরণের সঙ্গে জেলা বিজেপি নেতৃত্বের বনিবনা হচ্ছিল না। খড়গপুরেই বিজেপির একাধিক দলীয় কর্মসূচিতে সাংসদ দিলীপ ঘোষ সহ অন্যান্যদের ছবি দেখা গেলেও বিধাকয়ক হিরণের মুখ দেখা যায়নি। যানিয়ে প্রকাশ্যেই উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন হিরণ। বিধায়কের কথাতেই স্পষ্ট, দলীয় নেতাদের একাংশের সঙ্গে সম্পর্কের সেই ফাটলই আরও চওড়া হয়েছে, আর তার জেরেই দলীয় সব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়েছেন খড়গপুরের বিধায়ক।
একুশের বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে পদ্মে ভিড়েছিলেন হিরণ চট্টোপাধ্যায়। এরপরই তাঁকে একদা দিলীপ ঘোষের জয় পাওয়া কেন্দ্র খড়গপুর থেকে প্রার্থী করে বিজেপি। জয়ও পান তিনি। তারপর থেকেই ক্রমেই বিধায়কের সঙ্গে জেলা ও স্থানীয় গেরুয়া নেতৃত্বের মনোমালিন্য শুরু হয়েছিল। এবার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়লেন হিরণ। তাহলেকী এবার ফুল বদলের প্রস্তুতিতে খড়গপুরের বিধায়ক?