মুকুল রায় দিল্লিতে কলকাতা পুলিশের নোটিস নিয়ে ব্যস্ত। বিধায়ক ছেলে মারধর করায় দলের অন্দরেই চাপে রয়েছেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। দিলীপ ঘোষ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিদেশ সফরে। ঠিক সেই সময় রাজ্যে চষে বেড়াচ্ছেন এ রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা অরবিন্দ মেনন। বর্ধমান, মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে দিনভর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যস্ত তিনি। তাঁর হাত ধরে দলে যোগদান পর্বও চলছে। একসময় মেননের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল ‘নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট’ প্রশান্ত কিশোরের। যদিও অরবিন্দ মেননের বক্তব্য ‘‘যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রশান্ত কিশোর ওই প্রান্তে, আমি এ প্রান্তে’’।
এই মুহূর্তে অরবিন্দ মেননের হাত ধরে জেলায় জেলায় বিজেপিতে যোগদান চলছে। সম্প্রতি কাটোয়া বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস প্রার্থী শ্যামা মজুমদার তাঁর সভাতেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাহলে এ মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেসের কোন নেতারা যোগাযোগ রাখছেন তাঁর সঙ্গে? অরবিন্দের জবাব, ‘‘তৃণমূল নেতৃত্বের একটা বড় অংশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তবে তাঁদের নাম বলা ঠিক হবে না। তাহলে তাঁদের ওপর পুলিশ সাজানো মামলা করবে। এসব নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি রয়েছে ওঁদের। পুলিশ ওঁদের বি টিমের মতো কাজ করছে। কাটোয়াতে ২০১৬ বিধানসভার বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী যোগ দিলেন। এভাবে আমাদের দলে অন্যরাও আসতে চলেছেন’’। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন রাজ্য যুব মোর্চার নেতা প্রীতম দত্ত।
আরও পড়ুন: শোভন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন, স্বীকার মুকুলের
প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের চুক্তি হয়েছে। তারপর থেকে নানা পদক্ষেপ করছে তৃণমূল। সেক্ষেত্রে বিজেপি কি চাপে রয়েছে? ‘‘তৃণমূল কংগ্রেসের যা হাল তাতে কেউই উদ্ধার করতে পারবে না’’, জবাব অরবিন্দের। কিন্তু, আপনার সঙ্গে তো ভালই সম্পর্ক প্রশান্তর। এ কথা শুনে একটু থমকে তিনি বললেন, ‘‘সবার সঙ্গেই আমাদের ভাল সম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু যুদ্ধ ক্ষেত্রে আমি একদিকে, ও (প্রশান্ত) অন্য প্রান্তে। আমরা দু’জন পৃথক পৃথক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। তবে ওঁর সম্পর্কে কোনও টিপ্পনী করতে চাই না’’। অরবিন্দের বক্তব্য, ‘‘আমাদের লড়াই প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে নয়। লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে। তিনি পরিকল্পনা বানাচ্ছেন। কিন্তু তৃণমূলকে হারানোর পরিকল্পনা আপনা-আপনিই তৈরি হয়ে গিয়েছে’’।
আরও পড়ুন: পুরনো সৈনিকেই আস্থা মমতার, বিধাননগরের মেয়র হচ্ছেন কৃষ্ণা চক্রবর্তী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাটমানি নিয়ে মন্তব্য করার পর রাজ্যজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে মারধর, বাড়িছাড়া সবই চলছে। কাটমানির পরবর্তে ব্ল্যাকমানি নিয়ে আন্দোলনে নামার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। এই প্রসঙ্গে অরবিন্দ বলেন, ‘‘কাটমানির টাকায় পিসি-ভাতিজার ফ্ল্যাট, বাড়ি, সম্পত্তি হয়েছে। তাই কাটমানি ইস্যুতে দুশ্চিন্তায় পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। এখনই যদি এ রাজ্যে নির্বাচন হয় তাহলে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই’’। তিনি জানিয়ে দেন, তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক আন্দোলন আরও বাড়বে। তাঁর মতে, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট না দিতে দেওয়ায় মানুষ ক্ষোভ উগরে দিয়েছে লোকসভা নির্বাচনে’’।
কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ অপচয় নিয়েও তোপ দেগেছেন বিজেপির এই কেন্দ্রীয় নেতা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মমতা-যুবরাজ শুধু টাকা রোজগার ছাড়া কিছু করছে না বাংলার জন্য। কেন্দ্রীয় যোজনার টাকা নয়ছয় হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এসব বুঝতে পারছে। কেন্দ্রের প্রকল্পের নাম বদল করে দিচ্ছে রাজ্য। বাংলাকে এই সরকার পিছিয়ে দিচ্ছে। ৫ লক্ষ টাকার গরিবের স্বাস্থ্যবিমার সুযোগ পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। এদিকে ভাইপো চিকিৎসা করাতে বিদেশ যাচ্ছেন’’।