দেবশ্রীকাণ্ডে এবার বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে মুখ খুললেন রাজ্য বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘‘বৈশাখীদেবী রাজনৈতিকভাবে অনভিজ্ঞ। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বলছি, দয়া করে দেবশ্রী রায়কে দলে নিন...বাংলা প্রেমের জায়গা, পরকিয়ার জায়গা নয়।পরের স্বামীকে নিয়ে সব জায়গায় উনি ঘুরবেন, এটা বাংলার মানুষ মেনে নেবে না। তাই আমরা দেবশ্রী রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি’’।’, বর্ধমানের একটি সভায় এমন মন্তব্যই করেছেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। জয়ের মন্তব্যের পাল্টা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বললেন, ‘‘অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ, নিম্নরুচির মানুষ কী বলেছেন, তা নিয়ে কথা বলতেই আমার রুচিতে লাগছে। হাতির লাঠি সহ্য করতে পারি, কিন্তু চামচিকির দাঁতখিঁচুনি সহ্য করা সম্ভব নয়। দিলীপদা, অরবিন্দ মেননজিকে জানিয়েছি বিষয়টি। রাজনৈতিক মঞ্চে রাজনৈতিক কথা বলুন। উনি যেভাবে নিজের স্ত্রীর সম্পর্কে অবমাননাকর কথা বলেন, তাতে বোঝা যায় উনি মহিলাদের সম্পর্কে কী ভাবেন’’।
দেবশ্রী ইস্যুতে বৈশাখীকে আক্রমণ বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের#BaisakhiBanerjee #JoyBanerjee #DebashreeRoy https://t.co/I4HBeRAoo9 pic.twitter.com/DpI70V49K0
— IE Bangla (@ieBangla) September 9, 2019
আরও পড়ুন: ‘বৈশাখীর অভিমানের কারণ কি শোভনের পুরনো বান্ধবী?’
ঠিক কী বলেছেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়?
বর্ধমানের একটি সভায় জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় একজন আনকোরা মহিলা, যাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই, বিজেপিতে এসেছেন। শর্ত দিয়েছেন, দেবশ্রীকে নেওয়া যাবে না। আমার প্রথম ছবি ‘অপরূপা’র নায়িকা ছিলেন দেবশ্রী রায়। তিনি গ্ল্যামার ক্যুইন, তাঁর মুখ বাংলার মানুষ চেনেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও রাজ্য নেতৃত্বকে বলছি, দয়া করে দেবশ্রীকে নেন। তাতে যদি বৈশাখী চলে যান, তো চলে যাবেন। শোভন চট্টোপাধ্যায় চলে গেলে চলে যাবেন’’। এরপরই শোভন-বৈশাখীকে বিঁধে জয় বলেন, ‘‘বাংলা প্রেমের জায়গা, পরকিয়ার জায়গা নয়। পরের স্বামীকে নিয়ে সব জায়গায় উনি ঘুরবেন, এটা বাংলার মানুষ মেনে নেবে না। তাই আমরা দেবশ্রী রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি’’।
আরও পড়ুন: বৈশাখীই ব্ল্যাকমেল করছেন, শোভনের কোনও হাত নেই: রত্না
ঠিক কী বলেছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়?
জয়ের মন্তব্যের পাল্টা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বললেন, ‘‘অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ, নিম্নরুচির মানুষ কী বলেছেন, তা নিয়ে বলতেই আমার রুচিতে লাগছে। হাতির লাঠি সহ্য করতে পারি, কিন্তু চামচিকির দাঁতখিঁচুনি সহ্য করা সম্ভব নয়। দিলীপদা, অরবিন্দ মেননজিকে জানিয়েছি বিষয়টি। রাজনৈতিক মঞ্চে রাজনৈতিক কথা বলুন। বাংলা সিনেমার অন্ধকারযুগে দু-একটা ছবি করেছেন। ওঁর ছবি দেখার দুর্ভাগ্য হয়নি। উনি আসলে শোভন-বৈশাখীকে বেছে নিয়েছেন শিরোনামে আসার সহজ উপায় হিসেবে, যাতে ওঁর নাম কেউ জানতে পারেন। তাই ওঁর কথায় পাত্তা দিচ্ছি না’’। জয়কে আক্রমণ করে বৈশাখী আরও বলেন, ‘‘উনি ওঁর স্ত্রী সম্পর্কেই অবমাননাকর কথা বলেন, তাতেই বোঝা যায় উনি মহিলাদের সম্পর্কে কী ভাবেন। ওঁর মনজুড়ে আবর্জনা রয়েছে , স্বচ্ছ ভারত অভিযানে নাম লেখান, নিজের মনটা পরিষ্কার করুন’’। বৈশাখী আরও বলেন, ‘‘দিলীপদা আন্তরিক। সেখানে দাঁড়িয়ে উনি যা করছেন, জয়প্রকাশ দা যা করছেন, বিজেপি দলের সংস্কৃতি ওঁরা বুঝে উঠতে পারেননি, তাই ওঁদের জনভিত্তি গড়ে ওঠেনি’’। এ প্রসঙ্গে দিলীপের ‘ডাল-ভাত’ ও ‘নতুন বউ’ মন্তব্যের প্রসঙ্গে বৈশাখী বলেন, ‘‘ডাল-ভাত হয়তো লঘু কথা বলেছেন, সেদিনই আমার বক্তব্য জানিয়েছি। আর নতুন বউ উপমা দিয়েছেন, যার মধ্যে শ্লেষ, কদর্য মানসিকতা রয়েছে বলে মনে হয় না। পরিবারে (বিজেপিতে) তো আমরা সত্যিই নতুন’’। উল্লেখ্য, ডাল-ভাত মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে দিলীপের পাশে বসে বৈশাখী সেদিন যথেষ্ট ‘অসন্তুষ্ট’ হয়েছিলেন বলে মনে করেছিল রাজনৈতিক মহলের একাংশ। সেই প্রেক্ষিতে এদিন দিলীপের মন্তব্য প্রসঙ্গে যে ভাষায় মুখ খুললেন বৈশাখী, তা রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত রাজনীতির কারবারিদের একাংশের।
প্রসঙ্গত, রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক তথা একদা টলিউডের ‘পয়লা নম্বর’ নায়িকা দেবশ্রী রায়ের বিজেপিতে যোগদান ঘিরে চর্চা তুঙ্গে বঙ্গ রাজনীতিতে। ক’দিন আগে শোভন-বৈশাখীর ‘আপত্তি’ অগ্রাহ্য করে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষই বলেছেন, ‘‘দেবশ্রীকে দলে নিয়ে নেব’’। কিছুদিন আগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘‘দেবশ্রীকে নিয়ে কার আপত্তি শোভন না বৈশাখীর? দেবশ্রীকে নিলে কি বৈশাখীদেবীর অভিমান হবে?’’ সূত্রের খবর, রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একাংশই দেবশ্রীকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছেন। এমতাবস্থায় জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের এহেন মন্তব্যে নতুন মাত্রা যোগ করল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।