Advertisment

মুকুল-তৃণমূল নেতা সাক্ষাৎ, কী কৌশল দেখছে রাজনৈতিক মহল

তৃণমূলের ব্লক সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের। নতুন করে জল্পনা শুরু রাজনৈতিক মহলে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

মুকুল রায়ের সঙ্গে এক ফ্রেমে নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি বিভাস অধিকারী।

তৃণমূলের ব্লক সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের। নতুন করে জল্পনা শুরু রাজনৈতিক মহলে। যখন মুকুলের তৃণমূল যোগ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তিনি তৃণমূলে যাবেন না বলে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন, তারপরেও তৃণমূল নেতার সঙ্গে দেখা হওয়ায় বাংলার রাজনীতিতে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। দুই নেতাই ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা বললেও কথায় আছে দু'জন রাজনৈতিক নেতা যখন মিলিত হন তখন রাজনীতির কোনও আলোচনা হবে না তা সম্ভব নয়।

Advertisment

রবিবার বীরভূমের নলহাটিতে সৎসঙ্গ মন্দিরে যান বিজেপির জাতীয় কর্ম সমিতির সদস্য মুকুল রায়। সেই মন্দিরের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি বিভাস অধিকারী। তাঁর সঙ্গে একফ্রেমে দেখা যায় মুকুল রায়কে। সেখানে তৃণমূল ও বিজেপির নানা স্থরের নেতা ও কর্মীরাও হাজির হয়ে যান। অনুব্রত মন্ডলের গড়ের এই ঘটনা চাউড় হতেও বাংলার রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়। যদিও মুকুল রায়ের বক্তব্য, "এখানে কৈলাশ বিজয়বর্গীয় এসেছিলেন। এটাকে রাজনীতি ভাবলে হবে না। এখানে যিনি দেখভাল করেন তিনি তৃণমূলের সভাপতি। বিগত লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসন ও প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট শুধু কী বিজেপির ভোটে হওয়া সম্ভব? মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক অন্য বিষয়।" তিনি বলেছেন, "বিভাসকে চিনি। ভাল মানুষ, এলাকায় ভাল কাজ করেন।" "তাহলে ব্যক্তিগত সম্পর্ক কী চলে যাবে?" প্রশ্ন মুকুল রায়ের।

বিভাসবাবুরও দাবি এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়। তিনি বলছেন, "আমি যখন অ্যাপোলোতে ভর্তি ছিলাম সবাই গিয়েছেন। মুকুলদার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক। তাই তিনি এসেছেন। কোন দল বা জাতের বিষয় নেই। পার্টির ওপর ধর্মকে ভালবাসি। কেউ যদি রাজনীতির কথা ভাবে ভাবতে পারে।" দুই নেতার এমন বক্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক থেমে গিয়েছে তা ভাববার কোনও কারণ নেই।

এই সাক্ষাৎ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তর বাড়িতে গিয়ে লুচি-আলুরদম খেয়ে এসেছিলেন মুকুল রায়। তখনও কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল! তারপরের ঘটনা সবার জানা। এমন অজস্র ঘটনা রয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, সামনেই ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন। রাজ্য বিজেপির অন্দরের ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চিন্তিত। মুকুল রায়ের তৃণমূল যোগের  বিষয়ে রাজ্য-রাজনীতি তোলপাড়। স্বভাবতই এমন একটা সময়ে তৃণমূলের ব্লক সভাপতির সঙ্গে এক ফ্রেমে ধরা পড়লে বিতর্ক বাড়তে বাধ্য।

রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, ওই তৃণমূল নেতা বিজেপিতে যোগ দেবেন কীনা সেই প্রশ্ন উঠলেও অন্য একটা বড় দিক রয়েছে। অভিজ্ঞ মুকুল রায় কী এটা জানেন না যে, কোনও তৃণমূল নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ বিতর্ক সৃষ্টি করবে? এর পিছনে বিশেষ রাজনৈতিক কৌশল দেখছেন অভিজ্ঞ মহল। তাঁরা মনে করছেন, দলকে বার্তা দিতে চাইলেন এই প্রবীণ রাজনীতিক। সাক্ষাতের মাধ্যমে কার্যত বিজেপির ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। যেসব তৃণমূল নেতা মুকুল রায় প্রসঙ্গ এলেই কড়া ভাষায় আক্রমণ করতেন, যার কোনও সীমারেখা থাকত না। ইদানিং তেমন আক্রমণের ভাষাও শোনা যাচ্ছে না। এটাও ইঙ্গতিবাহী বলে মনে করেন রাজনৈতিক মহল।

এদিন মুকুল রায় বলেছেন বিগত লোকসভা নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোটপ্রাপ্তি শুধু কী বিজেপির ভোটে হওয়া সম্ভব? মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক অন্য বিষয়। অভিজ্ঞ মহলের মতে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন বাংলা রাজনীতির 'চানক্য'। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, ওই ফলাফলের কৃতিত্ব শুধু বিজেপি নেতাদের নয়। মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের খাতিরে বিজেপির সঙ্গে যাঁরা যুক্ত নয়, তাঁরাও ভোট দিয়েছেন বিজেপিকে। যার ফল ১৮টি লোকসভার আসনে বিজেপির জয়। কাদের উদ্দেশে একথা বললেন মুকুল রায়? অর্থাৎ ২০১৯-এর সাফল্য নিয়ে যাঁরা বরাই করেন তাঁরাই যে এই বক্তব্যের লক্ষ্য তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আবার সেকথা বলছেন তৃণমূল নেতার উপস্থিতিতে। তৃণমূল নেতার সঙ্গে শুধু সাক্ষাৎ নয়, সেই নেতার কাজের ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন তিনি। তদুপরি ২০১৯-এ শুধু বিজেপি দলের ভোটে সাফল্য পায়নি, তা বলতেও দ্বিধা করেননি মুকুল রায়।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

tmc bjp mukul roy Birbhum
Advertisment