কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদান প্রসঙ্গে বড় জল্পনার জন্ম দিলেন একদা তাঁরই সতীর্থ মুকুল রায়। বিগত কয়েক মাস ধরে বঙ্গ রাজনীতিতে শোভনের পদ্মযোগ নিয়ে বিস্তর চর্চা চলেছে। তবে এবার এ বিষয়ে স্বয়ং মুকুল রায় মুখ খোলায় তা বিশেষ মাত্রা পেল বলে মনে করা হচ্ছে। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কথা হয়েছে, এমন চাঞ্চল্যকর কথা স্বীকার করে নিয়েছেন মুকুল। তবে শোভন শেষ পর্যন্ত বিজেপিতে যোগ দেবেন কি না, সেটা শোভনেরই সিদ্ধান্ত বলেও জানিয়েছেন মুকুল।
ঠিক কী বলেছেন মুকুল রায়?
মুকুল রায় বলেন, "শোভন চট্টোপাধ্যায় দলে (তৃণমূলে) গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। শোভনের সঙ্গে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কথা হয়েছে বলে জানি। তবে শোভন কী করবেন, সেটা তাঁর ব্যাপার’’।
আরও পড়ুন: তৃণমূলে ফেরার প্রশ্নই নেই, ভাল লোকেরাই দল ছাড়ছে: বৈশাখী
প্রসঙ্গত, স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাংসারিক বিবাদ প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সক্রিয় রাজনীতি থেকে ক্রমশ সরতে থাকেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শোভনের সম্পর্ক নিয়েও জোর চর্চা চলে বঙ্গ রাজনীতির অলিন্দে। শোভন চট্টোপাধ্যায় কাজে ‘অমনোযোগী’ হয়ে পড়েছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ সময় নিজের দল তৃণমূলের সঙ্গেও দূরত্ব বাড়ে 'দিদির কাননে'র। 'বিরক্ত' মমতা এরপর নিজেই শোভনকে মন্ত্রীপদ ছাড়তে বলেন। দলনেত্রীর আদেশানুসারে মন্ত্রীর কুর্সি থেকে সরে যান শোভন চট্টোপাধ্যায়। এরপর কলকাতার মেয়র পদ থেকেও ইস্তফা দেন তিনি। তবে দলের সঙ্গে সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষীণ হয়ে গেলেও কাউন্সিলর ও তৃণমূলের বিধায়ক পদে থেকে গিয়েছেন শোভন।
এদিকে, সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের সময় শোভন চট্টোপাধ্যায়কে বিজেপি প্রার্থী করার প্রস্তাব দিয়েছে বলে খবর ছড়ায়। লোকসভা ভোট মেটার পরও একাধিকবার শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপি যোগাযোগ করছে বলে চর্চা চলে রাজনৈতিক মহলে। যদিও কখনই প্রকাশ্যে বিজেপিতে যোগদান নিয়ে কোনও মন্তব্য বা ইঙ্গিত দেননি কলকাতার প্রাক্তন মেয়র।
আরও পড়ুন: ‘প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণাদের ডেকে বলছে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে যোগযোগ করো’
সম্প্রতি, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে গভীর রাতে ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। জানা যায়, তিনি যে দলে বিশেষভাবে সক্রিয় হতে অনিচ্ছুক সেই বার্তা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে স্পষ্টভাবেই দেন শোভন। এই বৈঠক প্রসঙ্গে পরে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বৈশাখী বলেন, "এটা বৈঠকই ছিল না। উনি এসেছেন ওঁর সহকর্মীর কাছে। পার্থদার সঙ্গে কথা হয়েছে। বৈঠক হিসেবে দেখাটা ঠিক নয়।"
এরপরই বৈশাখী তাঁর নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন। তিনি বলেন, "আমার তৃণমূলে ফেরার কোনও প্রশ্নই নেই। যাঁরা তৃণমূল ছাড়ছেন তাঁরা ভাল লোক, তাঁদের সঙ্গে আমার ভাল যোগাযোগ রয়েছে। তাঁরাই তো থাকছেন না।" তবে শোভনবাবু যে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেবেন, সেকথাও জানিয়ে দেন পেশায় কলেজের অধ্যক্ষ বৈশাখী।
আরও পড়ুন: ‘স্বামীর কথায় নুসরত কি বিজেপিতে যাচ্ছেন?’
এদিকে, রাজনৈতিক মহলে কান পাতলে শোভনের বিজেপি যোগ নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব উঠে আসছে। একাংশের মতে, হেভিওয়েট দায়িত্ব পেলেই একমাত্র শোভন বিজেপিতে যোগ দেবেন। এদিকে বঙ্গ বিজেপিতে এখন দিলীপ ঘোষ এবং মুকুল রায় শিবিরের স্পষ্ট বিভাজনের কানাঘুষো শোনা যায়। তবে মুকুলের সঙ্গে শোভনের কোনও কালেই তেমন সুসম্পর্ক ছিল না বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। ফলে বিজেপিতেও মুকুল ব্রিগেডের সৈনিক হয়ে যোগ দিতে অনিচ্ছুক শোভন।
অন্যদিকে, রাজনীতিতে 'নবাগত' দিলীপ ঘোষের ছত্রছায়ায় থেকেও রাজনীতি করতে আগ্রহী নন কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক। একদা তৃণমূলের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার দাপুটে সভাপতি শোভন নিজেকে ‘বড় নেতা’ হিসেবেই মনে করেন, বলে জানা যায়। সেক্ষেত্রে তিনি বিজেপিতে গেলে সেরকম কোনও উঁচু পদের দাবিদার হতে চাইবেন বলেই খবর। তবে তৃণমূলের সঙ্গে শোভনের দূরত্ব যেভাবে বাড়ছে, তাতে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মুকুল রায়ের এহেন বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের।