জাতীয় ভোটার দিবসের অনুষ্ঠানে খোদ বিধানসভায় দাঁড়িয়েই রাজ্য সরকারকে তুলোধনা রাজ্যপালের। প্রশাসনিক কর্তাদেরও এদিন নিশানা করেছেন রাজ্যপাল। যদিও রাজ্য সরকারকে নিশানা করে ধনকড়ের করা একের পর এক মন্তব্যে কোনও 'ভুল' দেখতে পাচ্ছেন না বিরোধী দলনেতা। তাঁর কথায়, ''যা বলেছেন ঠিক বলেছেন। রাজ্য সরকার আমলাদের নিয়ে ক্রমাগত রাজ্যপালকে নিশানা করছে। তাই আমলাদেরও সতর্ক করেছেন তিনি। এতে ভুলটা কোথায়?''
জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে বিধানসভায় সংবিধান-প্রণেতা বি আর আম্বেদকরকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। সেখানেই বক্তৃতা রাখতে গিয়ে ধনকড় তীব্র ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন রাজ্য সরকারকে। তাঁর নিশানা তে বাদ পড়েননি অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
ধনকড় এদিন বলেন, ''পশ্চিমবঙ্গে ভোটারদের স্বাধীনতা নেই। নিজের মতে ভোট দিতে গিয়ে এখানে জীবন পর্যন্ত দিতে হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা ভয়াবহ। এখানে আইনের শাসন নেই, শাসকেরই আইন চলছে। সংবিধান মেনে চলেন না এখানকার সরকারি আধিকারিকরা। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যপাল হিসেবে আমি উদ্বিগ্ন।''
অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে দুষে রাজ্যপাল বলেন, ''যখন যা মনে হয় তাই বলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ। আমি বেশ কয়েকবার তাঁর কাছে নানা তথ্য জানতে চেয়েও পাইনি। সংবিধান-বিরোধী কাজ করছেন অধ্যক্ষ। রাজ্যপালকে এড়িয়ে যেতে পারেন না অধ্যক্ষ।'' এছাড়াও রাজ্যের মুখ্যসচিব, ডিজিপি-ও রাজ্যপালের প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান বলে এদিন অভিযোগ করেছেন ধনকড়।
আরও পড়ুন- ‘শাসকের আইন বাংলায়, রাজ্যপাল হিসেবে উদ্বিগ্ন’, ধনকড়ের মন্তব্যের সমালোচনায় অধ্যক্ষ
অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীও রাজ্যপালের এদিনের বক্তব্যের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। তবে রাজ্যপালের বক্তব্যে সহমত পোষণ করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি এদিন বলেন, ''সংবিধান সম্পর্কে রাজ্যপালের জ্ঞান নিয়ে আশা করি কেউ কোনও প্রশ্ন তুলবেন না। তিনি সুপ্রিম কোর্টের কৃতী আইনজীবী। আগে বিধায়ক ও সাংসদও ছিলেন। আজ যা বলেছেন তা তাঁর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। এখানে বহুদলীয় ব্যবস্থা রয়েছে। তৃণমূল জিতে সরকারে রয়েছে বলে যা ইচ্ছে তাই করবে, আর বিরোধী বলে বিজেপির লোকেরা মার খাবে এটা চলতে পারে না। এই বিষয়টিকেই চ্যালেঞ্জ করেছেন রাজ্যপাল।''
শুভেন্দু এদিন আরও বলেন, ''আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশে দাঁড়িয়ে তাই রাজ্যপাল যা বলেছেন তা সঠিক। ভোট পরবর্তী হিংসা, আইনের শাসন না থাকার কথা বলেছেন রাজ্যপাল। কেউ এ রাজ্যের পরিস্থিতি বিচার করলেই তার প্রমাণ পাবেন। আর রাজ্য সরকার আমলাদের নিয়ে ক্রমাগত রাজ্যপালকে নিশানা করছেন। তাই আমলাদেরও সতর্ক করেছেন তিনি। এতে ভুলটা কোথায়?'' শুভেন্দুর পাশাপাশি রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও রাজ্যপালের মন্তব্যের পাশে দাঁড়িয়েছেন।