তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপির পর্যবেক্ষণ বৈঠকে হারের বেশ কয়েকটি কারণ উঠে এসেছে। শনিবার ৬, মুরলি ধর লেনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দলের সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। সেই বৈঠকে এনআরসি ছাড়া বেশ কিছু স্থানীয় ইস্যুকে ওই তিন কেন্দ্রের পরাজয়ের কাঠগড়ায় তুলে ধরা হয়েছে। একইসঙ্গে খড়গপুর, করিমপুর ও কালিয়াগঞ্জে হারের কারণ জানতে তিনজন সাধারণ সম্পাদক আগামী সপ্তাহে ওই কেন্দ্রগুলোতে যাবেন। সেখানে গিয়ে হারের কারণ সম্বন্ধে খোঁজ-খবর নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট দেবেন। তারপর সেই রিপোর্ট নিয়ে বৈঠকে বসবে রাজ্য বিজেপি।
রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, খড়্গপুরে যাচ্ছেন সায়ন্তন বসু, করিমপুরের দায়িত্ব পেয়েছেন সঞ্জয় সিং ও কালিয়াগঞ্জ এর খোঁজখবর নিতে যাচ্ছেন রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে চলতি বছরে লোকসভার ফলের নিরিখে জয় একেবারে নিশ্চিত ছিল, এমনটাই মনে করেছিল রাজ্য বিজেপি। কিন্তু সেই বিপুল ব্যবধান ঘুচিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস জয় লাভ করে। ভোটে হারার পরে কালিয়াগঞ্জ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কমল চন্দ্র সরকার ঘোষণা করেছিলেন, এনআরসির জন্যই এই পরাজয়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছিলেন, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এই বিধানসভা কেন্দ্রে এনআরসি একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষণ বৈঠকে শুধু এনআরসিকে দায়ী করা হয়নি। পাশাপাশি স্থানীয় পঞ্চায়েতের নানা কার্যকলাপ ও দলীয় সাংগঠনিক বিষয় দুটি উঠে এসেছে। রাজ্য বিজেপি পর্যালোচনায় সেক্ষেত্রে ওই বিধানসভা কেন্দ্রে কী কী ত্রুটি ছিল, কেন লোকসভায় বিপুল ভোটে এগিয়ে থেকেও বিধানসভার উপনির্বাচনে হারতে হল তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে, তারই ময়নাতদন্ত করতে যাচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: তৃণমূল রিগিং করেছে, আমাদের এজেন্টরা ভয়ে কথা বলেননি, আসল লড়াই একুশে: দিলীপ ঘোষ
খড়গপুর সদর বিধানসভা কেন্দ্রে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৪৫ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল। শুধু তাই নয় ২০১৬ -তে এই বিধানসভায় জয়ী হয়োছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। গেরুয়া শিবির ধরে নিয়েছিল এই কেন্দ্রেও জয় নিশ্চিত। কিন্তু ২৮ নভেম্বর উপ নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেখা গেল ২০ হাজারেরও বেশি ভোটে জয় পেয়েছে তৃণমূল প্রার্থী। খড়গপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তেলুগু ও অন্যান্য অবাঙালি সব মিলিয়ে বাঙালি ভোটারের থেকে অনেকটাই বেশি। সে ক্ষেত্রে কী এমন ঘটল যে ভোটাররা বিজেপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। উপনির্বাচনে মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ খড়গপুর কেন্দ্রে নিজে দিনরাত প্রচার করেছেন। পাশাপাশি নির্বাচনের দিন খড়্গপুরের পরিচিত এমএলএ বাংলোতে সারাদিন নিজে থেকে দলকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করে গেছেন। তা সত্ত্বেও হারাতে হয়েছে খড়গপুর বিধানসভা। কেন খড়্গপুরের ভোটাররা বিজেপিকে ভোট দিলেন না? তাছাড়া স্থানীয় সাংগঠনিক ক্ষেত্রে কি কি খামতি ছিল? প্রার্থী মনোনয়নে কোনরকম সংশয় ছিল কিনা? রেল কলোনীর ভোটাররা কোন দিকে ঝুঁকলেন? এইসব খতিয়ে দেখবে দল। এই কেন্দ্রে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বিজেপির অন্তর্কলহ প্রকাশ্যে চলে আসে। বিজেপির অন্যতম কার্যকর্তা প্রদীপ পট্টনায়েক এখানে বিক্ষুব্ধ প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে যান। খড়্গপুরের হারের ময়নাতদন্ত করতে সেখানে যাচ্ছেন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু।
আরও পড়ুন: এনআরসি ভীতিই ভোটে জিতেছে, মমতার বিশ্লেষণে সিলমোহর বিজেপিরও
দলের আরেক সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সিং যাচ্ছেন করিমপুর। এই কেন্দ্রে পরাজয় হলেও উপনির্বাচনে বিজেপি তাদের ভোট বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। যদিও এখানে জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এই এলাকায় একদিকে যেমন এনআরসি প্রভাব ফেলতে পারে পাশাপাশি এখানে মুসলিম ভোটারের সংখ্যাও অনেক বেশি। এইসব খতিয়ে দেখবে রাজ্য বিজেপি। হারের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এক সপ্তাহের মধ্যে জমা পড়ে যাবে। তারপরে এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
বিজেপি মনে করছে, কালিয়াগঞ্জ কেন্দ্রে কংগ্রেসের একটা বড় অংশের ভোটার এবার তৃণমূল কংগ্রেসে ভোট দিয়েছে। পাশাপাশি বিজেপির ৫% ভোট কমে গিয়েছে। সেই হিসেবে প্রায় ১৫ হাজার ভোট কম পেয়েছে বিজেপি।কেন এই ভোট কমে গেল? তার বিশ্লেষণ করবে। তৃণমূল কংগ্রেস এই উপনির্বাচনে নআরসি সহ নানা বিষয়ে ভ্রান্ত প্রচার করেছে। তিন বিধানসভা কেন্দ্রে তিন সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট হাতে আসার পর ফের বৈঠকে বসবে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।