একদিকে যখন দিল্লিতে জেপি নাড্ডার সঙ্গে বৈঠক করছেন দিলীপ ঘোষ, ঠিক তখনই সল্টলেকের বাড়িতে মুকুল রায়ের সঙ্গে বৈঠক করলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। দলের সর্বভারতীয় সভাপতির সঙ্গে রাজ্য সভাপতির বৈঠকের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষকের সঙ্গে দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যের বৈঠকে রবিবার জল্পনা ছড়ায় বিজেপির অন্দরমহলে। একইসঙ্গে কেন এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক তা নিয়েই চর্চা চলছে রাজনৈতিক মহলে। বৈঠকের পরই দেখা গিয়েছে সোমবার সাংগঠনিক বৈঠকে সক্রিয় হচ্ছেন মুকুল রায়। করোনা পরিস্থিতিতে দলের দু'একটি বড় অনুষ্ঠান ছাড়া দলের সাংগঠনিক ক্ষেত্রে তাঁকে তেমন একটা দেখা যাচ্ছিল না।
বিজেপির অদরমহলে বেশ কয়েকদিন ধরেই কথা উঠছিল এরাজ্যে দলের একাংশ সক্রিয় ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে না। পাশাপাশি এমনও চর্চা হচ্ছিল যে দিল্লিতে গিয়ে অনেক নেতাই দরবার করছিলেন রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। সামনে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন। জানা গিয়েছে, তার আগে দলের অন্দরে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় স্বভাবতই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তড়িঘড়ি একদিনে দু'টি বৈঠক বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন রাজনীতির কারবারিরা।
বাংলার রাজনীতিতে এখনও গুঞ্জন রয়েছে জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায় কি পুরনো দলে ফিরে যাচ্ছেন? কেন তিনি বৈঠকের মাঝখানে দিল্লি থেকে ফিরে এসেছেন? সেই সময় মুকুল রায় নিজে ও দিলীপ ঘোষ জানিয়েছিলেন চোখের চিকিৎসার জন্য কলকাতা ফিরে যেতে হয়েছে। তবু জল্পনা বন্ধ হয়নি। এইসব গুঞ্জনের প্রেক্ষিতে মুকুল রায়কে সাংবাদিক বৈঠক পর্যন্ত করতে হয়। কিন্তু তারপরেও যথারীতি নানা ধরনের গুঞ্জন ছড়াতে থাকে এবং তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে আসা বেশ কয়েকজন নেতা ফিরে যান পুরনো শিবিরে। এরফলে জল্পনা চলতেই থাকে।
মুকুল রায় সহ অনেকেই কেন সক্রিয় নয় তা নিয়েই মূলত রাজনৈতিক মহলে নানা ধারণা তৈরি হয়। মুকুল রায়ের ক্ষেত্রে দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, করোনা আবহে তাঁকে বাড়ি থেকে না বেরতে বলা হয়েছে। দলের কিছু অনুষ্ঠানে তিনি থেকেছেন। মুকুল রায়ও নানা সময়ে বলেছেন লকডাউনের সময় তিনি রাজনীতিতে বেশি দৌড়ঝাঁপ করতে চান না। তবে স্থানীয় স্তরে তিনি সক্রিয় আছেন। এক্ষেত্রেও জল্পনা কিন্তু কমেনি। তবে অন্যদের দল কর্মসূচি দিচ্ছে না তা ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। তিনি ময়দানে থেকে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করার কথা বলেছেন। তাছাড়া কার কার কী কর্মসূচি ছিল সেই তালিকা তাঁর কাছে আছে বলেও জানিয়ে দেন।
এদিকে রবিবারে কৈলাশ বিজয়বর্গীর সঙ্গে বৈঠকের পরই সোমবার সাংগঠনিক বৈঠক করবেন মুকুল রায়। সূত্রের খবর, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছে, এরাজ্যে দলের একটা অংশ সক্রিয় না থাকায় নানা ধরনের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। দল মনে করে, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বঙ্গ জয়ের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। তার আগে দল বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, শেষমেশ রবিবার দুটে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সেই জটিলতা কাটানোর চেষ্টা করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
নানা ধরনের চর্চা হতে থাকে বঙ্গ বিজেপি রাজনীতিতে যার ফলস্বরূপ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে রবিবার জেপি নাড্ডার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক হয় দিলীপ ঘোষের। সুত্র মারফৎ জানা গেছে, সেখানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলের সমস্ত নেতৃত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মসূচি নিতে হবে। তখনই কলকাতায় দলের রাজ্য পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বৈঠক করেন মুকুল রায়ের সঙ্গে। কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে মুকুল রায়ের রাজনৈতিক সমীকরণ সুবিদিত।
ধোঁয়াশা কাটাতে এর আগে মুকুল রায়কে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বলতে হয়েছে তিনি বিজেপিতে আছেন। দিলীপ ঘোষ বলেছেন, মুকুল রায় বিজেপিতে আছেন বলেই তিনি জানেন। এদিকে গতকালের বৈঠকের পরে দেখা যাচ্ছে সোমবার হেস্টিংসে সাংগঠনিক বৈঠক করার কথা রয়েছে মুকুল রায়ের। দীর্ঘদিন ধরেই দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তিনি সক্রিয় ছিলেন না। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সংগঠিতভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াই করার বার্তা দিল কেন্দ্রীয় বিজেপি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন