শবদেহ নিয়ে রাজপথে আন্দোলনে বিজেপি, প্রকট মুকুল-দিলীপ দূরত্ব!

বিজেপির যুব নেতা মণীশ শুক্লর খুনের ঘটনার পর বিজেপির অন্দর্মহলের চিত্র বেশ স্পষ্ট হয়ে গেল।

বিজেপির যুব নেতা মণীশ শুক্লর খুনের ঘটনার পর বিজেপির অন্দর্মহলের চিত্র বেশ স্পষ্ট হয়ে গেল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বিজেপির যুব নেতা মণীশ শুক্লার খুনের ঘটনার পর বিজেপির অন্দরমহলের চিত্র বেশ স্পষ্ট হয়ে গেল। এদিন সারা দিন কোথাও দেখা গেল না দিলীপ ঘোষ-সহ রাজ্য বিজেপির শীর্ষ কর্তাদের একটা বড় অংশকে। এমনকী এর আগে মুকুল রায়ের সংবর্ধনা সভায়ও দেখা যায়নি রাজ্য বিজেপির অনেক কার্যকর্তাকেই। তাছাড়া সোমবার দিনভর মণীশ শুক্লার পরিবারের লোকের সঙ্গে দেখা করা, মর্গে তদারকি করা বা কলকাতার পথে শবদেহ নিয়ে রাজভবনে যাওয়ার সময়ও রাজ্য বিজেপির একটা অংশ গড়হাজির ছিলেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, টুইটে প্রতিবাদ করলেও কার্যক্ষেত্রে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা নেতাদের সঙ্গে অনেকটা দূরত্ব বজায় রাখলেন রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। অভিজ্ঞ মহলের মতে, দলের কার্যসূচি দেখে মনে হতেই পারে মুকুল রায় ও দিলীপ ঘোষের দূরত্ব যেন অনেকটাই প্রকট।

Advertisment

রবিবার রাতে টিটাগড়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং ঘনিষ্ঠ যুব নেতা মণীশ শুক্লা। এরপর একে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে টুইট করতে থাকেন। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষও টুইট করেন। কিন্তু সোমবার সারা দিন মণীশ শুক্লার বাড়িতে বা শববাহী গাড়ির আশপাশে পাশে দেখা যায়নি রাজ্য বিজেপির বহু নেতাকেই। কলকাতার এনআরএসে মৃতদেহের পোস্টমর্টেম হয়েছে। সেক্ষেত্রে কলকাতায় এসে প্রতিবাদে যোগ দেওয়া খুব কঠিন কাজ নয় বলেই মনে করেন রাজনীতির কারবারিরা। অনেকেই আশপাশের জেলায় দলীয় কর্মসূচিতে ছিলেন। অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, গুরুত্ব দিলেই কর্মসূচি কাটছাট করে কলকাতায় ফিরতেই পারতেন ওই নেতারা। তাহলে কারা ছিলেন মণীশ শুক্লার সঙ্গে?

আরও পড়ুন- বিজেপি কার্যালয়ের পাশেই লুকিয়ে ছিল মণীশ শুক্লার খুনি!

সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারাণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় ছাড়া এদিন বিজেপির যেসব নেতার তত্বাবধানে কর্মসূচি রূপায়িত হয়েছে তাঁরা সবাই অধুনা তৃণমূল কংগ্রেস থেকে দলে এসেছেন। বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায়, সাংসদ অর্জুন সিং, সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্ত, শঙ্কুদেব পন্ডা। এঁরা প্রত্যেকেই একসময় ঘাসফুল শিবিরে ছিলেন। রাজভবনের প্রতিনিধি দলেই ছিল একই চিত্র।

Advertisment

আরও পড়ুন- হাথরাসের ঘটনা ভয়াবহ! যোগী সরকারের কাছে জবাব তলব সুপ্রিম কোর্টের

বঙ্গ বিজেপির আন্দোলনের কর্তৃত্বের সঙ্গেই তার ধরনেও বদল ঘটেছে। সোমবারের ঘটনাতেই তা স্পষ্ট হচ্ছে। বামফ্রণ্ট আমলে কলকাতার রাস্তায় মৃতদেহ নিয়ে এসে আন্দোলন করত তৃণমূল কংগ্রেস। জেলায় দলীয় কর্মীর রাজনৈতিক সংঘর্ষে বা আক্রমণে মৃত্যু হলে সেই মৃতদেহ কলকাতার পথে নিয়ে আসা হত। চলত প্রতিবাদ। সেক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকায় থাকতেন তৎকালীন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মুকুল রায়। রাজনীতির কারবারিদের মতে, এবার সেই রাস্তায় হাটল বঙ্গ বিজেপি। তৃণমূল রাজনীতির প্রভাব স্পষ্ট। রাজভবনে নালিশ জানানো হবে বলে মণীশ শুক্লার দেহ নিয়ে এসএন ব্যানার্জী রোডে দীর্ঘক্ষণ পড়ে রইল শববাহী গাড়ি। নিউ মার্কেটের সামনে চলল ধুন্ধুমার কান্ড। সেখানেও রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাশালীদের অনেকেরই দেখা মেলেনি। দলের অন্দরেই কথা উঠেছে, শীর্ষ নেতৃত্বকে মঞ্চে যতই এক ফ্রেমে দেখা যাক না কেন বাস্তবের রূপ সম্পূর্ণ ভিন্ন। একথা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই বলেই তাঁদের অভিমত।

কৃষি বিলের সমর্থনে ও আমফান দুর্নীতির প্রতিবাদে রাজ্যের সর্বত্র মিছিল, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে বিজেপি। কিন্তু দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে মণীশ শুক্লর মৃত্যুর পর যেখানে কেন্দ্রীয় বিজেপি দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করেছে, দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক নেতৃত্ব দিচ্ছে, পোস্টমর্টেম নিয়ে হাসপাতালে ক্ষোভ- বিক্ষোভ হয়েছে, রাজ্যপালকে নালিশ সহ দিনভর কর্মসূচি চলেছে সেখানে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ কর্তাসহ অনেকেই হাজির নেই। এর ফলে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও অনৈক্যের বার্তা যাচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

mukul roy dilip ghosh bjp