এবার আর বিরোধীরা নন। যত দিন যাচ্ছে, বিজেপির পোস্টারবয় যোগী আদিত্যনাথের কড়া শাসনকে কাঠগড়ায় তুলছেন খোদ বিজেপি সাংসদরাই। যা ঘিরে চরম কোন্দলের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের যোগী শাসন। দলের অভ্যন্তরে নয়। প্রকাশ্যে যোগী সরকারকে অভিযুক্ত করছেন বিজেপির নেতা, বিধায়ক সাংসদরা। এর আগে দলের একাধিক বিধায়ক সরব হয়েছেন। এবার কাঠখোট্টা ভাষায় তীব্র আক্রমণ শোনা গেল কায়সরগঞ্জের সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের গলায়।
কী বলেছেন ব্রিজভূষণ? এককথায় যোগীর শাসনকে হিটলারি রাজের বা কিম জং উনের স্বৈরাচারী শাসনের পাশে বসিয়ে দিয়েছেন। কায়সরগঞ্জের সাংসদের কথায়, 'উত্তরপ্রদেশের জনতা স্রেফ ভগবানের দয়ার ওপর বেঁচে আছে। আমরা গলা চড়িয়ে কথা বলতে পারি না। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্রোহীর তকমা সাঁটিয়ে দেবে।'
বিরোধীরা আগে থেকেই বলছিল, যোগী শাসন মানেই পুলিশিরাজ, শাসকের বাড়াবাড়ি। আর, একইসঙ্গে প্রশাসনিক অপদার্থতার নমুনা। এই সবকটা অভিযোগকে কার্যত মেনে নিয়েছেন ঠোঁটকাটা ব্রিজভূষণ। নিজের এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণে উত্তপ্রদেশ সরকারের ব্যর্থতা তিনি বেজায় চটেছেন। সঙ্গে জুড়েছে বন্যা পরবর্তী সময়ে এলাকাবাসীর প্রশাসনকে সঙ্গে না-পাওয়া। আর, এই সব প্রশাসনিক ব্যর্থতার জন্য জনতার কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের। ক্ষুব্ধ ব্রিজভূষণের কথায়, 'এত খারাপ ব্যবস্থাপনা আর দেখিনি।'
লোকসভা ভোটের তো আর দু'বছরও বাকি নেই। এর সব কিছু কি জনতা ভুলে যাবে? সূত্রের খবর, সেসব ভেবেই এখন বিজেপি সাংসদের মেজাজ তুঙ্গে। আর, তাই যোগীকে রেয়াত করতে তিনি নারাজ। 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'কে খোলাখুলি জানালেন, 'এই সরকার কোনওরকম আলোচনা করে না।' বন্যায় তাঁর এলাকার লোকজনের দুর্গতি মিডিয়ার ভিডিওতে দেখেছেন সাংসদ। আর, তারপরই সপ্তমে চড়ে গিয়েছে তাঁর মেজাজ।
আরও পড়ুন- বচসার জেরে চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা সহযাত্রীর, বীরভূমে গুরুতর জখম যুবক ভর্তি হাসপাতালে
দলের সরকারের বিরুদ্ধেই মিডিয়ার সামনে বলা শুরু করলেন, 'দুঃখের ব্যাপার হল যে আমরা মনের কথা খোলসা করতে পারি না। বলা পুরোপুরি বন্ধ। শুধু শুনতে হয়। জনপ্রতিনিধিদেরকে পর্যন্ত মুখ বন্ধ করে থাকতে হয়। বলতে গেলেই বলবে বিদ্রোহী। পরামর্শ দিতে গেলে কেউ শুনবে না। বৈঠকে জেলা প্রশাসনকে পইপই করে বলা হল, সমস্যাটা কোথায়। হাতে তথ্য তুলে দেওয়া হল। গুরুত্বই দিল না।'
শুধু এতেই থামতে নারাজ ব্রিজভূষণ। অবশ্য বরাবরই তিনি এমন সোজাসাপটা, মারকাট্টা। জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন জাতীয় কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপে। প্রকাশ্যে চড় মেরেছিলেন তরুণ এক কুস্তিগিরকে। কুস্তির টুর্নামেন্টে হাজির থেকে মাইক নিয়ে রেফারিকে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন বহুবার। কুস্তির টুর্নামেন্টে বিচারকদের দিকে আইনের বই ছুড়ে মেরেছেন। এমন একের পর এক কীর্তি আছে তাঁর। সেসব নিয়ে অবশ্য কম জলঘোলা হয়নি। সেই ব্রিজভূষণ যে নিজের সরকার বলে যোগীদের রেয়াত করবেন, এতটা আশা অবশ্য উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনও করে না। কিন্তু, তাই বলে এভাবে প্রকাশ্যে সরব হওয়া?
ব্রিজভূষণ বলেন, 'এবার জল আগের বছরের চেয়ে দু'ফুট বেড়েছে। কিন্তু, অফিসাররা সরকারকে ভুলভাল রিপোর্ট লিখছে। এই করছি, সেই করছি বলছে। বাস্তবে, বন্যার্তদের জন্য একফোঁটাও কাজ করেনি।' ব্রিজভূষণের নিজের গ্রাম গোন্ডা জেলার বিষ্ণোহরপুরও বন্যায় ভেসেছে। অযোধ্যার কাছে সরযূ নদীর ওপর একটা ব্রিজও ভেসে গেছে বন্যায়। তা নিয়েও চরম ক্ষুব্ধ ব্রিজভূষণ বললেন, 'দু'বছর ধরে কর্তৃপক্ষকে ব্রিজটা নিয়ে বলছিলাম। কমপক্ষে ১০টা চিঠি দিয়েছি। বলেছি, দয়া করে ব্রিজটা বাঁচান। কিছুই করেনি।'
এসব বলার পরই সোজা সরকারকে তোপ দেগে বললেন, 'এর আগে কোনও সরকার, তা সে সমাজবাদী পার্টির হোক, বিজেপির হোক, কংগ্রেসের হোক- কিছুটা হলেও কথা বলত, পরামর্শ করত। এখন কথাই শুনতে চায় না। কিছু বললেই গায়ে নিয়ে নেয়। আপনি ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বললে, তাকে ব্যক্তিগত ব্যাপার ধরে নেয়। যেন, আপনি জেনেবুঝে সরকারকে আক্রমণ করছেন।'
ব্রিজভূষণ বাহুবলী নেতা। যোগীর মতই ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের। কুস্তির আখড়া আছে। ১০ বছর জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি। এশীয় কুস্তি সংস্থার সহ-সভাপতি। বিজেপির টিকিটে পাঁচবার সাংসদ হয়েছেন। ২০০৯-এ সমাজবাদী পার্টির হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, তাতেও জিতেছেন। তাঁর ছেলে প্রতীকভূষণ গোন্ডা সদরের দু'বারের বিধায়ক। এমন নেতার কথা তাই বিজেপি উড়িয়েও দিতে পারছে না।
Read full story in English