/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/08/BJP-and-Congress.jpg)
বাম দিকে নিশিকান্ত দুবে, মধ্যে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ডান দিকে লোকসভায় আসীন রাহুল গান্ধী।
যেদিন রাহুল গান্ধী লোকসভায় সাংসদ হিসাবে ফিরলেন, সেদিনই বিজেপি নেতা নিশিকান্ত দুবে দেশ ভাগ করা, অরাজকতা সৃষ্টি করা, দেশবিরোধিতা এবং চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে আঙুল তুললেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। তাতে রীতিমতো অশান্ত হয়ে উঠল লোকসভা। হট্টগোলের মধ্যেই দুপুর ২টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। দুপুরে লোকসভার অধিবেশনের সময়, কংগ্রেস সাংসদরা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে লোকসভায় প্রবেশ করেন। কংগ্রেস সাংসদরা স্লোগান দিতে থাকেন, 'ভারত জোড়, ভারত জোড়'। সঙ্গে চলতে থাকে স্লোগান, 'রাহুল গান্ধী জিন্দাবাদ, রাহুল গান্ধী জিন্দাবাদ'। তারপরেই দুবে উঠে দাঁড়ান। তিনি অভিযোগ করেন যে নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন এবং কিছু মিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধ অনুযায়ী, 'টুকরে টুকরে গ্যাং'-এর সঙ্গে ভারত-বিরোধী শক্তি বা বহিরাগত শক্তির যোগ রয়েছে। দুবের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করতে কংগ্রেসকে অর্থ দিচ্ছে চিন। দুবের দাবি, নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরোধিতা করতেই কংগ্রেস নেতারা ২০১৬ সালে চিনের লোকজনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
এই প্রসঙ্গে দুবে বলেন, 'কংগ্রেস চিনা বাহিনী এবং কিছু মিডিয়ার মাধ্যমে ভারতকে বিভক্ত করতে চায়।' দুবে যখন এসব বলছিলেন, সেই সময় বিজেপি সাংসদরা তাঁর সমর্থনে নিজেদের ডেস্কে তাল ঠুকতে শুরু করেন। চিৎকার করে সমর্থন জানান। দুবে বলে চলেন, '২০০৫ থেকে ২০১৪-এর মধ্যে যখনই কোনও সংকট দেখা দিয়েছে, কংগ্রেস-চিন থেকে অর্থ পেয়েছে। ২০০৮ সালে চিনের নেতারা সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধী উভয়কেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে তাঁরা ডোকলাম সংকটের সময়ও চিনাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন।' এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং এবং রণদীপ সুরজেওয়ালার নামও নেন দুবে। তিনি দাবি করেন যে নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে কীভাবে মাওবাদী এবং প্রবীণ সাংবাদিকদের কংগ্রেস টাকা দিয়েছিল। এরপরই শুরু হয় তীব্র বাদানুবাদ। সেই সময় লোকসভার স্পিকারের চেয়ারে ছিলেন কিরীট সোলাঙ্কি। তিনি দিনের কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, উভয়পক্ষের তীব্র চিৎকার এবং বাদানুবাদে দুপুর ২টোয় অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়।
মুলতবি হওয়ার পরে, বিরোধী সাংসদদের মধ্যে যাঁরা সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুলের চারপাশে জড় হয়েছিল, তাঁদের প্রধান প্রশ্ন ছিল যে কীভাবে দুবের মাইক সর্বত্র চালু ছিল! পাশাপাশি, ক্ষোভ প্রকাশ করে কংগ্রেস সাংসদরা জানান, তাঁরা স্পিকারের সঙ্গে দেখা করবেন আর নিশিকান্ত দুবের বক্তব্য রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানাবেন। এই প্রসঙ্গে স্পিকারের কাছে লেখা এক চিঠিতে কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী দুবের অভিযোগগুলোকে, 'মানহানিকর' বলে অভিযোগ করেন। অধীর চৌধুরী দাবি করেছেন যে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের মন্তব্য রেকর্ড থেকে মুছে ফেলতে হবে। এই প্রসঙ্গে অধীর চৌধুরী বলেন, 'ভারপ্রাপ্ত চেয়ার (কিরীট সোলাঙ্কি) যখন টেবিলে কাগজপত্র রাখার জন্য মন্ত্রীদের নির্দেশ দিচ্ছিলেন, তখনও নিশিকান্ত দুবের মাইক্রোফোনটি চালু ছিল। যার সাহায্যে দুবে কংগ্রেস পার্টি এবং হাউসের সদস্য রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মানহানিকর অভিযোগ করতে পেরেছেন। কোনও নোটিস না-দিয়েই, স্পিকারের অনুমতি ছাড়াই তাঁর বক্তব্য লোকসভায় বলেছেন। যা, লোকসভার কার্যকলাপ পরিচালনা পদ্ধতির নিয়মের ৩৫৩ বিধি স্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে।'
আরও পড়ুন- মেলামেশা বাড়িয়েছেন জনতার সঙ্গে, বিদ্রোহের পর বদলে গিয়েছেন পুতিন?
এই প্রসঙ্গে অধীর চৌধুরী বলেন, 'এই কারণেই আমরা বিধি ৩৫০-এর অধীনে দাবি করছি যে, নিশিকান্ত দুবের মন্তব্য পুরোপুরি লোকসভার বিবরণী থেকে মুছে ফেলতে হবে। তিনি কীভাবে এই ধরনের অভিযোগ উত্থাপনের অনুমতি পেলেন, তা নিয়ে তদন্ত করতে হবে।' এদিকে, রাহুল গান্ধী সকালে অধিবেশন মুলতবি হওয়ার পরে দুপুরে আবার শুরু হওয়ার পর লোকসভায় ফিরে আসেন। প্রবেশের পর তিনি তাঁর আসন গ্রহণ করেন এবং কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করেন। গুজরাটের একটি আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করার পরে এবং মোদী উপাধি মানহানির মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পর এই বছর ২৩ মার্চ কংগ্রেস নেতাকে এমপি হিসাবে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর সাজা স্থগিত করায় সোমবার এমপি হিসেবে রাহুল গান্ধী তাঁর মর্যাদা পুনরুদ্ধার করেছেন।