নিঃশব্দ বিপ্লব। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের বিজেপি সাংসদ যোগ দিলেন তৃণমূলে। ভবানীপুরের উপনির্বাচনের আগে যা বড় ধাক্কা গেরুয়া শিবিরের কাছে। যা মানছেন এ রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বেও। প্রথমত বাংলায় ভোটে হার, দ্বিতীয়ত মুকুল রায় সহ মোট চার বিধায়কের বিজেপি ত্যাগ। এরপর মন্ত্রিত্ব হারিয়ে আসানসোলের সাংসদের দল ত্যাগ ও শেষ পর্যন্ত বাবুলের আচমকা চরম প্রতিপক্ষ তৃণমূলে যোগদান। কার্যত দিশেহারা এ রাজ্যের পদ্ম ব্রিগেড।
এই অবস্থায় বাবুল সুপ্রিয়র দলত্যাগকে 'প্রতিশোধ' হিসাবেই তুলে ঘরতে মরিয়া গেরুয়া বাহিনী। এপ্রসঙ্গে বঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "পরিষ্কার হয়ে গেল যে বাবুল সুপ্রিয়র মন্ত্রিত্বের লোভ ছিল, সে জন্যই বিজেপিতে এসেছিলেন। তারপর মন্ত্রী পদ চলে যেতেই ওনার আর রাজনীতি ভালো লাগছিল না। আসলে দলের প্রতি প্রতিশোধ নিলেন উনি।"
আরও পড়ুন- বড় ধাক্কা বিজেপির, তৃণমূলে যোগ দিলেন বাবুল সুপ্রিয়
ভোটের পর বিধায়ক, সাংসদদের বিজেপি ছাড়ার হিড়িক দলের কাছে 'বড় ফেস লস' বলে মেনে নিচ্ছেন রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র। তাঁর কথায়, "এটায় দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি হবে। কিন্তু মানুষ এই আয়ারাম গয়ারামের রাজনীতি পছন্দ করেন না। ২০২৪ সালে আসানসোল থেকে জিতবেন বিজেপি প্রার্থীই।"
রাজ্য বিজেপি সভাপতি এ নিয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি। জানিয়েছেন, বাবুল সুপ্রিয় দলত্যাগ প্রসঙ্গে যা বলার দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলবেন।
কিন্তু বাবুল সুপ্রিয়র দল বদল প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন রাজ্যের বিরোধী গলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, "বাবুলজি আমার ভালো বন্ধু। তবে দক্ষ সংগঠক নয়। টালিগঞ্জে ভোটের লড়াইতে তৃতীয় হয়েছেন। কাউন্টিং হল ছেড়ে আগেই চলে গিয়েছিলেন। এতে সংগঠন বা বিজেপির জনপ্রিয়তায় কোনও প্রভাব পড়বে না। আরও ভালো লাগত যদি নিয়ম মেনে সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দলত্যাগ করতেন।"
সাসংদ অর্জুন সিংয়ের কথায়, "বাবুল সুপ্রিয়র বোঝা উচিত ছিল যে বাংলার পৌনে তিন কোটি মানুষ বিজেপি ভোট দিয়েছে। উনি বিজেপির টিকিটে ২ বার জিতেছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। এবার গেলেন তৃণমূলে। এটা বেইমানি। মন্ত্রিত্বই যে ওনার একমাত্র লোভ- তা স্পষ্ট করে দিলেন উনি।"
আরও পড়ুন- অর্পিতার জায়গায় কি রাজ্যসভায় বাবুল সুপ্রিয়? তৃণমূলের কৌশল নিয়ে তুঙ্গে জল্পনা
রাজ্য বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেছেন, "তৃণমূল সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দল ফের প্রমাণ হল। যে ব্যক্তি বলেছিলেন যে তৃণমূলে যাবেন না, তাঁকেই আবার দলে নিলেন। খালি প্রলোভন দেখিয়ে লোক বাড়ানোই ওই দলের নীতি।"
তবে, স্বল্প সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও'ব্রায়েনের পাশে বসে বাবুল সুপ্রিয় স্পষ্ট জানান যে, আসানসোলের সাংসদ পদ থেকে তিনি ইস্তফা দেবেন। বলেন, 'বাংলার জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, এত ভালো সুযোগ পেয়েছি যে হাতছাড়া করতে চাইনি। তাই তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।' আগামী সোমবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করবেন বাবুল।
সংগঠনে কাজ করার আগ্রহের কথা বলে গত বুধবারই রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করেন অর্পিতা ঘোষ। ফলে তাঁর ছেড়ে দেওয়া আসনটি এখন ফাঁকাই রয়েছে। রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা সেই আসনে তৃণমূলের হয়ে রাজ্যসভায় যেতে পারেন বাবুল সুপ্রিয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন